এক পক্ষ চায় ভোট, অন্য পক্ষ সমঝোতা

২০১৩ সালের পর এক দফা সমঝোতায় কমিটি হয়। গত বছর বড় দুই পক্ষ সমঝোতা করলেও নতুন জোট খণ্ডিত প্যানেল দেওয়ায় নির্বাচন হয়।

দুই দফা সমঝোতার পর তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদ চূড়ান্ত করতে সাধারণ সদস্যদের সরাসরি ভোটে নির্বাচন চায় সম্মিলিত পরিষদ। আরেক জোট ফোরাম আগের মতোই সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছে। অন্যদিকে নতুন জোট স্বাধীনতা পরিষদ নির্বাচন করার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

শেষ পর্যন্ত বড় দুই জোট ভোটের লড়াইয়ে এলে ২০১৩ সালের পর বিজিএমইএতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতে পারে। গতবারের পর্ষদ নির্বাচনে স্বাধীনতা পরিষদ খণ্ডিত প্যানেল দেওয়ায় ঢাকায় নিয়ম রক্ষার ভোট হয়। তাতে বড় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেননি স্বাধীনতা পরিষদের প্রার্থীরা। চট্টগ্রামে সম্মিলিত-ফোরাম প্যানেলের ৯ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন।

বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ আরও ছয় মাস থাকলেও এখন থেকেই পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে সংগঠনটির বড় নির্বাচনী জোট ‘সম্মিলিত পরিষদ’। তাদের প্যানেল লিডার বা সভাপতি প্রার্থী জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান। গত শনিবার উত্তরায় জায়ান্ট গ্রুপের কার্যালয়ে সম্মিলিত পরিষদের মতবিনিময় সভায় ফারুক হাসানকে সভাপতি পদে প্রার্থী করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। তবে আরও ছয় মাস আগে থেকেই ফারুক হাসান অনানুষ্ঠানিকভাবে সভাপতি পদের জন্য প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

সম্মিলিত পরিষদের মতবিনিময় সভায় জোটের প্রায় ৩০০ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য দেন সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি কুতুবউদ্দিন আহমেদ, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস প্রমুখ।

সম্মিলিত পরিষদের সদস্য মো. শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, ‘বিজিএমইএর নেতৃত্ব নির্বাচনে ফোরামের সঙ্গে আর কোনো সমঝোতা হবে না। যাঁরা যোগ্য, তাঁরাই ভোটের মাধ্যমে পরিচালনা পর্ষদে আসবেন—সম্মিলিত পরিষদের সভায় সেটি চূড়ান্ত হয়েছে।’ আগামী মার্চের শেষে বা এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন হতে পারে বলে মন্তব্য করেন বিজিএমইএর সাবেক এই সহসভাপতি।

নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিলেও সম্মিলিত পরিষদ পাঁচ বছর আগে ফোরামের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে পরিচালনা পর্ষদ চূড়ান্ত করতে চুক্তি করেছিল। দুই মেয়াদের জন্য সেই সমঝোতার প্রথম দফায় অর্থাৎ ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বরে সম্মিলিত পরিষদের সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে কমিটি হয়। সেই কমিটিতে সম্মিলিত পরিষদ ৪ সহসভাপতিসহ ১৪ পরিচালক এবং ফোরাম ৩ সহসভাপতিসহ ১৩ পরিচালক পদ পায়। দুই বছরের জন্য গঠিত সেই কমিটি অবশ্য নানা অজুহাত দেখিয়ে ৪৩ মাস দায়িত্ব পালন করে। গত বছর সেই সমঝোতা অনুযায়ী প্রার্থী বাছাই করে বড় দুই জোট। তবে স্বাধীনতা পরিষদ নামে নতুন একটি জোট ঢাকায় খণ্ডিত প্যানেলে প্রার্থী দেওয়ায় ভোট হয়েছিল।

জানা যায়, নানা কারণে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের ওপর ক্ষুব্ধ সম্মিলিত পরিষদের শীর্ষ নেতারা। শনিবারের সভায় পরিষদের কয়েকজন সদস্য সংগঠনের বর্তমান নেতৃত্বের তীব্র সমালোচনা করেন। তা ছাড়া ফোরামের সাংগঠনিক দুর্বলতাও রয়েছে। তাই সব মিলিয়ে সম্মিলিত পরিষদ নির্বাচনের পক্ষে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফোরামের পক্ষ থেকে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। তবে ফোরাম এখনো তাদের প্যানেল লিডারও চূড়ান্ত করতে পারেনি। ফোরামের বড় অংশই বর্তমান সভাপতি রুবানা হককে আবারও প্যানেল লিডার করতে চান। তার বাইরে বিকল্প হিসেবে আছেন বর্তমান সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ।

ফোরামের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখনো কিছুই চূড়ান্ত করিনি। করোনায় বিপর্যস্ত ব্যবসা কীভাবে টিকিয়ে রাখা যাবে, সেটি নিয়েই আমরা এখন বেশি চিন্তিত।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হলে আমরা অবশ্যই অংশ নেব।’

নির্বাচন নিয়ে ফোরাম কিছুটা অগোছালো থাকলেও প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা নিয়ে কাজ করছে সম্মিলিত পরিষদ। ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ১৫ জন প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। বাকি প্রার্থী চূড়ান্ত হবে ভোটার তালিকা প্রকাশের পর। চট্টগ্রামের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে পরিষদের সদস্যদের মধ্যে ভোট হবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সভাপতি প্রার্থী ফারুক হাসান বলেন, ‘সমঝোতা অনুযায়ী পারফরম্যান্স না হওয়ায় সবাই নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন। আমাদের প্যানেলে নতুন-পুরোনো মুখ থাকবে। অন্তত তিনজন নারী ব্যবসায়ী থাকবেন। প্রত্যক্ষভাবে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন এমন মানুষদের নিয়েই আমরা চিন্তাভাবনা করছি।’

বিজিএমইএর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে স্বাধীনতা পরিষদ নামে একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। গতবারের নির্বাচন থেকে তাদের দূরে রাখতে নানামুখী চেষ্টা হলেও শেষ পর্যন্ত অনড় অবস্থানের কারণে নির্বাচন হয়। তবে আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রস্তুতি নেই বললেই চলে।

স্বাধীনতা পরিষদের আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আমরা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যেই সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।’