এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্য কমল ১৬ হাজার কোটি টাকা

শেষ পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা কমানো হলো। মূল লক্ষ্য থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। ফলে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্য এখন দাঁড়াল ২ লাখ ৮০ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল।

গত সপ্তাহে কাটছাঁট করে এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যদিও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক প্রাক্‌-বাজেট আলোচনায় ঘোষণা দিয়েছিলেন যে এবার সরকারের রাজস্ব আদায়কারী এই সংস্থার লক্ষ্যমাত্রা কমানো হবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর অবস্থানে অটল থাকতে পারলেন না। অবশ্য এর কারণও আছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস জুলাই-মার্চে রাজস্ব আদায়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি দেখা গেছে। এনবিআর আলোচ্য সময়ে শুল্ক, কর ও ভ্যাট মিলিয়ে মোট রাজস্ব আদায় করতে পেরেছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের খাতওয়ারি লক্ষ্যমাত্রায় সর্বোচ্চ ৬ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে ভ্যাটে। ভ্যাট খাতে এখন সংশোধিত লক্ষ্য হলো ১ লাখ ৪ হাজার ৬ কোটি টাকা। ভ্যাটে মূল লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে আয়কর খাতে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৯৬ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর শুল্ক খাতে লক্ষ্য ৮৪ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৭৯ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা করা হয়েছে।

গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই এনবিআরের জন্য সবচেয়ে কম ১৬ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্য কমানো হলো। অথচ এবারই গত কয়েক বছরের মধ্যে রাজস্ব আদায়ে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। প্রথম ৯ মাসে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি মাত্র ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরে কমানো হয়েছিল ২৩ হাজার কোটি টাকা। গতবার এনবিআরের মূল লক্ষ্য ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। পরে তা কমিয়ে সোয়া ২ লাখ কোটি টাকা করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ২ লাখ ৫ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছিল এনবিআর। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ছিল। পরে তা কমিয়ে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭১ হাজার কোটি টাকা করা হয়। অবশ্য সেই সংশোধিত লক্ষ্য অর্জন করেছিল এনবিআর।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, এনবিআরে মূল লক্ষ্য কখনোই আদায় হয় না। পরে সংশোধিত লক্ষ্য আদায়েও কষ্ট হয়। এসব কারণে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে করের পরিমাণ কমছে। গত ১০ বছরের মধ্যে এখন কর-জিডিপি অনুপাত সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৬ শতাংশে আছে। এর কারণ হলো, রাজস্ব খাতে গত কয়েক বছরে কোনো সংস্কার হয়নি। কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি শুধু এনবিআরের একক প্রচেষ্টায় সম্ভব নয়। এ জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।

এদিকে চলতি অর্থবছরের শেষ সময়ে রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়াতে গত ১৩ মে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো এনবিআরের পাঁচজন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ কমিটি মে ও জুন মাসের রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি তদারকি করবে। এই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এনবিআরের সদস্য কালিপদ হালদার। প্রতি সপ্তাহে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করবে এই কমিটি। আয়কর আদায়ের ক্ষেত্রে এই কমিটিকে প্রয়োজন হলে ব্যাংক হিসাব জব্দ করা ও সার্টিফিকেট মামলা করার বিশেষ ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। মে ও জুন মাসে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে শুল্ক ও ভ্যাটের যেসব বকেয়া রাজস্ব আদায়, মামলা নিষ্পত্তি, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে সমাধানসহ অন্যান্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এই কমিটি।