ঈদে সরগরম নরসিংদীর বাবুরহাট

বাবুরহাটে একটি পাইকারি দোকানে বেচাকেনা  প্রথম আলো
বাবুরহাটে একটি পাইকারি দোকানে বেচাকেনা প্রথম আলো

সড়কের ওপর দাঁড়ানো সারি সারি ট্রাকে কাপড়ের বিশাল আকারের গাঁট ওঠানো-নামানো হচ্ছে। অলিগলিতে হাজারো 
ক্রেতার ভিড়। বেশির ভাগ দোকানের সামনেই ভ্যানের দীর্ঘ সারি। তাতে কাপড় উঠছে, তারপর গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। আর
বিক্রেতাদের দম ফেলার ফুরসত নেই।
ঈদ সামনে রেখে দেশের পাইকারি কাপড়ের অন্যতম প্রধান বাজার নরসিংদীর বাবুরহাটে এমন জমজমাট চিত্র এখন
প্রতিদিনের। সাধারণত শুক্র, শনি ও রোববার হাট বসলেও ঈদের বেচাকেনার জন্য এখন সপ্তাহের সাত দিনই হাট বসছে।
বাবুরহাটে হাজার দশেক ছোট-বড় পাইকারি দোকান আছে। আর এসব দোকানে শাড়ি-লুঙ্গি থেকে শুরু করে থ্রিপিস,
থানকাপড়, পর্দা, সোফার কাপড়সহ এমন কোনো কাপড় নেই, যা পাওয়া যায় না। দেশের বিভিন্ন জেলার উৎপাদিত কাপড়
ছাড়াও আমদানি করা বিদেশি কাপড় পাইকারি বিক্রি হয় এখানে। এই হাট ঘিরেই নরসিংদীসহ নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে
গড়ে উঠেছে অনেক তাঁতকল। একইভাবে আছে কয়েক শতাধিক সহায়ক শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
ব্যবসায়ীরা জানালেন, সাধারণত প্রতি সপ্তাহের হাটে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। আর ঈদের
মৌসুমে তা বেড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়।
ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে নরসিংদী সদর উপজেলায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে বাবুরহাট। সম্প্রতি বাবুরহাটে
গিয়ে পড়তে হয় দীর্ঘ যানজটে। হাটে কাপড় কিনতে আসা হাজার হাজার ক্রেতা ও পণ্য পরিবহনে শত শত ট্রাকের
আসা-যাওয়ার কারণেই এই যানজট। তাই বাসস্ট্যান্ডের অনেকটা পথ আগেই বাস থেকে নামতে হলো।
বাবুরহাটে কাপড় কিনতে এসেছেন ময়মনসিংহের ফুলপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার অনাবিল বস্ত্রালয়ের নজরুল ইসলাম।
আর-টেক্স শাড়ি ঘরের ভেতর কথা হলো তাঁর সঙ্গে। তিনি বললেন, এক হাটে সব ধরনের কাপড় পাওয়া যায়, তাই
ব্যবসায়ীদের কাছে বাবুরহাট জনপ্রিয়। তা ছাড়া যোগাযোগব্যবস্থা ভালো।
হাটের ভেতর এক চক্কর দিতেই পাকিজা ফেব্রিক্স কালেকশনের বিক্রয়কেন্দ্রের ভেতরে চোখে পড়ে বিরাট জটলা। দেশের
বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকারেরা তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী কাপড় কিনছেন। নিজেদের মিলে কাপড় তৈরি করে
পাকিজা। এবার সাকিরা আট, লাভ আট, রিতিকা আট, রিটিনা আট, ভিমাদ, ফ্রেশ আট, দিবা আট, নবরূপা ও রুমা
থ্রিপিস নিয়ে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি।
কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ঈদের বাজারে নরসিংদীর টেক্সটাইলে উৎপাদিত প্রিন্টের কাপড়ের
চাহিদা বেশি। পাশাপাশি টাঙ্গাইল, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের কাপড়ও ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে বিগত বছরগুলোর
তুলনায় এবার লাভ কিছুটা কমে গেছে। কারণ হিসেবে তাঁরা ডাইংয়ের কেমিক্যালসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়ে উ
ৎপাদন খরচ বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করেছেন।
বাবুরহাট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাবুরহাট মানে থানকাপড়ের ভাঁজে
ভাঁজে রঙের গন্ধ। বেশি ক্রেতা, বেশি বিক্রি। স্থানীয় তাঁতকল থেকে তৈরি হয়ে কাপড় আসছে আর বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে
আর কোনো দৃশ্য নেই।
মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, সরকারের কাছ থেকে প্রতিবছর ২৫-৩০ লাখ টাকায় হাটটি ইজারা নেওয়া হয়। তবে
কোনো ক্রেতা বা বিক্রেতার কাছ থেকে কোনো রকম টোল আদায় করা হয় না। যা বাংলাদেশে পাইকারি হাটে বিরল ঘটনা।
আর এ জন্যই বাবুরহাট ব্যবসায়ীদের জন্য পছন্দের জায়গায় পরিণত হয়েছে।