মোবাইল গেমসে বিনিয়োগ, আসছে ‘হাউজ্যাট’ অ্যাপ

‘হাউজ্যাট: মুশি দ্য ডিপেন্ডেবল’ নামে দেশের নতুন মোবাইল গেমস অ্যাপের জন্য প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগ হচ্ছে ৬০ লাখ টাকা।

স্টেডিয়ামভর্তি হাজার হাজার দর্শক। ব্যাটিং করতে নামলেন বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। অথচ তাঁর হয়ে চার ছক্কা হাঁকাচ্ছেন আপনি। সেটি আবার খেলছেন নিজের মোবাইলে।

‘হাউজ্যাট: মুশি দ্য ডিপেন্ডেবল’ নামে এমনই এক মোবাইল গেমিং অ্যাপ নিয়ে আসছে কেপিসি এন্টারপ্রাইজ ও টারটল সলিউশনস। প্রতিষ্ঠান দুটির যৌথ উদ্যোগে শুরু হচ্ছে নতুন এই স্টার্টআপ। এর সঙ্গে অংশীদার হিসেবে আগামী দুই বছরের জন্য যুক্ত হয়েছেন স্বয়ং ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। তিনি এই মোবাইল গেমসটির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর তথা পণ্যদূত হিসেবেও কাজ করবেন।

আগামী শুক্রবার মোবাইল গেমসটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। তবে ১২ অক্টোবর থেকে গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপটি মোবাইল ফোনে ডাউনলোড করে খেলা যাবে। আইফোনের গ্রাহকেরা সুবিধাটি পাবেন দুই মাস পর।

রাজধানীর নিকেতনে কেপিসি এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়ে গত রোববার প্রথম আলোর এই প্রতিবেদককে নতুন উদ্যোগটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান কাজী সাজেদুর রহমান। আলাপচারিতার একপর্যায়ে যোগ দেন টারটল সলিউশনসের চেয়ারম্যান খান রিফাত সালাম।

উদ্যোক্তারা জানালেন, দুই থেকে আড়াই বছর চেষ্টার ফসল এই মোবাইল গেমস অ্যাপ। তবে মূল কাজ শুরু হয় গত মে মাসে। আটজন তরুণ প্রোগ্রামার গেমসটির প্রোগ্রামিংয়ের কাজ করেছেন। সব মিলিয়ে উদ্যোগটিতে প্রাথমিক বিনিয়োগের পরিমাণ ৬০ লাখ টাকা। তবে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ বাড়বে।

কাজী সাজেদুর রহমান ২০১২ সালে তেজগাঁওয়ে পেপার কাপ উৎপাদনের জন্য কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৬ সালে এসএমই ফাউন্ডেশনের বর্ষসেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার পুরস্কার পান তিনি। এই উদ্যোক্তা বললেন, ‘আমি ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা করেছি। তাই প্রযুক্তি খাতের কোনো ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা ছিল। বেসরকারি আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করার সময় খান রিফাত সালাম স্যারের সঙ্গে পরিচয় হয়। স্যারের সঙ্গে প্রায়ই কথা হতো। স্যারও নতুন কিছু করার চিন্তাভাবনা করছিলেন। আমার ভাবনার সঙ্গেও মিলে গেল।’

‘হাউজ্যাট: মুশি দ্য ডিপেন্ডেবল’ মোবাইল গেমসটির একটি বেটা ভার্সন (পরীক্ষামূলক) ছাড়া হয়েছিল। এটি এক সপ্তাহে ৫০ লাখ বার দেখা হয়েছে। হাউজ্যাটের পূর্ণাঙ্গ ভার্সন এলে আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মধ্যেই ২৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ গ্রাহক পাওয়া যাবে, এমন প্রত্যাশা উদ্যোক্তাদের।

মুশফিকুর রহিমকে যুক্ত করা প্রসঙ্গে কাজী সাজেদুর রহমান বললেন, ‘তার সঙ্গে আমার অনেক দিনের বন্ধুত্ব। বেশ কিছুদিন আগে এক আড্ডায় নতুন কোনো উদ্যোগে সে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিল। তো আমরা যখন গেমসটি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছিলাম, তখন প্রথমই তার কথা মাথায় আসে। কারণ, বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেও তার তারকাখ্যাতি রয়েছে। গত জিম্বাবুয়ে সফরের সময় এক রাতে আমি তাকে উদ্যোগটির কথা জানালাম। সে একবাক্যে রাজি হয়ে যায়।’

গেমসটি খেলায় টুর্নামেন্ট জিতলে কিংবা সর্বোচ্চ রান করলে মুশফিকের জার্সি, মুশফিকের অটোগ্রাফ–সংবলিত ব্যাট ইত্যাদি পুরস্কার দেওয়ার চিন্তা করছেন উদ্যোক্তারা। বিনামূল্যে গেমসটি খেলা যাবে। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের মূল আয়ের উৎস হবে বিভিন্ন কোম্পানির স্পনসরশিপ। ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যেমন বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন থাকে, গেমসটির ভার্চু্যয়াল মাঠেও তেমনটা থাকবে। ইতিমধ্যে একাধিক প্রতিষ্ঠান স্পন্সরও হয়েছে।

খান রিফাত সালাম বললেন, ‘সারা দুনিয়ায় গ্যামিংয়ের বাজার ৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের। বাংলাদেশেও গেমসের বড় বাজার রয়েছে। তবে সেখানে বিদেশি কোম্পানির দাপট। আমরা বাজারটিতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ভিত শক্ত করতে চাই। তা ছাড়া আমাদের হাউজ্যাট গেমসটি পাবজি মতো ক্ষতিকর গেমসের প্রভাব থেকে তরুণসমাজকে মুক্ত থাকতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি ক্রিকেটীয় নিয়মকানুনও শেখা যাবে গেমসটি থেকে।’