আকাশে উড়ছে পাটপণ্য, খাবি খাচ্ছে পোশাক

অর্থবছরের প্রথমার্ধে পোশাক ছাড়াও চামড়া, হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের মতো প্রধান খাতের রপ্তানি আয় কমেছে।

লোকসানের চাপে সরকারি পাটকল বন্ধ হলেও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে পাট খাত। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথমার্ধে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে সাড়ে ৩০ শতাংশ। যদিও করোনার ধাক্কায় তৈরি পোশাক, চামড়া ও হিমায়িত খাদ্যের মতো প্রধান রপ্তানি খাতগুলো খাবি খাচ্ছে। এসব খাতের অধিকাংশের রপ্তানি আয় কমেছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ১ হাজার ৯২৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৩৬ শতাংশ কম। এ ছাড়া অর্থবছরের প্রথমার্ধে যে আয় হয়েছে, সেটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে।

অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৬৬ কোটি ৮১ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্যে ৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের কাঁচা পাট, ৪৪ কোটি ৯২ লাখ ডলারের পাটের সুতা, ৯ কোটি ১৮ লাখ ডলারের চট ও বস্তা রয়েছে। পাটের সুতায় ৪২ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং চট ও বস্তা রপ্তানিতে ৫৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আর কাঁচা পাটের রপ্তানি কমেছে ৪ শতাংশ।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাঁচা পাটের দাম বেশি হওয়ায় পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তাই পাটজাত পণ্যের রপ্তানিতে বড় লাফ দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে ক্রয়াদেশ পরিস্থিতি খারাপ না হলেও নিম্নমুখী প্রবণতা রয়েছে। সে কারণে অর্থবছরের শুরুতে ৫০ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি থাকলেও এখন কম।’ তিনি বলেন, ‘কাঁচা পাটের মণ ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকায় পৌঁছে গেছে। আমাদের আশঙ্কা, মার্চ-এপ্রিলে কাঁচা পাট পাওয়া যাবে না। তখন রপ্তানিতে ধস নামবে।’

সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮০ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ১ হাজার ৫৫৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ কম। অর্থবছরের প্রথমার্ধে নিট পোশাকের রপ্তানি ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও ওভেনে কমেছে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ।

করোনা শুরুর পর থেকেই ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ায় পোশাক রপ্তানি কমতে থাকে। মাঝে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও পরে আবার ধস নামে। বর্তমানে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ক্রয়াদেশ আসার গতি শ্লথ বলে দাবি করেছেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর পরিচালক ফজলে শামীম এহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্রয়াদেশ কিছু এলে সেটি আশানুরূপ নয়। ইউরোপ-আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতি কোথায় যায়, তা এখনো বলা যায় না। তাই ক্রেতারা সাবধানতা অবলম্বন করছেন। আগের চেয়ে ক্রয়াদেশের সংখ্যা ও পরিমাণ কমেছে। তবে আশা করছি, মার্চ-এপ্রিলে ক্রয়াদেশ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কারণ, তত দিনে করোনার টিকা অনেকে পাবেন। শীতও চলে যাবে।’

এদিকে চামড়া খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ৪৪ কোটি ৬১ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ কম। অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৫ কোটি ৪৬ লাখ ডলারের চামড়া, ১১ কোটি ২৭ লাখ ডলারের চামড়াপণ্য ও ২৭ কোটি ডলারের চামড়ার জুতা রপ্তানি হয়েছে। জুতা রপ্তানি ২ শতাংশ কমলেও চামড়া ও চামড়াপণ্যে কমেছে যথাক্রমে ১৭ ও সাড়ে ১০ শতাংশ।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, অর্থবছরের প্রথমার্ধে ২৮ কোটি ডলারের হিমায়িত খাদ্য, ৫২ কোটি ডলারের কৃষিজাত পণ্য, ৫৪ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল, ২৬ কোটি ডলারের প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ৫৭ শতাংশ।