কুমিল্লার খাদি কাপড় ও পোশাকের দোকানে ভিড়

ঈদ উপলক্ষে ভিড় বাড়ছে কুমিল্লার খাদি দোকানগুলোতে। বরাবরের মতো এবারের ঈদের বাজারেও এসেছে খাদি কাপড়ে নানা ধরনের নকশার পোশাক। ঐতিহ্য ও চেতনার সঙ্গে মিল রেখে ফতুয়া, থ্রি-পিস, শাড়ি, জামা, পাঞ্জাবি ও বিছানার চাদরের পসরা সাজিয়েছে দোকানগুলো।
তরুণেরা ভিড়ছেন ফতুয়া ও খাদির মোটা পাঞ্জাবি কিনতে। মেয়েদের পছন্দ থ্রি-পিস। ফতুয়ার দিকে ঝুঁকছেন মেয়েরাও। দাম হাতের নাগালে থাকায় স্বজনদের খাদি পোশাক উপহারও দিচ্ছেন কেউ কেউ।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নগরের রাজগঞ্জ, মনোহরপুর, কান্দিরপাড় ও লাকসাম সড়কের বিভিন্ন দোকান ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
নগরের রাজগঞ্জ এলাকার ৬৭ বছরের পুরোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খাদিঘরের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কুমার রাহা (কান্তি রাহা) প্রথম আলোকে বলেন, কুমিল্লায় একসময় খাদিঘর, বিশুদ্ধ খদ্দর ভান্ডার, খাদি কুটিরশিল্প ও খাদি কো-অপারেটিভ নামের চারটি দোকান ছিল। এখন তা বেড়ে ১২০টিতে উন্নীত হয়েছে। দিনে দিনে খাদির ব্যবসা বাড়ছে। তরুণ প্রজন্ম খদ্দর নিয়ে চিন্তা করছে। তারাই নানা ধরনের নকশা তৈরি করে পাঞ্জাবি ও ফতুয়া তৈরি করছে। রাজধানীর ফ্যাশন হাউসগুলোও কুমিল্লা থেকে খদ্দরের পোশাক কিনে নিচ্ছে।
প্রদীপ কুমার রাহা আরও বলেন, দেশের কাপড় হিসেবে প্রতিনিয়ত খাদির সুনাম বাড়ছে। ঈদেও এ অঞ্চলের মানুষ খাদি কাপড়ই বেছে নেয়।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বাইরে সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, লন্ডন, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, ফ্রান্স, কানাডা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে খদ্দরের কাপড়ের চাহিদা রয়েছে।
মনোহরপুরের পূর্বাশা গিফট অ্যান্ড খাদি, কান্দিরপাড়ের জোসনা স্টোর, খাদি নীড়, খাদি নিলয়, খাদিনী, খাদি পরশ প্রীতি, চরকা, কুমিল্লা খদ্দর, আবরণী ও প্রসিদ্ধ খাদি দোকানে গিয়ে নানা ধরনের আধুনিক রুচিশীল পোশাক দেখা গেছে। মিহি সুতার সঙ্গে মোটা সুতার ব্র্যান্ড, কখনো খাদির সঙ্গে রকমারি সুতার চেক বুনে কাপড়ে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। ব্লক দিয়েও তৈরি করা হয়েছে সুন্দর পোশাক।
খাদিঘরে কথা হয় নগরের রেইসকোর্স এলাকার সাহিদা আক্তার, ছায়াবিতান এলাকার শাহিনূর রহমান ও কান্দিরপাড়ের ফারজানা হকের সঙ্গে। তাঁরা জানান, এবার খাদি কাপড়ের তৈরি সুন্দর বিছানার চাদর এসেছে। তাই তাঁরা কিনতে এসেছেন।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা সদর, মাধাইয়া, কলাগাঁও, বেলাশ্বর, সাইতলা, বাখরাবাদ, পিইর ও গোবিন্দপুর এবং দেবীদ্বারের বরকামতা ও ভানী গ্রামে খাদি কাপড় তৈরি হয়।
ইতিহাসবিদ গোলাম ফারুক বলেন, এসব অঞ্চলে হিন্দু পরিবারের বাসিন্দারা বংশানুক্রমে বছরের পর বছর ধরে খাদি কাপড় তৈরি করছেন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাঁরা নানা বৈচিত্র্যের খাদির বিকাশ ঘটান। খাদির পোশাক পরার মধ্য দিয়ে মানুষ একই সঙ্গে ঐতিহ্য ও চেতনাকে ধারণ করেন।
নকশা, রং ও কাপড়ভেদে খাদি পোশাকের দাম নির্ধারিত হয়। ছেলেদের ফতুয়া ৩০০-৭০০ টাকা, মেয়েদের ফতুয়া ৬৫০ টাকা ও থ্রি-পিস ৪৫০-৯০০ টাকা, বিছানার চাদর ১২০০-৫৫৫০ টাকা, জামা ৩০০-৫০০ টাকা, পাঞ্জাবি ৮৫০ টাকা, শাড়ি ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। ছোট বাচ্চাদের পায়জামা পাঞ্জাবি ৫০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
পূর্বাশা গিফট অ্যান্ড খাদি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আল হেলাল বলেন, ‘কুমিল্লা শহরে আমাদের চারটি খাদির দোকান রয়েছে। সময়ের সঙ্গে মিল রেখে আমরা পোশাকে বৈচিত্র্য আনি। যে কারণে আমাদের পোশাকের গুণগত মান ভালো হয়। দামও একটু বেশি।’
কান্দিরপাড় খাদি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘ঈদে খাদির পোশাকের চাহিদা বেশি। কুমিল্লা জেলার বাইরে থেকে প্রচুর ক্রেতা এখানে আসেন। এ ব্যবসার সঙ্গে থাকতে পেরে খুশি লাগছে।’
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল প্রথম আলোকে বলেন, কুমিল্লার আদি ঐতিহ্য খদ্দর। খাদি ব্যবসাকে যাঁরা টিকিয়ে রেখেছেন, তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য প্রশাসন সব ধরনের উদ্যোগ নেবে। কুমিল্লার খাদি শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই এর কদর রয়েছে।