কর ফাঁকিতে বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা হারাচ্ছে বাংলাদেশ

কর ফাঁকির এ পরিমাণ মোট কর রাজস্বের ৩.৪৬, স্বাস্থ্য খাতের ব্যয়ের ৬১.৮৯ ও শিক্ষা খাতে ব্যয়ের ১৪ শতাংশের সমপরিমাণ। তারা হিসাব করে বলছে, এই অর্থ ৩ লাখ ৯২ হাজার ৩৯৮ জন নার্সের বার্ষিক বেতনের সমান।

পানামা পেপার্স, প্যারডাইস পেপার্স, সুইস লিকস, ফিনসেন ফাইলস—এত এত ফাঁসকাণ্ডের জেরে মানুষ কর ফাঁকির ঘটনা সম্পর্কে আগেই জেনেছে। এবার ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্কের কল্যাণে আরও জানা গেল, প্রতিবছর বিশ্ব থেকে মোট কী পরিমাণ কর ফাঁকি দেওয়া হয়। সেই টাকা কোথায় যায় এবং তা দিয়ে কত জন নার্স নিয়োগ দেওয়া যেত, তার হিসাবও দিয়েছে ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক।

ব্যক্তি ও করপোরেট দুই শ্রেণির করদাতাদের তথ্যই এই প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে বিশেষ দিক হচ্ছে, কোন দেশ থেকে কী পরিমাণ কর ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে, সেই তথ্য পৃথকভাবে দেখানো হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, মুনাফা ও সম্পদ স্থানান্তর করে বাংলাদেশ থেকে বছরে ৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিচ্ছে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি ও ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা। কর ফাঁকির এ পরিমাণ মোট কর রাজস্বের ৩.৪৬ শতাংশ, স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের ৬১.৮৯ শতাংশ ও শিক্ষা খাতে ব্যয়ের ১৪ শতাংশের সমপরিমাণ। তারা হিসাব করে বলছে, এই অর্থ ৩ লাখ ৯২ হাজার ৩৯৮ জন নার্সের বার্ষিক বেতনের সমান।

ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক (টিজেএন) কর ফাঁকিবিরোধী একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম। গত শুক্রবার বিশ্বব্যাপী কর ন্যায্যতা নিয়ে ‘দ্য স্টেট অব ট্যাক্স জাস্টিস-২০২০: ট্যাক্স জাস্টিস ইন দ্য টাইম অব কোভিড-১৯’ নামের যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ প্রাক্কলন রয়েছে।

অন্যদিকে ভারত থেকে প্রতিবছর ৭৫ হাজার কোটি রুপি কর কম সংগ্রহ হয়, যা দেশটির জিডিপির শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ। বিশ্বজুড়ে এই অঙ্ক ৪২ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বেশি, যা দেশগুলোর ৩ কোটি ৪০ লাখ স্বাস্থ্যকর্মীর সারা বছরের বেতনের সমান। এর মধ্যে ২৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ফাঁকি দিচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। সেই টাকা তারা বিভিন্ন নিরাপদ জায়গায় পাঠিয়ে দেয়, যাদের বলে ট্যাক্স হেভেন, অর্থাৎ যেসব দেশে করের হার খুব কম এবং যেখানে টাকা পাঠালে তা গোপন রাখা যাবে। বাকি ১৮ হাজার ২০০ কোটি ডলারের কর ফাঁকি দিচ্ছেন ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা। টিজেএনের প্রাক্কলন, কর ফাঁকির কারণে দেশগুলো প্রতিবছর স্বাস্থ্য বাজেটের ৯ দশমিক ২ শতাংশ পরিমাণ হারাচ্ছে।

টাকার অঙ্কের দিক থেকে উচ্চ আয়ের দেশগুলো থেকে বেশি কর ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে, তা ঠিক; কিন্তু অনুপাতের দিক থেকে নিম্ন আয়ের দেশগুলো থেকে ফাঁকির হার বেশি। অর্থাৎ নিম্ন আয়ের দেশগুলো উচ্চ আয়ের দেশগুলোর চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। টিজেএনের প্রাক্কলন, নিম্ন আয়ের দেশগুলো যেখানে সংগৃহীত রাজস্বের ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হারাচ্ছে, সেখানে উচ্চ আয়ের দেশগুলো হারাচ্ছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। আবার দেখা যায়, করপোরেট কর ফাঁকির ক্ষেত্রে যেখানে নিম্ন আয়ের দেশগুলো এগিয়ে আছে, ব্যক্তি শ্রেণির কর ফাঁকির ক্ষেত্রে সেখানে এগিয়ে আছে উচ্চ আয়ের দেশগুলো।

আর্থিক গোপনীয়তা সূচকের ১৩৩ টি দেশের মধ্যে শীর্ষ পাঁচটি দেশ হচ্ছে কেম্যান আইল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, হংকং ও সিঙ্গাপুর। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ও ভারতের অবস্থান যথাক্রমে ৩৯ ও ৪৭ তম। পাকিস্তান আছে ১০০-তে।

ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্কের প্রতিবেদনে করের স্বর্গ বিবেচনায় ১৫টি দেশের নাম আলাদাভাবে প্রকাশ করেছে, যেখানে অন্য দেশ থেকে কর ফাঁকির অর্থ বেশি যাচ্ছে। দেশগুলো হলো কেইম্যান আইল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবার্গ, যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, চীন, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, বারমুডা, সুইজারল্যান্ড, পুয়েরতোরিকো ও জার্সেই।

একই সঙ্গে, প্রতিবেদনে ১৩৩ দেশের আর্থিক গোপনীয়তা সূচক প্রকাশ করা হয়েছে। এই সূচকে ১ নম্বরে আছে কেইম্যান আইল্যান্ডস। বাংলাদেশের অবস্থান ৫৪তম। কর ফাঁকি দিতে অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশেও অর্থ এসেছে। অন্য দেশ বাংলাদেশের কারণে বছরে কর হারাচ্ছে ৮ লাখ ৮৮ হাজার ডলার বা প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা।

আর্থিক গোপনীয়তা সূচকের ১৩৩ টি দেশের মধ্যে শীর্ষ পাঁচটি দেশ হচ্ছে কেম্যান আইল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, হংকং ও সিঙ্গাপুর। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ও ভারতের অবস্থান যথাক্রমে ৩৯ ও ৪৭ তম। পাকিস্তান আছে ১০০-তে।