ব্যাংকার্স সভা
ঋণখেলাপিরা আবার ছাড় পাচ্ছেন
এবার ঢালাওভাবে সুবিধা না দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে নতুন করে এই সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
খেলাপি ঋণের মাত্র ২ শতাংশ পরিমাণ টাকা জমা দিয়ে আবার ঋণ পুনঃ তফসিলের সুযোগ প্রদানের দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এ নিয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডি) অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।
জানা গেছে, এমডিদের কেউ কেউ এফবিসিসিআইয়ের দাবির পক্ষে মত দিয়ে বলেছেন, এই সুবিধার ফলে অনেক ব্যবসায়ী ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। আবার কেউ কেউ বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন, সুবিধাটির অপব্যবহার করেছেন ব্যবসায়ীরা। এই অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক হাঁটছে মাঝপথ দিয়ে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ঢালাওভাবে সুবিধা না দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে নতুন করে সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় খেলাপি ঋণ পরিশোধে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত এই সভায় চার ডেপুটি গভর্নরসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে গভর্নর হিসেবে ফজলে কবির ২২টি সভায় সভাপতিত্ব করেছেন। ব্যাংকগুলোর পক্ষে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেনসহ সব ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নরের মেয়াদ আগামী ৩ জুলাই শেষ হচ্ছে। তাই এটাই ছিল ব্যাংকার্স সভায় তাঁর শেষ উপস্থিতি। এ জন্য সভায় ব্যাংকাররা তাঁকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানান। কেউ কেউ গভর্নরের প্রশংসাও করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, গভর্নর চলে যাচ্ছেন, এ জন্য সবাই বিদায়ী শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের দাবি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত জানাবে।
এদিকে সভা সূত্রে জানা গেছে, মামলার কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যে টাকা আটকে আছে, তা দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় জানানো হয়, ব্যাংকগুলোর ২ লাখ ৯ হাজার ২২৭ কোটি টাকা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ১৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা মামলার কারণে আটকে আছে। এতে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এসব মামলা এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত তদারক করবে।
সভা শেষে এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রজ্ঞাপন দেবে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে অনেক ব্যাংক আলাদা টিম গঠন করছে। সবাই নিজের মতো চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এর আগে মুদ্রানীতির ওপর সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান। তিনি মুদ্রানীতির অর্জন ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
খেলাপিদের আবেদনের সময় বাড়ল
ঋণের দুই শতাংশ পরিমাণ অর্থ জমা দিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের ঋণ নিয়মিত করার সময় বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নীতিমালা অনুযায়ী গত ৩০ এপ্রিলের মধ্যে আবেদন দাখিল করতে না পারায় ঋণ সমন্বয়ে সদিচ্ছুক অনেক গ্রাহক তাঁদের মন্দ মানে শ্রেণিকৃত ঋণ সমন্বয় করতে পারছেন না। এ প্রেক্ষাপটে গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ আদায় ও তারল্য পরিস্থিতির উন্নয়নে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত আবেদন দাখিলের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।