করোনাকালের ঈদ
এবারের ঈদও করোনায়, তাই দুশ্চিন্তা থাকবেই
করোনাকাল বদলে দিয়েছে অনেক কিছু। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা গেছে থমকে। উৎসবের আনন্দও ম্লান হয়ে গেছে করোনার থাবায়। তবু ঈদ আসে, আসে উৎসব। অনেকে বড়বেলায় ঈদের আনন্দ খোঁজেন ফেলে আসা ছোটবেলার ঈদে। এক বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে মন্দা। তাই শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তা ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা করোনা সংকটের মধ্যে তৃতীয় ঈদ উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে কয়েক দিন পর। দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ, প্রধান নির্বাহী ও ব্যাংকারদের ঈদের একাল-সেকাল নিয়ে এবারের মূল আয়োজন।
ছোটবেলায় দাদা-দাদির সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা থেকে আমরা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গ্রামের বাড়িতে যেতাম। ১৯৮৭ সালে দাদা মারা যাওয়ার পর আমাদের ঈদ শুরু হলো ঢাকায়। দাদা মারা যাওয়ার পর দাদি আমাদের সঙ্গে ঢাকাতেই থাকতেন। দাদির কারণে তখন আত্মীয়স্বজন ঈদের দিন আমাদের বাসাতেই আসতেন। ১৯৯৪ সালে দাদি মারা যাওয়ার পর আবার আমাদের ঈদ গ্রামের বাড়িতে শুরু হলো। সেখানেই দাদা-দাদির কবর। তবে আমার সন্তানদের জন্মের পর আবার ঢাকায় ঈদ শুরু হয়।
ছোটবেলায় বাবা মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে আমি তারাবিহ নামাজ পড়তাম গুলশান আজাদ মসজিদে। সঙ্গে বাবার ৮-১০ জন বন্ধুও থাকতেন। সে সময় ঈদের চেয়েও আমার কাছে বেশি খুশির ছিল চাঁদরাত। কারণ, চাঁদরাতে এশার নামাজের সময় ইমাম সাহেব বলতেন, ঈদের চাঁদ দেখা গেছে, কাল ঈদ।
আমার বাবা জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। পাকিস্তান আমলে ব্যাংকে চাকরি করেছেন। তারপর দীর্ঘদিন ব্যবসা করে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছেন। ব্যস্ততার কারণে বাবা আমাদের সেভাবে সময় দিতে পারতেন না। তবে আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ সচেতন ছিলেন তিনি। আমার বাবাকে কখনো শপিং মল বা কাঁচাবাজারে যেতে দেখিনি। তবে চাঁদরাতে আমাকে সঙ্গে নিয়ে বাবা বেইলি রোডে টাঙ্গাইল শাড়ি কুটিরে গিয়ে মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনতেন। এটি আমার জন্য বেশ আনন্দময় সময় ছিল।
ঘরের যাবতীয় বিষয় মা-ই সামাল দিতেন। তিনিই ঈদের আগে রোজা রেখে গরমের মধ্যে নিউমার্কেট ও এলিফ্যান্ট রোড ঘুরে ঘুরে আমার আর আমার বোনের জন্য কেনাকাটা করতেন। অবশ্য তার আগেই আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে প্রচুর উপহার চলে আসত। আমার আর আমার বোনের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা ছিল, কে কয়টা গিফট পেলাম।
আরেকটু বড়বেলায় ঈদের দিন কোনো এক বন্ধুর বাসায় আমরা সব বন্ধু একসঙ্গে হতাম। তারপর ঘুরতে যেতাম। আশুলিয়ায় যাওয়ার একটা ঝোঁক ছিল। কারণ, নব্বইয়ের দশকে আশুলিয়ায় ভেনিসের মতো জায়গা ছিল। সেখানে অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা চলত। চটপটি–ফুচকা খেতাম। তবে রাত ১২টার আগে ঘরে ফেরার একটা বাধ্যবাধকতা ছিল।
করোনার কারণে গতবারের ঈদ ঘরেই কেটেছে। বাসার নিচেই আমরা ঈদের জামাত পড়েছি। রাতের বেলা দেশ-বিদেশের ১৮-২০ জন বন্ধুর সঙ্গে অনলাইনে আড্ডা হয়েছে। তবে সেই আড্ডার মাঝেই একটা ফোন আসে। ভাবি ফোন করে জানান, নাসিম (সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর) ভাইয়াকে হাসপাতালে যেতে বলা হয়েছে। কিছুক্ষণ পরই আমার বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর সহধর্মিণী নিলুফার মঞ্জুর চাচী আমাদের ছেড়ে চলে যান। বাবার প্রিয় বন্ধু শামীম চাচাও চলে গেলেন। কি একটা অবস্থা। তারপর আমার মেজ চাচা মারা যান। সব মিলিয়ে গতবারের ঈদ ছিল আমাদের পরিবারের জন্য খুবই বেদনাদায়ক।
চলতি বছরের ঈদও করোনার মধ্যেই করতে হবে। ফলে দুশ্চিন্তা থাকবেই। ব্যবসায়িক দুশ্চিন্তাও কম নয়। খুচরা ব্যবসা কমে গেছে। কারণ, বাজারে চাহিদা কমে গেছে। খুচরা ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের নতুন একটি আর্থিক স্কিম করা দরকার।
চলতি বছরের ঈদও করোনার মধ্যেই করতে হবে। ফলে দুশ্চিন্তা থাকবেই। ব্যবসায়িক দুশ্চিন্তাও কম নয়। খুচরা ব্যবসা কমে গেছে। কারণ, বাজারে চাহিদা কমে গেছে। খুচরা ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের নতুন একটি আর্থিক স্কিম করা দরকার। একেবারে স্বল্প সুদ ও ঋণ পরিশোধে দীর্ঘ সময় দিয়ে অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দেওয়া দরকার। আমাদের মতো বড় ব্যবসায়ীরা কোনোরকমে টিকে থাকলেও ছোটরা পারবে না। ইতিমধ্যে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে গ্রামে চলে গেছে।
করোনা সঙ্গে নিয়ে আমাদের আরও দুই বছর চলতে হবে। কথাটি শেষ পর্যন্ত ভুল প্রমাণিত হলে আমি সবচেয়ে খুশি হব। করোনাকে দ্রুত বিদায় করতে চাইলে টিকা কর্মসূচিকে জোরদার করতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের নিজেদের এলাকায় গিয়ে টিকা নিয়ে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আর টিকার জোগান নিশ্চিত করতে আগামী বাজেটে টিকার জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে।