ওয়াহিদের খামারে এখন ২৫ লাখ টাকার গাড়ল

গাড়ল ভেড়ার একটি উন্নত জাত। এই প্রজাতির ভেড়া আকারে বড় হয়। ওজনও বাড়ে দ্রুত।

গাড়লের পরিচর্যা করছেন ওয়াহিদ খান। সম্প্রতি খুলনার সিটি বাইপাস এলাকায়
সাদ্দাম হোসেন

ইচ্ছে ছিল ছাগলের খামার করবেন। বছর দুয়েক আগে কিনেছিলেন ভারতের তোতাপুরি আর হরিয়ানা জাতের কয়েকটি ছাগল। সঙ্গে একটি গাড়লের বাচ্চাও নিয়ে আসেন। সেই একটি বাচ্চা থেকে এখন খামারে রয়েছে ১৫০টি গাড়ল। ছাগলের বদলে তিনি হয়েছেন গাড়লের খামারি।

এই কৃষি উদ্যোক্তার নাম ওয়াহিদ খান (৫৮)। বাড়ি খুলনার খালিশপুরে। তিনি জানান, চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবসার দায়িত্ব ছেলেকে দিয়ে তিনি এখন পুরোদস্তুর খামারি। তাঁর খামারের নাম ‘মেসার্স খান অ্যাগ্রো’। এখন খামারে যে সংখ্যক গাড়ল আছে, তার দাম প্রায় ২৫ লাখ টাকা। তিনি ৬ লাখ টাকার গাড়ল বিক্রিও করেছেন।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, গাড়ল ভেড়ার একটি উন্নত জাত। এই ভেড়া আকারে বড় হয়। ওজনও বাড়ে দ্রুত। এর মাংস সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও চর্বি কম। খুলনায় আরও কিছু গাড়লের খামার গড়ে উঠেছে।

খামারিরা জানান, ছয় মাস বয়সী একটি গাড়লের দাম কমপক্ষে সাত হাজার টাকা। এক বছর বয়সী একটি গাড়লের ২৫ কেজি পর্যন্ত মাংস হতে পারে। মাংস এখনো বাজারে সেভাবে বিক্রি হয় না। তবে স্থানীয়ভাবে এই মাংস পাওয়া যায়। প্রতি কেজির দাম ৭০০ টাকার আশপাশে। খুলনায় যেসব গাড়লের খামার গড়ে উঠেছে, তা থেকে কিনে নেন মূলত নতুন খামারিরা।

খালিশপুরে ওয়াহিদ খানের খামারে গিয়ে সম্প্রতি দেখা যায়, টিনের ছাউনির ঘরটি মাটি থেকে উঁচু করে কাঠের পাটাতন দিয়ে তৈরি করা। তবে গাড়লের পাল সেখানে নেই।

ওয়াহিদ জানান, গাড়ল শুধু রাতে খামারে থাকে। সারা দিন ঘুরে ঘুরে ঘাস খায়। শুধু কিছু দানাদার খাবার দিলেই হয়।

খামারি কীভাবে হলেন, সে কথাও জানালেন ওয়াহিদ। তিনি বলেন, কৃষিকাজ তাঁর ভালো লাগে। সে জন্য বছর দুয়েক আগে ছাগলের খামার করার উদ্যোগ নেন। নিচু জমি ভরাট করে খামারের ঘর করেন। শুরুতে ছাগলের খামার করার চেষ্টা করেছিলেন।

পরে দেখলেন গাড়ল পালন করাই লাভজনক। গাড়ল পালন কেন লাভজনক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছাগল পালন করতে গিয়ে দেখলাম রোগব্যাধি হয়। খাবারের খরচও যথেষ্ট। গাড়লের রোগ কম। খাবার ব্যয় কম। বছরে চারবার কৃমিনাশক বড়ি আর দুবার টিকা (পিপিআর) দিলে খামার রোগমুক্ত থাকে। মোটকথা রাখালের বেতন ছাড়া তেমন কোনো খরচ নেই।

খামার বড় করতে ওয়াহিদ আরও দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। খামারের ঘর ও অন্যান্য অবকাঠামো তৈরি করেছেন। তিনি জানান, ৫০০ গাড়ল পালন করতে চান তিনি।

ওয়াহিদের ভাষ্যমতে, প্রায় সাত মাস পরপর বাচ্চা দেয় মা গাড়ল। বেশির ভাগ সময় একসঙ্গে দুটি বাচ্চা দেয়। কোনো কোনো সময় বাচ্চা দেয় একটি। বাচ্চা দেওয়ার পর এক মাসের মধ্যে গাড়ল আবারও গর্ভধারণ করে। তবে বাচ্চা প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ খায়।

ওয়াহিদ জানান, ইউটিউব চ্যানেলে তাঁর খামারের ভিডিও দেখে আগ্রহীরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ গাড়ল পালন নিয়ে পরামর্শ নেন। কেউ কেউ গাড়ল কিনতে চান। এই খামারি আরও জানান, বছরে দুবার গাড়লের পশম কেটে পুড়িয়ে ফেলা হয়। পশম যদি কাজে লাগানো যেত, বিপণনের ব্যবস্থা থাকত, তবে খামারিদের লাভ বেশি হতো।

খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অরুণ কান্তি মণ্ডল বলেন, দেশে ভেড়ার পশমের তেমন কোনো বাণিজ্যিক ব্যবহার না থাকায় সেখান থেকে খামারিদের আয় হয় না। এটা রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।