চাকরি ছেড়ে চকলেট ব্যবসায়

ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কে চকলেট অ্যান্ড পেস্টি নামে নিজের দোকানে চকলেট হাতে উদ্যোক্তা কামরুন নাহার।

কয়েকজন অংশীদারের সঙ্গে যমুনা ফিউচার পার্কে একটি চকলেটের দোকান ছিল মিরপুরের কামরুন নাহারের স্বামী জহুরুল ইসলামের। কামরুন নাহার সে সময় বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থায় বেশ ভালো বেতনের চাকরি করতেন। অন্য অংশীদারদের সঙ্গে মিলেমিশে তাঁর স্বামী দোকানটা দেখাশোনা করতেন। ব্যবসার সার্বিক দায়দায়িত্বও তিনি পালন করতেন। কিন্তু একসময় এসে ব্যবসার অংশীদারেরা ব্যবসা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন। ফলে পুরো দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। ওই সময় কামরুন নাহার ঠিক করলেন তিনি নিজেই সাহস করে দোকানটার দায়িত্ব নেবেন। আর নিলেনও। এভাবেই ‘চকলেট অ্যান্ড পেস্টি’ নতুন নাম দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এখন ব্যবসার সার্বিক পরিচালনা ও দেখাশোনা তিনিই করেন। চাকরি ছেড়ে নিজের হাতে চকলেটের ব্যবসা তুলে নেওয়ার গল্পটা এভাবেই জানালেন কামরুন নাহার।

ঝুমুর বলছিলেন, ‘আগে শুধু দোকানে থেকে চকলেট বিক্রি হতো। এখন আমি ফেসবুক পেজেও চকলেট বিক্রি করছি। বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অনুষ্ঠান, বনভোজন, জন্মদিনের অনুষ্ঠান কিংবা উপহার পাঠাতে অনেকেই আমার কাছ থেকে চকলেট নিচ্ছেন। ক্রেতাদের কাছে সাড়াও পাচ্ছি বেশ ভালো।’ তা ছাড়া ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী কয়েক ধরনের চকলেট দিয়ে ছোট বা বড় যে যে রকম চান সে রকম করে ঝুড়িতে সাজিয়ে বিক্রি করার ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ করে করপোরেট অফিসগুলো থেকে এ ধরনের চাহিদা বেশি পাওয়া যায়। তবে জন্মদিন বা বার্ষিকী উপলক্ষে ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে এ রকম সাজানো–গোছানো চকলেটের ঝুড়ির অর্ডার দিয়ে থাকেন। কামরুন নাহার ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ২৭ লাখ টাকা। মাসে দোকান ও অনলাইন মিলিয়ে সাড়ে তিন থেকে ৫ লাখ টাকার চকলেট বিক্রি হয়। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ঈদ, পূজা ও বড়দিনের সময়।

কামরুন নাহারের দোকানে বিভিন্ন দেশের মধ্যে আছে বেলজিয়ামের গালিয়ান চকলেট, সুইস চকলেট লিনড। এ ছাড়া লিনডোর, এলিট, রিসেস, কোয়ালিটি স্ট্রিট, হিরোস, সেলিব্রেশন, ডেইরি মিল্ক, কিটক্যাট, আমুল ইত্যাদি ব্র্যান্ডের চকলেটও মিলবে তাঁর কাছে।

কামরুন নাহার জানালেন, তাঁরা নিজেরা সরাসরি বিদেশ থেকে কোনো চকলেট আমদানি করেন না। তবে যাঁরা আমদানি করেন, তাঁরাই তাঁর কাছে চকলেট সরবরাহ করেন। প্রধানত থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও দুবাই থেকে আমদানিকারকদের কাছ থেকেই তিনি চকলেট নিয়ে থাকেন।

চকলেটের ব্যবসার পাশাপাশি কয়েকজন মিলে চকলেট তৈরির একটা কারখানা গড়ে তুলেছেন কামরুন নাহার। সেটির শুরুর গল্পও শুনিয়েছেন তিনি। কামরুন নাহার বলেন, ‘আমাদের দেশে উন্নত মানের চকলেট তৈরির কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ফলে আমাদের পুরোপুরি আমদানির ওপরই নির্ভর করতে হতো। তাই আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানো ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন চকলেট উৎপাদনের সঙ্গে আমি যুক্ত হয়েছি। আমরা কয়েকজন চকলেট ব্যবসায়ী মিলে ‘কোকো ল্যাব’ নামে চকলেট তৈরির একটা কারখানা গড়ে তুলেছি। ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ইছাপুরে আমাদের এ কারখানাটি গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে এখন আন্তর্জাতিক মানের চকলেট উৎপাদিত হচ্ছে। আমদানি করা চকলেটের পাশাপাশি আমরা কোকো ল্যাবে উৎপাদিত চকলেটও বিক্রি করছি।

কামরুন নাহারের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকার মিরপুরে। সেখানেই কেটেছে ছেলেবেলা। মিরপুরের মিরপুর বাংলা উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরে সিটি কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনায় স্নাতক শেষ করেন। পরে উন্নয়ন অধ্যয়ন নিয়ে মাস্টার্স শেষে করেন বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। লেখালেখিতে একসময় আগ্রহ গড়ে ওঠে তাঁর। অধুনা বিলুপ্ত আজকের কাগজে ফিচারবিষয়ক বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। তাঁর লেখা নানা বিষয়ের ফিচার আজকের কাগজ ছাড়াও দৈনিক যুগান্তর ও মাসিক চারবেলা চারদিক পত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হতো।

চকলেট ব্যবসা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী—জানতে চাইলে কামরুন নাহার বলেন, ‘যমুনা ফিউচার পার্কে দোকান বা ব্যবসা পরিচালনায় অনেক খরচ। দক্ষ কর্মী পাওয়া অনেক সময় মুশকিল হয়ে পড়ে ঠিকই। তবে এই সব সমস্যা মোকাবিলা করেই আমরা আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছি। আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে আন্তর্জাতিক মানের চকলেট উৎপাদন ও বাজারজাত করা। যেহেতু আমাদের দেশের অধিকাংশ চকলেটই দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়, তাই দাম অনেক বেশি। ফলে অনেক সময় তা সাধারণ ক্রেতাদের কেনার নাগালের বাইরে চলে যায়। আবার আমরা যে উৎপাদন করি, তার কাঁচামালও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তাই দেশে উৎপাদিত চকলেটের দামও বেশি পড়ে। আমরা ধীরে ধীরে এ দাম কমিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের নাগালে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।’