করোনাকালের ঈদ
ঈদে বিলাসিতা পরিহার করা উচিত
করোনাকাল বদলে দিয়েছে অনেক কিছু। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা গেছে থমকে। উৎসবের আনন্দও ম্লান হয়ে গেছে করোনার থাবায়। তবু ঈদ আসে, আসে উৎসব। অনেকে বড়বেলায় ঈদের আনন্দ খোঁজেন ফেলে আসা ছোটবেলার ঈদে। এক বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে মন্দা। তাই শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তা ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা করোনা সংকটের মধ্যে তৃতীয় ঈদ উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে কয়েক দিন পর। দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ, প্রধান নির্বাহী ও ব্যাংকারদের ঈদের একাল-সেকাল নিয়ে এবারের মূল আয়োজন।
গত বছরের মার্চ মাসে হঠাৎ করে করোনা এসেছিল। কোনো প্রস্তুতি ছিল না আমাদের। লকডাউন দিয়ে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পুরো রোজার মাস শপিং মলসহ সবকিছু বন্ধ ছিল। তাই গতবার ঈদের কোনো আমেজই ছিল না। এবার পুরোপুরি না হলেও ঈদের আমেজ কিছুটা ফিরে এসেছে। ঈদ উপলক্ষে গতবার আমি একটি উপহারও পাইনি। এবার ইতিমধ্যে কয়েকটি উপহার পেয়েছি। ভালো লাগছে ঈদ ফিরে এসেছে। এবার শপিং মল সীমিত পরিসরে খোলা থাকায় ঈদের আমেজ কিছুটা বোঝা যাচ্ছে।
ঈদ উপলক্ষে এবার গতানুগতিক পরিকল্পনায় যাব না। নতুন পরিকল্পনা করেছি। এবার কাউকে নতুন জামা উপহার দেব না। জামাকাপড়ের বদলে নগদ টাকা দেব। যাকে টাকা দেব, সে যেন নিজের মতো খরচ করতে পারে।
এবারের ঈদে আমার প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীর ডিউটি শিথিল করা হয়েছে। সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে বলেছে, এবার ঈদের সময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। তিন দিনের বেশি ছুটি দেওয়া যাবে না। আমরা সরকারের এই নির্দেশনা পুরোপুরি মানতে যাচ্ছি। কর্মস্থলে থাকতে উৎসাহ দিতে কর্মীদের প্রতীকী প্রণোদনা দিচ্ছি। পরিবার–পরিজন ছাড়া ঈদ কাটাতে তাদের যেন মন খারাপ না হয়।
করোনার কারণে এক বছর ধরেই ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো যাচ্ছে না। গত নববর্ষে কোনো ব্যবসা হয়নি। উৎসব সামনে রেখে ভারত থেকে নানা ধরনের বাহারি কাপড়চোপড় আমদানি হয়।
বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষের আয় কমেছে। অনেকের চাকরি নেই। তাঁরা তো ঈদে কেনাকাটা করতে পারছে না। তারা মনঃকষ্টে আছেন। সামর্থ্য না থাকায় অনেকে নিজেদের জন্য কেনাকাটা না করে শুধু সন্তানের জন্য জামাকাপড় কিনছেন। আমি মনে করি, এমন বিপাকে পড়ে যাওয়া মানুষদের জামাকাপড় বা উপহারসামগ্রী না দিয়ে টাকা দেওয়া উচিত।
এবার তা হয়নি বললেই চলে। তবে এবারের ঈদ উপলক্ষে ব্যবসা কিছুটা ফিরে এসেছে। করোনার কারণে জনসমাগমে নিরুৎসাহিত করায় সামর্থ্যবানেরা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও খরচ করতে পারছে না।
এবার করোনায় নিম্নমধ্যবিত্তরা সবচেয়ে বেশি দুর্বল হয়েছে। বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষের আয় কমেছে। অনেকের চাকরি নেই। তাঁরা তো ঈদে কেনাকাটা করতে পারছে না। তারা মনঃকষ্টে আছেন। সামর্থ্য না থাকায় অনেকে নিজেদের জন্য কেনাকাটা না করে শুধু সন্তানের জন্য জামাকাপড় কিনছেন। আমি মনে করি, এমন বিপাকে পড়ে যাওয়া মানুষদের জামাকাপড় বা উপহারসামগ্রী না দিয়ে টাকা দেওয়া উচিত। নগদ টাকায় তাঁরা সন্তানের জন্য জামা কিনতে পারবেন।
এই করোনার সময় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তিপর্যায়ে নিজেদের টিকিয়ে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। এই ঈদে বিলাসিতা পরিহার করে প্রয়োজনীয় খরচ করা উচিত। খরচে আরও সাশ্রয়ী থাকতে হবে। কারণ, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। তৃতীয় ঢেউ এলে আর বাঁচব না।