এক ঋণের টাকায় অন্য ঋণ শোধে সতর্ক থাকার নির্দেশ

দেশের শীর্ষ পর্যায়ের একটি গ্রুপ সরকারের প্রণোদনা তহবিল থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে সেবা খাতের জন্য ঋণ নিয়েছে। আবার একই সময়ে ৯ শতাংশ সুদে অন্য খাতের একটি ঋণ সমন্বয় করেছে। অর্থাৎ কম সুদের ঋণ নিয়ে বেশি সুদের ঋণ শোধ করেছে গ্রুপটি। শুধু এই গ্রুপ নয়, প্রণোদনা তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এভাবে অন্য ঋণ শোধ করেছে। এমনকি কম সুদের ঋণ নিয়ে ব্যাংকে স্থায়ী আমানত রাখা ও বিনিয়োগ করার ঘটনাও ঘটছে।

এসব ঘটনা ঋণ শৃঙ্খলার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তদারকি না থাকায় হরহামেশাই এসব ঘটছে। এ নিয়ে অবশেষে বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্ক হয়ে উঠেছে। গতকাল বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যাংকগুলোকে আবারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশের সব ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতিমালার নির্দেশনা অনুযায়ী, গ্রাহককে যে উদ্দেশ্যে ঋণ দেওয়া হয়েছে বা হবে, সে উদ্দেশ্যেই তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য নিয়মিত তদারক করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিস্তিভিত্তিক প্রকল্প ঋণের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী কিস্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হলে পরবর্তী কিস্তি ছাড় করতে বলেছে। কোনো ঋণের অর্থ মঞ্জুরিপত্রে উল্লেখিত খাতের পরিবর্তে অন্য কোথাও ব্যবহৃত হলে ব্যাংককে কারণ উদ্‌ঘাটনসহ তা রোধকল্পে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এক ঋণের টাকা অন্য ঋণের দায় পরিশোধে বা সমন্বয়ে ব্যবহার করা যাবে না, তা অনেক আগেই বলা হয়েছে বলে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি নেওয়া ঋণ গ্রাহকের বিদ্যমান অন্য কোনো ঋণের দায় পরিশোধ বা সমন্বয়ে ব্যবহার করতে দেখা গেছে, যা ঋণ শৃঙ্খলার পরিপন্থী। তাই ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতিমালার যথাযথ পরিপালন নিশ্চিতকল্পে একটি ঋণের অর্থ দিয়ে কোনোভাবেই অপর কোনো ঋণ পরিশোধ বা সমন্বয় করা যাবে না।

ব্যাংকগুলোকে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় বিষয়টি গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, কম সুদ হওয়ায় প্রণোদনার ঋণ সবাই চাইছে। বেশির ভাগই ঋণ পাচ্ছে। তবে পরিদর্শন বন্ধ থাকায় যথাযথ তদারক করা যাচ্ছে না। এরপরও ঋণের টাকা অন্যত্র ব্যবহারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। ঋণ নিয়ে ঋণ শোধ চলতে থাকলে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। পরে ঋণের ব্যবহার খতিয়ে দেখা হবে। ঋণের ব্যবহার যথাযথ না হলে ব্যাংকগুলোকে জবাবদিহি করতে হবে। ব্যাংকের দায়িত্ব ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা।