করোনাকালে সেরা স্যামসাং

করোনা পরিস্থিতিতে যখন দেশে দেশে কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়, তখন অনেক কোম্পানি বিদ্যমান সুবিধাগুলো বহাল রেখে কর্মীদের বাড়তি সুবিধা দেয়।

কোভিড–১৯ তথা করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতিতে দেশে দেশে আতঙ্কের বশে কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। কোথাও ব্যাপক হারে, আবার কোথাওবা সীমিত পরিসরে কর্মী ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি বেতন-ভাতা বা মজুরি-বোনাস কাটা হয়েছে। ছোট-বড়নির্বিশেষে লাভজনক বা লোকসানি—উভয় ধরনের কোম্পানির মধ্যেই কর্মী ছাঁটাই ও বেতন কাটার প্রবণতা দেখা গেছে।

তবে পাইকারিভাবে সব নিয়োগদাতা বা মালিক-কর্তৃপক্ষই কর্মী ছাঁটাই করেছে বা কর্মীদের বেতন-মজুরি কমিয়েছে, সে কথাও কিন্তু ঢালাওভাবে বলা যাবে না। অনেক প্রতিষ্ঠানই এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী আচরণ দেখিয়েছে। তারা কর্মীদের বিদ্যমান সব সুবিধা বহাল রাখার পাশাপাশি বাড়তি কিছু দিয়েছে। এমনকি করোনাকালে কর্মীদের নিরাপদ ও চাঙা রাখতে তারা বিনোদনের ব্যবস্থাও করেছে। এ রকম সেরা নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস।

বিশ্বের ৫৮টি দেশের ৭৫০টি বহুজাতিক কোম্পানি ও স্থানীয় বৃহৎ করপোরেট প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ১ লাখ ৬০ হাজার কর্মীর ওপর জুন-জুলাই মাসে জরিপ চালিয়ে ফোর্বস তালিকাটি তৈরি করেছে। সদ্য প্রকাশিত এই তালিকার শীর্ষে আছে দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং। পরের চারটি স্থানে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের আমাজন, আইবিএম ও মাইক্রোসফট এবং দক্ষিণ কোরিয়ার এলজি।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টার সহায়তায় পরিচালিত এই জরিপে কর্মীরা কর্মক্ষেত্র নিয়ে নিজেদের সন্তুষ্টিসহ আর্থিক সুযোগ-সুবিধা, মেধা উন্নয়ন, নিয়োগদাতাদের ভাবমূর্তি, নারী-পুরুষের বৈষম্য ও সামাজিক দায়িত্বশীলতা—এসব বিষয়ে মত দেন।

গত মার্চ-এপ্রিলের দিকে গোটা দুনিয়া যখন করোনার আতঙ্কে কাঁপছিল, আর কোম্পানিগুলোও কর্মী ছাঁটাই ও বেতন কাটতে শুরু করে। তখন কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এইচপি বৈশ্বিক কর্মীদের জন্য ব্যতিক্রমী এক বিনোদনের ব্যবস্থা করে। ফোর্বস–এর তালিকায় ১৭তম স্থানে থাকা এইচপি এপ্রিলে আয়োজন করে ১২ ঘণ্টার এক ভার্চ্যুয়াল ড্যান্স পার্টি। অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য ভাড়া করা হয় রায়ান বেস্ট নামের এক ডিজেকে। এতে ভালো সাড়া পড়ে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে কোম্পানিটির দুই হাজার কর্মী জুমে যুক্ত হয়ে মাথায় পরচুলা পরে নিজেদের পোষা পশু নিয়ে বসদের সামনে নাচানাচি করেন। এ প্রসঙ্গে এইচপির প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা ট্র্যাসি কিয়োঘ বলেন, ‘কর্মীরা এই আয়োজনটা খুব পছন্দ করেছে।’ করোনায় আর্থিক সংকটে পড়া কর্মীদের ১০ হাজার ডলার করে নেওয়ার অফারও দিয়ে রাখে এইচপি। অফিস চলাকালে কর্মীদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার ব্যবস্থাও করেছে কোম্পানিটি।

ফোর্বস-এর সেরা নিয়োগদাতার তালিকায় সর্বোচ্চ ২৪৭টি কোম্পানি হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। এ ছাড়া ইউরোপের ২২৪টি এবং এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের ২০৮টি কোম্পানি রয়েছে। করোনাকালে ভালো ব্যবসা করা তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি), সফটওয়্যার ও টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানিই বেশি স্থান পেয়েছে তালিকায়।

তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা আমাজন কর্মীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সুবিধা দেয়নি এমন অভিযোগ মামলার মুখে পড়েছিল। কোম্পানিটির আটজন কর্মী কোভিডের কারণে মারা যান। তবে জরিপে অংশ নেওয়া আমাজনের কর্মীরা জানান, প্রতিষ্ঠানটি কর্মক্ষেত্রে সম্মুখসারির কর্মীদের জুনে ৫০ কোটি ডলার বোনাস দিয়েছে, কোভিড মোকাবিলায় কর্মীদের মধ্যে ১০ কোটি মাস্ক বিতরণসহ ৪০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। এ ছাড়া আগামী নভেম্বরের মধ্যে দৈনিক ৬৫০টি জায়গায় ৫০ হাজার কর্মীর কোভিড টেস্ট করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

বিশ্বের শীর্ষ ধনী জেফ বেজোসের মালিকানাধীন বহুজাতিক কোম্পানি আমাজনে মোট জনবল হচ্ছে ৮ লাখ ৭৫ হাজার। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত আমাজন ১ লাখ ৭৫ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগ করেছে।

আমাজনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বেথ গালেত্তি বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতিতে আমাজনের কর্মীরা ভোক্তাদের গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ সেবা দিয়ে চলেছেন। কর্মীদের এই নিবেদনের জন্য আমরা তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।’ তিনি জানান, শুরু থেকেই আমাজন তার কর্মীদের নিরাপদ রাখার জন্য কোভিড টেস্ট করার ব্যবস্থা রেখেছে, সেই সঙ্গে কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের জন্যও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনার সময়ে আর্থিক সমস্যায় পড়া নিয়মিত ও মৌসুমি কর্মীদের সহায়তার জন্য গঠন করা হয়েছে আড়াই কোটি ডলারের একটি রিলিফ ফান্ড বা ত্রাণ তহবিল।

বিশ্বের শীর্ষ ধনী জেফ বেজোসের মালিকানাধীন বহুজাতিক কোম্পানি আমাজনে মোট জনবল হচ্ছে ৮ লাখ ৭৫ হাজার। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত আমাজন ১ লাখ ৭৫ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগ করেছে।

১৮তম স্থান পাওয়া মার্কিন কোম্পানি সিসকোর সিইও চাক রবিনস ও চীফ পিপল অফিসার ফ্রান কাটসোডাস ২২ মে কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সপ্তাহে এক দিন ডে অফ ঘোষণা করেন। ২৮ আগস্ট থেকে কোম্পানিটি আবার একই ধরনের আরেকটি ডে অফ ঘোষণা করে।

৯ নম্বর স্থান পাওয়া জার্মান কোম্পানি সিমেন্স জুলাই মাসেই কর্মীদের স্থায়ীভাবে ওয়ার্ক ফ্রম হোম, মানে বাড়িতে থেকে অফিসের কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। ফলে কোভিডের পরে এই কোম্পানির কর্মীদের সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন অফিসে হাজির হলেই চলবে।

সিমেন্সের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জোচেন ওয়ালিশ্চ বলেন, ‘অন্যান্য কোম্পানির সহকর্মীরা চিন্তাই করতে পারেননি, সিমেন্সের মতো একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এভাবে সুবিধা দেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনি চাইলে বাসায় থেকেও কতটা উৎপাদনশীল ও কার্যকর হয়ে উঠতে পারেন, সেটা আমরা সবাই করোনাকালে দেখেছি।’

১৮তম স্থান পাওয়া মার্কিন কোম্পানি সিসকোর সিইও চাক রবিনস ও চীফ পিপল অফিসার ফ্রান কাটসোডাস ২২ মে কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সপ্তাহে এক দিন ডে অফ ঘোষণা করেন। ২৮ আগস্ট থেকে কোম্পানিটি আবার একই ধরনের আরেকটি ডে অফ ঘোষণা করে। এই কোম্পানি ভারতেও তার ১০ হাজার কর্মীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ২৪ ঘণ্টার হটলাইন চালু করেছে।