নতুন বছরেও দেশীয় ট্যুরের ওপর নির্ভর করতে হবে

করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাত ছিল পর্যটন বাণিজ্য। ২০২০ সালে এ খাতের ব্যবসা বলতে গেলে শূন্যের কোঠায় নেমে গিয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে ’২১ সালে। নতুন বছরে কি পর্যটন ব্যবসা পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? আবার ভালো একটি বছর কাটানোর পর শেয়ারবাজার কি এ বছর নতুন উচ্চতায় উঠবে, নাকি হতাশ হতে হবে বিনিয়োগকারীদের? ’২১ সালে রেকর্ড মুনাফা করা ব্যাংক খাত ’২২ সালে কি আরও বেশি ব্যবসা করবে? আবার উদ্যোক্তাদের পরিকল্পনাই–বা কী? কথা বলেছেন মাকসুদা আজীজ

সাবিরা মেহরিন

২০২০ সালে পর্যটন খাত বলতে গেলে বন্ধই ছিল। শেষের এক–দুই মাস সময় পাওয়া গেছে। যতটুকু সময় পাওয়া গিয়েছিল তাতে খুব একটা ব্যবসা হয়নি। ভেবেছিলাম ২০২১ সালে প্রতিষেধক এলে পর্যটন ব্যবসা কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু এ বছর আবার দেশে দেশে বিধিনিষেধ দেওয়ায় খুব বেশি এগোতে পারিনি।

২০২০ সালে যখন দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়, তখন আমাদের তেমন কোনো প্রস্তুতি ছিল না। ২০২১ আমরা অনেকটাই প্রস্তুত ছিলাম। ফলে যখন আমরা ট্যুর আয়োজন করতে পারিনি, তারপরও তথ্য দিয়ে গ্রাহকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধরে রেখেছি। বিশেষ করে এ বছর করোনা সংক্রমণের ঢেউ ওঠানামার মধ্যে দেশের ও বিদেশের বিভিন্ন যাত্রার ভিসার নিয়মাবলি, সঙ্গনিরোধের প্রয়োজনীয়তা, উড়োজাহাজের সময়সূচিসংক্রান্ত তথ্যের চাহিদা ছিল। এসব তথ্য প্রদান করে আমরা অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব থাকায় অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের ব্র্যান্ড আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন চালিয়েছে। এখান থেকেও কিছু আয় হয়েছে। তা ছাড়া বিদেশে ট্যুর আয়োজন করা বন্ধ থাকলেও দেশের মধ্যে ট্যুর আয়োজন করা গেছে, যা আমরা আগে করতাম না। তাতে সদ্যবিদায়ী বছরে যা ব্যবসা হয়েছে তা ২০১৯ সালের আয়ের প্রায় অর্ধেক। অথচ ২০২০ সালে তেমন কোনো আয়ই ছিল না।

২০১৯ সালে করোনা আসার আগে আমরা এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ১০টা ট্যুর আয়োজন করেছিলাম। ২০২১ সালে মাত্র ২টি ট্যুর আয়োজন করতে পেরেছি। ২০২২ সালে বিদেশ ট্যুর খুব একটা বাড়বে বলে মনে হয় না। কারণ, অমিক্রনের কারণে এখনো অনেক দেশের পর্যটন বন্ধ আছে। আবার সঙ্গনিরোধ নীতিও সব দেশে এক নয়, আমাদের দেশের সব মানুষ প্রতিষেধক পাননি—এসব বিবেচনায় ধরে নিচ্ছি ২০২২ সালেও আমাদের অনেকটাই দেশের ট্যুরের ওপরই নির্ভর করতে হবে।

দেশের ভেতরে ট্যুর আয়োজনের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করছি, করোনার পরে যাতায়াত ও আবাসন দুই ক্ষেত্রেই খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এ কারণে পর্যটকেরা কম আগ্রহী হচ্ছেন। ওয়ান্ডার ওমেন থেকে আমরা মূলত নারীদের জন্য ট্যুর আয়োজন করি। দেশের পর্যটনক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তার অভাব নিশ্চিতভাবে আমাদের ব্যবসাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।

সরকারের কাছে আমাদের বিশেষ কিছু চাওয়ার নেই। আমরা আর্থিক সাহায্য চাই না, অবকাঠামোগত সাহায্যও চাই না। আমরা শুধু চাই পর্যটন খাতে অস্বাভাবিক মুনাফার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা হোক এবং পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে নজর দেওয়া হোক। আমরাই বরং পর্যটন থেকে সরকারের আয়ের পথ সুগম করব।

সাবিরা মেহরিন, প্রতিষ্ঠাতা, ওয়ান্ডার ওমেন