করপোরেট করের শর্ত শিথিলের দাবি এমসিসিআইয়ের

কোম্পানির করপোরেট করহার হ্রাস করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। কিন্তু নতুন হারে কর দিতে গেলে যেসব শর্ত পূরণের কথা বলা হয়েছে, তা শিথিল করার দাবি জানিয়েছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিসিআই)।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির করহার ২০ শতাংশ (১০ শতাংশের অধিক শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তর), এক ব্যক্তি কোম্পানির করহার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ ও নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির করহার দাঁড়াবে ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারের বাজেটে এসব শ্রেণির করহার ২ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাসের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু নতুন হারে করপোরেট কর দেওয়ার সুবিধা পেতে বেশ কিছু শর্তের কথা বলা হয়েছে, যেমন সব আয় ও গ্রহণ অবশ্যই ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে হবে এবং সব প্রকার খরচ ও বিনিয়োগ (বাৎসরিক ১২ লক্ষ টাকা নগদ লেনদেন ব্যতীত) ব্যাংকের মাধ্যমে করতে হবে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে এমসিসিআই বলেছে, এসব শর্ত শিথিল করা জরুরি। এসব শর্ত নির্ধারণে কোম্পানির ব্যবসার ধরন, আকার, কারখানা-ডিপো ও বিক্রয়কর্মীর সংখ্যা ও লেনদেনের পরিমাণ যৌক্তিকভাবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

দ্বিতীয়ত, মাঠপর্যায়ে নিজস্ব বিক্রয়কর্মীর মাধ্যমে দোকানে দোকানে পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং সরাসরি ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রয়কারী খুচরা ব্যবসা ও সুপারশপের ক্ষেত্রে আয় ও প্রাপ্তি ব্যাংকের মাধ্যমে নেওয়ার শর্ত বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে মনে করে এমসিসিআই।

তৃতীয়ত, দেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতির আকার বিবেচনায় নিয়ে ১২ লাখ টাকার বেশি একক লেনদেনের ক্ষেত্রে সব আয় বা গ্রহণ এবং সব প্রকার খরচ ও বিনিয়োগ ব্যাংকিং ট্রান্সফারের মাধ্যমে করতে হবে। এই শর্ত বাস্তবতার সাপেক্ষে পালন করা সম্ভব নয় বলে মনে করে এমসিসিআই। তারা বলেছে, দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে কাজ করে এবং জিডিপির অর্ধেকের বেশি আসে সেখান থেকে। তাই অনানুষ্ঠানিক ইকোনমির সঙ্গে সম্পর্ক হঠাৎ করে ছিন্ন করে ব্যবসা চালানো অবাস্তব ও অসম্ভব। স্থানীয় যোগাযোগ, দৈনন্দিন শ্রম, কৃষি উপকরণ, কাঁচামাল ক্রয় ইত্যাদি খাতে ভোগ্যপণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য হয়ে নগদ লেনদেন করতে হয়। অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বার্ষিক ব্যয়ের ১২ লক্ষ টাকার অধিক একক লেনদেনগুলোর ক্ষেত্রে সব আয় বা গ্রহণ এবং সব প্রকার খরচ ও বিনিয়োগ ব্যাংকিং ট্রান্সফারের মাধ্যমে করতে হবে, এই বিধান বাস্তবসম্মত নয়।

কর্মী মুনাফা অংশীদারত্ব তহবিলে কর

বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানকে বার্ষিক মুনাফার ৫ শতাংশ অর্থ কর্মী মুনাফা অংশীদারত্ব তহবিলে (ডব্লিউপিপিএফ) দিতে হয়। তবে এত দিন শ্রমিকদের দেওয়া মুনাফার অর্থের ওপর কর দিতে হতো না প্রতিষ্ঠানকে। প্রস্তাবিত বাজেটে ডব্লিউপিপিএফের ওপর কর আরোপ করা হয়েছে। এমসিসিআই বলছে, এই নিয়মের ফলে কোম্পানিগুলোর করভার আরও বেড়ে যাবে।

প্রথমত, শ্রম আইনের বিধান অনুযায়ী কর–পূর্ববর্তী মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ এই তহবিলে জমা করা হয়। শ্রম আইনের ২৪৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কোম্পানির করযোগ্য আয় হিসাব করার সময় ডব্লিউপিপিএফের অর্থ করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচনা যাবে না, অর্থাৎ এটা অনুমোদনযোগ্য খরচ। তাই ফাইনান্স বিল ২০২২–এ প্রস্তাবিত এ–সংক্রান্ত ধারাটি শ্রম আইনের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।

দ্বিতীয়ত, নিয়ম অনুযায়ী ডব্লিউপিপিএফ পরিশোধ না করা হলে শ্রম আইনের ২৩৬ ধারায় জরিমানা আরোপের বিধান রয়েছে। আইন দ্বারা নির্ধারিত এমন বাধ্যতামূলক খরচকে অননুমোদিত ব্যয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা অযৌক্তিক, যা ব্যবসার কর দায় অন্যায্যভাবে বাড়িয়ে দেবে এবং দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত ও নিরুৎসাহিত হবে।

তৃতীয়ত, কর্মীদের দেওয়া যেকোনো অর্থ কোম্পানির বৈধ খরচ। শ্রম আইনের ২৩৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী ও কোম্পানি আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, কর–পূর্ববর্তী মুনাফার ওপর ডব্লিউপিপিএফ হিসাব করা হয়। এর কর অনুমোদনযোগ্যতা বাতিল করা হলে কোম্পানিগুলো কর–পরবর্তী মুনাফার ওপর ডব্লিউপিপিএফ হিসাব করতে বাধ্য হবে। কিন্তু কোম্পানি আইন অনুযায়ী কর–পরবর্তী মুনাফা পাওয়ার একমাত্র অধিকার রাখেন বিনিয়োগকারীরা। এ অবস্থায় ডব্লিউপিপিএফ হিসাব ও পরিশোধ নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে এবং কোম্পানিগুলো শ্রম আইন ও কোম্পানি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থানে পড়বে।

কারখানার নিরাপত্তা সরঞ্জামে শুল্ক ছাড়

ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ, কারখানায় প্রস্তুত করা মালামাল রাখার তাক, কারখানার অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সরঞ্জামাদি, আর্দ্রতা নিরোধক যন্ত্রের আমদানিতে শুল্ক রেয়াতের দাবি জানিয়েছে এমসিসিআই। বর্তমানে এতে ১ শতাংশ শুল্ক আছে। প্রস্তাবিত বাজেটেও এই ১ শতাংশ শুল্কের বিধান রাখা হয়েছে। সম্প্রতি সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা নিরাপত্তা সরঞ্জামে শুল্ক রেয়াতের দাবি জানিয়েছে।

এ ছাড়া তারা ব্যক্তির করমুক্ত আয় চার লাখ টাকায় উত্তীর্ণ করার প্রস্তাব দিয়েছে।