একটি শেয়ারের দাম যখন দেড় লাখ টাকা

ভাবুন তো একবার। একটি শেয়ারের দাম দেড় লাখ টাকা। তা–ও আবার দেশের বাজারে। ভাবছেন অবিশ্বাস্য। তা বটে! তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, দেড় লাখ টাকাতেই ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানির (বিএটিবিসি) একটি শেয়ারের ক্রয়াদেশ দিয়েছিলেন একজন বিনিয়োগকারী। সেটি গতকাল বৃহস্পতিবার। লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে ওই দিন বিএটিবিসির শেয়ারের কোনো মূল্যসীমা ছিল না। আর তাতেই দেড় লাখ ও এক লাখ টাকায় উঠেছিল শেয়ারের ক্রয়াদেশ। তবে শেষ পর্যন্ত ওই দামে কোনো শেয়ারের লেনদেন হয়নি।
বিএটিবিসি গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য সব মিলিয়ে ৮০০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। যার মধ্যে ৬০০ শতাংশ নগদ আর ২০০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। এর মধ্যে ৩০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ছিল অন্তর্বর্তীকালীন, যা বিনিয়োগয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ৫০০ শতাংশ লভ্যাংশ গত বুধবার কোম্পানিটির পর্ষদ সভা থেকে নতুন করে ঘোষণা করা হয়। এতে নির্ধারিত দিনে কোম্পানিটির শেয়ার যাঁদের হাতে থাকবে, তাঁরা লভ্যাংশ হিসেবে প্রতিটি শেয়ারের জন্য পাবেন ৩০ টাকা নগদ এবং একটি শেয়ারের বিপরীতে দুটি বোনাস শেয়ার।

আরও পড়ুন

নিয়ম অনুযায়ী, লভ্যাংশের এ খবর বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এ কারণে গতকাল কোম্পানিটির শেয়ারের দামের ওপর কোনো মূল্যসীমা আরোপিত ছিল না। তাতেই প্রাক্‌–লেনদেনকালীন বিএটিবিসির শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম ওঠে দেড় লাখ টাকা। ওই টাকায় একটি শেয়ারের ক্রয়াদেশ দেন একজন বিনিয়োগকারী। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল এক লাখ টাকা, তা–ও মাত্র একটি শেয়ারের ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়। প্রাক্–লেনদেনকালীন এ দাম উঠলে গতকাল বিএটিবিসির লেনদেন শুরু হয় ১ হাজার ৭৯৯ টাকায়। কারণ, প্রাক্‌–লেনদেনকালীন ১৫ মিনিটে কোম্পানিটির শেয়ারের বেশির ভাগ ক্রয়াদেশ ছিল এ দামে।

লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে বৃহস্পতিবার বিএটিবিসির শেয়ারের কোনো মূল্যসীমা ছিল না। আর তাতেই দেড় লাখ ও এক লাখ টাকায় উঠেছিল শেয়ারের ক্রয়াদেশ। তবে শেষ পর্যন্ত ওই দামে কোনো শেয়ারের লেনদেন হয়নি। কারণ প্রাক–লেনদেনকালে এ ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়।

ডিএসইতে প্রতিদিন লেনদেন শুরু হয় সকাল ১০টায়। মূল লেনদেন শুরুর আগে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর দিনের শুরুর বা প্রারম্ভিক মূল্য নির্ধারণে ১৫ মিনিট প্রাক্–লেনদেন চলে। সকাল পৌনে ৯টা থেকে এ প্রাক্–লেনদেন শুরু হয়ে মূল লেনদেন শুরুর আগ পর্যন্ত তা চলে। প্রাক্‌–লেনদেনকালে শেয়ারের ক্রেতা–বিক্রেতারা তাঁদের পছন্দের দামে শেয়ারের ক্রয়াদেশ ও বিক্রয়াদেশ দিতে পারেন। তার ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয় দিনের প্রারম্ভিক মূল্য। সাধারণ শেয়ারের দামের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা আরোপিত থাকে। তবে লভ্যাংশ ঘোষণাসহ যেকোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের দিন সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের ওপর কোনো ধরনের মূল্যসীমা আরোপিত থাকে না। ফলে ওই দিন ক্রেতা–বিক্রেতারা তাঁদের ইচ্ছেমতো দাম হাঁকার সুযোগ পান। তবে সিকিউরিটিজ আইনে এ ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। এ কারণে ক্রেতা–বিক্রেতার কিছু আচরণ বা মোটিভকে কারসাজি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
যেমনটি মনে করা হচ্ছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ারের ক্ষেত্রে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে শেয়ারের দামের ওপর কোনো সীমা আরোপিত না থাকায় কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটাতে এ ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়েছিল। বিনিয়োগকারীর এ ধরনের আচরণকে তাই ‘কারসাজির চেষ্টা’ মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। জানা গেছে, ‘এম’ আদ্যক্ষরের একটি ব্রোকারেজ হাউস থেকে এ ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়েছিল। এরই মধ্যে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

দেশের শেয়ারবাজারে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দামি শেয়ার রেকিট বেনকিজারের। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের বর্তমান বাজারমূল্য ৪ হাজার ৪৬৮ টাকা।

জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল প্রাক্–লেনদেনকালে অস্বাভাবিক কিছু দামে বিএটিবিসির শেয়ারের ক্রয়াদেশ আমাদের নজরে এসেছে। কেন এবং কারা এ ক্রয়াদেশ দিয়েছে, সে ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউসের কাছ থেকে ব্যাখ্যা তলব করব। ব্যাখ্যার জবাব পাওয়ার পর এ বিষয়ে করণীয়বিষয়ক পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এদিকে দেশের শেয়ারবাজারে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দামি শেয়ার রেকিট বেনকিজারের। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের বর্তমান বাজারমূল্য ৪ হাজার ৪৬৮ টাকা।