রাজস্ব ও লাইসেন্স নবায়ন ফি দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া রাখায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিটিআরসি
আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে
দীর্ঘদিন ধরে সরকারের রাজস্ব ও লাইসেন্স নবায়ন মাশুল বকেয়া রাখা আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এদের বেশ কয়েকটির সঙ্গে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা বা তাঁদের পরিবার যুক্ত রয়েছেন।
বিটিআরসি সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও চার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর চার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আইজিডব্লিউর নীতিমালা অনুসারে প্রতি মিনিট আন্তর্জাতিক টেলিফোন কল দেশে আনার সঙ্গে তিন সেন্ট করে দেশে আসে। এই তিন সেন্টের ৫১ দশমিক ৭৫ শতাংশ রাজস্ব ভাগাভাগির চুক্তি অনুযায়ী সরকারকে দিতে হয়। এ ছাড়া আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধন নবায়ন বাবদ প্রতিবছর সাড়ে সাত কোটি টাকা দিতে হয়।
বিটিআরসি সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব বকেয়া থাকায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে টেলেক্স লিমিটেড এবং ভিশনটেল লিমিটেডের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ভিশনটেলের কাছে রাজস্ব ও লাইসেন্স নবায়ন বাবদ বিটিআরসির পাওনা ১৪৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। টেলেক্সের কাছে ৮৭ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী সামসুল হক টুকুর বড় ছেলে এস এম সামস এই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ছিলেন। তবে এখন কাগজে-কলমে তাঁর নাম না থাকলেও তাঁর হাতেই এই প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ বলে জানা গেছে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি বৈঠকে বিটিআরসি আরও চার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে রাতুল টেলিকম, কে টেলিকমিউনিকেশনস, বেস্টটেক টেলিকম এবং অ্যাপল টেলিকম।
রাতুল টেলিকমের মালিক হিসেবে আছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের পরিবার। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক তাঁর স্ত্রী সৈয়দা আঞ্জুমান বানু ও অংশীদার তাঁর মেয়ে সৈয়দা আমরিন রাখি। এই প্রতিষ্ঠানের কাছে বিটিআরসির ৯৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে।
কে টেলিকমিউনিকেশনসের কাছে বিটিআরসির পাওনা ৯৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণে আছেন নারায়ণগঞ্জের সাংসদ শামীম ওসমানের পরিবার। শুরুতে তাঁর স্ত্রী সালমা ওসমান ও ছেলে অয়ন ওসমান, শ্যালক তানভির আহমেদ প্রতিষ্ঠানটির অংশীদার ছিলেন। বর্তমানে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু জয়নাল আবেদীন মোল্লা এর অংশিদার। তবে নেপথ্যে শামীম ওসমান এই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন।
এ ছাড়া বেস্টটেক টেলিকমের কাছে ১২০ কোটি টাকা ও অ্যাপল নেটওয়ার্কস লিমিটেডের কাছে ৫০ কোটি টাকার বেশি পাওনা রয়েছে।
এর বাইরে যে চারটি আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠানের কল বন্ধ করা হয়েছে সেগুলো হলো সেল টেলিকম, এস এম টেলিকম, ফাস্ট টেলিকম ও মস ফাইভ টেলিকম। এই চার প্রতিষ্ঠানের কাছে ১০০ কোটির বেশি টাকা পাওনা রয়েছে।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকের ছেলে জিয়াউল হক মস ফাইভের পরিচালক ও মন্ত্রীর স্ত্রী ইলা হক প্রতিষ্ঠানের অংশীদার। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়া উদ্দিন বাবলু ফাস্ট কমিউনিকেশনসের মালিক।
জানতে চাইলে বিটিআরসির লিগ্যাল ও লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবদুস সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বকেয়া আদায়ের জন্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। কয়েকটির বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্রমান্বয়ে মামলাগুলো করা হবে বলে তিনি জানান।