কথা রাখলেন না অর্থমন্ত্রী

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ না দেওয়ার দৃঢ় অবস্থানে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলেন না অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এবারও কালোটাকায় ফ্ল্যাট কেনা যাবে। টাকার উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করবে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অথচ গত দুই মাসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এ ধরনের সুযোগ আর দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক চাপের কাছে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নতি স্বীকার করল।
বিনা প্রশ্নে কালোটাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ দিয়ে চলতি অর্থবছরের বাজেটে অর্থ আইন, ২০১৩ এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে ১৯ বিবিবিবিবি নামের একটি নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এই ধারাটি বাতিল বা রহিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়নি। এর মানে হলো, ধারাটি আগামী অর্থবছরেও আয়কর অধ্যাদেশে রয়েছে। আর অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ফ্ল্যাট কিনলে উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করবে না এনবিআর।
আর এলাকাভিত্তিক করের পরিমাণও অপরিবর্তিত রয়েছে। ২০০ বর্গমিটারের বেশি আয়তনের কোনো ফ্ল্যাট কিনতে প্রতি বর্গমিটারে রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিলের মতো অভিজাত এলাকায় প্রতি বর্গমিটারে সাত হাজার টাকা কর দিতে হবে। আর এসব এলাকায় ২০০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে করের পরিমাণ প্রতি বর্গমিটারে পাঁচ হাজার টাকা কর দিতে হবে। আর রাজধানীর ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, কারওয়ান বাজার, বিজয়নগর, সেগুনবাগিচা, নিকুঞ্জ, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় ২০০ বর্গমিটারের বেশি হলে বর্গমিটারপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা ও ২০০ বর্গমিটারের কম হলে বর্গমিটারপ্রতি চার হাজার টাকা কর দিতে হবে। এ ছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামের এসব এলাকা ছাড়া অন্য এলাকায় ২০০ বর্গমিটারের বেশি হলে বর্গমিটারপ্রতি তিন হাজার টাকা ও ২০০ বর্গমিটারের কম হলে বর্গমিটারপ্রতি দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে।
এ ছাড়া জেলা সদরের পৌরসভার মধ্যে এই হার যথাক্রমে ১৫০০ টাকা ও এক হাজার টাকা। আর দেশের অন্য এলাকায় এই হার হবে যথাক্রমে এক হাজার টাকা ও ৭০০ টাকা।
২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশে ১৯ই নামে একটি ধারা সংযোজন করে অপ্রদর্শিত আয় ঘোষণা দেওয়ার স্থায়ী সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এই আয় বৈধ উপায়ে হতে হবে। আয়ের উৎস জানাতে হবে। এই ধারা অনুযায়ী, কোনো কারণে কোনো করদাতা অতীতে তাঁর আয় কম প্রদর্শন করে থাকেন বা কোনো কারণে প্রাপ্ত অর্থ সম্পদ বিবরণী প্রদর্শন না করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে তিনি তাঁর সেই আয় বিদ্যমান আইন অনুযায়ী স্বেচ্ছায় প্রদর্শন করতে পারেন। এ জন্য শুধু প্রদেয় করের ১০ শতাংশ অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হয়। এতে কর বিভাগ কোনো প্রশ্ন করবে না।