করোনার টিকার সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগে বিল গেটস

বিল গেটস
ছবি: রয়টার্স

২০২১ সালের মধ্যে করোনাভাইরাসের টিকা চলে আসবে এ নিয়ে পুরোপুরি আশাবাদী মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী বিল গেটস। তবে নিম্ন-আয়ের মানুষের মাঝে বিশেষত স্বল্পোন্নত দেশগুলিতে এই টিকার সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।

গণমাধ্যম সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেন, টিকা কীভাবে সবার মাঝে সরবরাহ করা হবে এটাই হবে ‘সবচেয়ে বড় প্রশ্ন’।  কীভাবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যাদের তাদের মধ্যে ভ্যাকসিনের বিতরণ করা যায় তা নিয়েই বর্তমানে কাজ করছে গেটসের ফাউন্ডেশন।

বিল গেটস বলেন, ‘এটি কেবল দাম যুদ্ধে জয়ী হওয়া ধনী দেশগুলোর কাছে যাওয়া উচিত নয়। ভ্যাকসিন সরবরাহে অব্যবস্থাপনা হলে আরও অনেক মৃত্যু হতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্যসহ ধনী দেশগুলো ইতিমধ্যে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের ২০০ কোটি ডোজের অর্ডার দিয়ে রেখেছে। যা আগামী বছরে সীমিতভাবে সরবরাহ হতে পারে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো সংস্থাগুলোর নেতৃত্বে দরিদ্র দেশগুলি যেন এই ভ্যাকসিন পেতে পারে তা নিশ্চিত করার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা চলছে।

ভ্যাকসিন না থাকলে করোনভাইরাস দুর্বল জনগোষ্ঠীগুলোকে আরও বেশি আঘাত করবে। গতকাল সোমবার বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ‘গোলকিপার্স রিপোর্ট’ এ বলা হয়, ইতিমধ্যেই দেখা গেছে কোভিড -১৯-এর কারণে বিশ্ব কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছ। বহু দেশ জুড়ে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় যে, সমৃদ্ধ দেশগুলি যদি সমানভাবে টিকা বিতরণ না করে প্রথমেই ২০০ কোটি ডোজ সংগ্রহ করে তবে কোভিড -১৯ এর কারণে অসংখ্য মানুষ মারা যেতে পারে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মহামারিটি নারী, বর্ণ ও নৃ-গোষ্ঠী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী ব্যক্তিদের ওপর বেশি প্রভাব ফেলছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ৯ সেপ্টেম্বরের তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী এখন করোনার ১৮০টি টিকা তৈরির উদ্যোগ চালু আছে।
ছবি: রয়টার্স

প্রতিবেদন প্রকাশের আগে গত শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে গেটস বলেন, মহামারিটি প্রায় প্রতিটি মাত্রায় বৈষম্য পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছে। দরিদ্র দেশগুলো ধনী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কারণ আর্থিক সংস্থান অভাব। তিনি আরও বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অনেক শ্রমিক সহজেই বাড়ি থেকে কাজ করতে পারেন না এবং সাধারণত তাদের কম বেতন দেওয়া হয়।

আগস্টের শেষ নাগাদ ১৭০টি দেশ কোভিড-১৯ টিকার 'কোভাক্স গ্লোবাল ভ্যাকসিন ফ্যাসিলিটিতে’ যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ডব্লিউএইচওর উদ্যোগে গঠিত হয়েছে ''কোভাক্স গ্লোবাল ভ্যাকসিন ফ্যাসিলিটি’। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সুইজারল্যান্ড যখন ভ্যাকসিনের বিপুল চালান কেনার জন্য নানা ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে, ঠিক তখনই কোভাক্স জোটের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এতে সবাইকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানায় ডব্লিউএইচও। এখন পর্যন্ত ১৭০টি দেশ তাতে সারা দিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ৯ সেপ্টেম্বরের তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী এখন করোনার ১৮০টি টিকা তৈরির উদ্যোগ চালু আছে। এর মধ্যে ৩৫টি টিকা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আছে। আর এর মধ্যে নয়টি টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল চলছে। অক্সফোর্ডের টিকা টিও তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল চলছে। অক্সফোর্ডের এ টিকা ইতিমধ্যে ১৪ হাজার মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে।