এপ্রিলে ৬৫ শতাংশ মজুরি নয়, শতভাগ দাবি

পোশাকশ্রমিকদের এপ্রিল মাসের ৬৫ শতাংশ মজুরি নয়, শতভাগ দাবি করেছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি)। তারা দাবি করেছে, শ্রমভবনে গতকাল সোমবার তাদের সঙ্গে সরকার ও মালিকপক্ষের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

পোশাকশ্রমিকদের মজুরি নিয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে গত সোমবার শ্রম ভবনে একটি বৈঠক হয়। তাতে আইবিসির নেতাদের পাশাপাশি বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, করোনার কারণে গত এপিলে কারখানা বন্ধের সময়ে শ্রমিকেরা ৬৫ শতাংশ মজুরি পাবেন। তবে বাড়তি ৫ শতাংশ অর্থ চলতি মে মাসের মজুরির সঙ্গে দেবে মালিকেরা। তার আগে ত্রিপক্ষীয় সভায় ৬০ শতাংশ মজুরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

বৈঠক শেষে আইবিসির অধিভুক্ত সংগঠন জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন ও বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে সভার সিদ্ধান্ত বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করেন। তবে সোমবার রাতে ১১ টার পর আইবিসির সাধারণ সম্পাদক রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয় সভায় সর্বসম্মতিক্রমে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আইবিসি লিখিতভাবে দাবি করেছে, সভায় আইবিসির নেতারা গত এপ্রিলের শতভাগ মজুরি পরিশোধের দাবি করেন। তবে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর নেতারা মজুরি বৃদ্ধির কোনো প্রস্তাব আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানান। একইভাবে শ্রম প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাব বিবেচনার সুযোগ নেই জানালে সভায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পরে দীর্ঘসময় আলোচনার পর মালিকপক্ষের দুই জন ৬৫ শতাংশ মজুরি পরিশোধ করার কথা জানান। তখন আইবিসির নেতারা সেটি বিরোধীতা করে একে একে সভা ত্যাগ করেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইবিসির পক্ষে গতকালের সভায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, শ্রমিকনেতা হেদায়েতুল ইসলাম, চায়না রহমান, রুহুল আমিন, বদরুদ্দোজা নিজাম, কুতুবউদ্দিন আহমেদ, মীর আবুল কালাম আজাদ, বাবুল আখতার, নাজমা আক্তার, রাশেদুল আলম, তৌহিদুর রহমান, আমিরুল হক আমিন, সালাউদ্দিন স্বপন, কামরুল হাসান, শহিদুল্লাহ বাদল, নুরুল ইসলাম। আইবিসি মালিকদের সিদ্ধান্তে সম্মতি জানায়নি। ফলে সভা থেকে সর্বসম্মতি ক্রমে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জানতে চাইলে চায়না রহমান আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, 'আমরা বৈঠকের শুরুতে এপ্রিলের শতভাগ মজুরি দেওয়ার দাবি করেছি। তবে দীর্ঘ আলোচনার পর মালিকপক্ষ ৬৫ শতাংশ দিতে রাজী হোন। সে জন্য আমরা তাতে সম্মতি জানাইনি। তিনি আরও বলেন, সভা শেষ হওয়ার আগেই কয়েকজন নেতা চলে যান। তাই এক ধরণের ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে। পরে আমরা নিজেরা বৈঠক করে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি।'

শতভাগ মজুরির দাবিতে আইবিসি এখন কি কর্মসূচি নেবে জানতে চাইলে চায়না রহমান বলেন, আমরা মালিক ও সরকারপক্ষের সঙ্গে শতভাগ দরকষাকষি চালিয়ে যাব।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ত্রিপক্ষীয় সভায় এপ্রিল মাসের মজুরি ৬০ শতাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তারপরও সমঝোতার স্বার্থে চলতি মে মাসের সঙ্গে ৫ শতাংশ বাড়তি মজুরি দেওয়ার বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। আমরা মনে করি, আইবিসির সব নেতাই শ্রমিক ও শিল্পের স্বার্থে বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। তবে কেউ যদি সিদ্ধান্ত না মানেন তাহলে আমরা ধরে নেব, তারা পোশাক খাতকে বিপদে ফেলে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে কাজ করছেন।

 গত ২৮ এপ্রিল সরকার-মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয় এপ্রিল মাসে কারখানা বন্ধকালীন সময়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা মোট মজুরির ৬০ শতাংশ অর্থ পাবেন। আর যে কয়দিন কর্মদিবস ছিল সে কয়দিনের পূর্ণ মজুরি পাবে তারা। পরদিন কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে সেটি চূড়ান্ত করে শ্রম মন্ত্রণালয়। তবে সেই বৈঠক বর্জন করে শতভাগ মজুরি দেওয়ার দাবি করেন আইবিসির নেতারা। পরে বিষয়টি নিয়ে বিজিএমইএর নেতারা তাঁদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন। সেই ধারাবাহিকতায় সোমবারের সভাটি হয়েছে। পোশাক শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন ১৬টি শ্রমিক সংগঠন আইবিসির অধিভুক্ত।