কাজের আশায় বসে থাকেন ফজলু মিঞা

করোনায় জীবন পাল্টে গেছে ভ্যানচালক ফজলু মিঞার। মূলত আসবাবপত্র আনা-নেওয়ার কাজ করেন তিনি। করোনার আগে দিনে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা উপার্জন ছিল তাঁর। চলমান কঠোর বিধিনিষেধে সেই উপার্জন নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়। রাজধানীর মগবাজারের মধুবাগ এলাকায় তাঁর বসবাস।

‘ঈদের সময় কী করলেন?’ জানতে চাইলে ফজলু মিঞা বলেন, ‘কী আর করুম মামা, দুই-তিন দিন পরপর কিছু কাজকর্ম জুটে, দুই বাচ্চারে দুইটা কাপড় কিনা দিছি, আর কী করুম!’ দোকানপাট বন্ধ, তাই আসবাব আনা–নেওয়ার কাজ নেই বললেই চলে। আশপাশে মানুষের নানান ফুটফরমাশ খাটছেন তিনি। চায়ের দোকানে পানি এনে দিচ্ছেন। কেউ কেউ সাহায্য-সহযোগিতা করছেন। এর মধ্যে ঋণও করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে কষ্টেসৃষ্টে দিন চলে যাচ্ছে।

আয় অনেকটা কমে যাওয়ায় খাবারে টান পড়েছে ফজলু মিঞার। ‘খাওয়াদাওয়া কেমন চলছে?’ জানতে চাইলে একটু ইতস্তত করে বলেন, ‘মামা, খাওয়াদাওয়া আর কী চলব! সপ্তাহে দুই-এক দিন মাছ-মাংস জুটে, বাকি দিন ডাইল, ভাত আর সবজি।’ অথচ তাঁর কাজ অত্যন্ত ভারী প্রকৃতির। আসবাব ও ভারী জিনিস ওঠানামা করানো তাঁর কাজ। সেই কাজ করলে ভালো খাওয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু পরিহাস, এখন তাঁকে একরকম আধপেটা খেয়ে থাকতে হচ্ছে। তবে কোরবানির ঈদের সময় কিছু মাংস পেয়েছিলেন, তা দিয়ে কয়েক দিনের আমিষের চাহিদা মিটেছে।

এই পরিস্থিতিতে অন্য কাজেরও চেষ্টা করেছিলেন ফজলু মিঞা। তাঁর ইচ্ছা ছিল, কারওয়ানবাজারে ভ্যান নিয়ে বসবেন, ট্রাক থেকে মালামাল নামাবেন। কিন্তু সেখানকার শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর দৌরাত্ম্যে আর বাজারের ভেতরে ঢুকতে পারেননি। আবার অন্য কাজ করবেন, সেই উদ্যমও ততটা নেই। ফলে একরকম বেকার হয়ে পড়েছেন তিনি।

গত বছরের মার্চ মাসে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলে পরিবারসহ গ্রামের বাড়িতে চলে যান ফজলু মিঞা। মাস দুই-এক পর তিনি ঢাকায় ফিরলেও পরিবার গ্রামেই রেখে আসেন। এখন পর্যন্ত তারা গ্রামেই আছে। তখন দুই মাসের বাড়ি ভাড়া দিতে কাজের সম্বল ভ্যানগাড়ি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন ফজলু মিঞা। এরপর আবার কিছুটা গুছিয়েও উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিল মাসে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলে ফজলু মিঞার আয় এক ধাক্কায় আবার অনেকটাই কমে যায়।

ফজলু মিঞা বলেন, গত দেড় বছরে এত খারাপ সময় আর কখনো আসেনি। দুই-তিন দিন পরপর দু-একটা কাজ মিলছে। অথচ গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে আয়–রোজগার অনেকটা স্বাভাবিকের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। তখন দৈনিক রোজগার ৪০০-৫০০ টাকার মতো দাঁড়িয়েছিল। তখন অনেক মানুষ সাহায্য-সহযোগিতাও করেছেন। এবার সে রকম সহায়তা মিলছে না বলেই জানান তিনি।

একসময় ফজলু মিঞাকে মধুবাগে খুঁজেই পাওয়া যেত না। বাহারি রঙের ভ্যান নিয়ে দিনমান ছুটে বেড়াতেন। খদ্দেররা তাঁকে খুঁজতেন। কিন্তু সেই সময় আর নেই। এখন সঙ্গীদের নিয়ে দিনের বেশির ভাগ সময় মধুবাগ পুলিশ ফাঁড়ির পাশে বসে থাকেন। উদাস ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকেন, যদি কোনো খদ্দের আসেন, সেই প্রত্যাশায়।