করোনাভাইরাস যেন মানুষকে প্রযুক্তির আরও কাছাকাছি নিয়ে গেছে। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের ব্যাংক আর্থিক সেবা দিতে নিজস্ব অ্যাপস ও ডিজিটাল সেবা চালু করছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক চালু করে এসজেআইবিএল নেট, যার মাধ্যমে ঘরে বসে মুঠোফোন বা কম্পিউটার থেকে নানা ধরনের সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এই সেবায় এক বছরে ব্যাংকটির ৬০ হাজার গ্রাহক নিবন্ধন করেছেন। আর লেনদেন হচ্ছে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা।
এসজেআইবিএল নেটে এখন ব্যাংকটির গ্রাহকেরা নিজেরাই নিবন্ধন করতে পারছেন। এ জন্য কোনো শাখায় যেতে হয় না। নিবন্ধনের পর গ্রাহক পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে নিজেই তা উদ্ধার করতে পারছেন। আবার নতুন গ্রাহক হতে যাঁরা আগ্রহী, তাঁরা ই-কেওয়াইসির মাধ্যমে হিসাব খুলতে পারছেন। নিজের হিসাবে কত টাকা জমা আছে, তা ক্লিকেই জানতে পারছেন গ্রাহকেরা। চেক বই দিয়ে কত টাকা তোলা হয়েছে, তা জানা যাচ্ছে। চাইলে আপনি কোনো চেকের লেনদেন স্থগিতও করতে পারছেন এই সেবার মাধ্যমে। যদি নতুন চেক বইয়ের প্রয়োজন হয়, তার চাহিদাও দেওয়া যাচ্ছে। এই সেবার মাধ্যমে ব্যাংকে থাকা গ্রাহকের সব হিসাবের বিস্তারিত তথ্য মিলছে। এর মধ্যে মেয়াদি আমানত কত হলো, হিসাবে কত টাকা মুনাফা যোগ হয়েছে, সবই জানা যাচ্ছে আলাদা আলাদাভাবে।
এসজেআইবিএল নেট সেবার মাধ্যমে গ্রাহক সহজেই অন্য গ্রাহকের হিসাবে টাকা স্থানান্তরের সুযোগ পাচ্ছেন। এটা যেমন শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকের হিসাবে যাচ্ছে, আবার অন্য ব্যাংকের হিসাবেও সহজে টাকা পাঠাতে পারছেন। আবার অন্য ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড বিলও দেওয়া যাচ্ছে এই সেবার মাধ্যমে। এসজেআইবিএল নেট সেবায় অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (বিইএফটিএন), রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস), ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা যাচ্ছে। এর ফলে ছোট-বড় সব ধরনের লেনদেন করা যায়। আবার মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদ ও যেকোনো মোবাইল অপারেটরে টাকা স্থানান্তর করা যাচ্ছে নিমেষেই। পাশাপাশি পরিষেবা বিলও দেওয়া যাচ্ছে।
২০১৯ সালের জুন থেকে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক আশীষ রঞ্জন ধর। তিনি পেশায় বায়িং হাউসের মার্চেন্ডাইজার ম্যানেজার। আশীষ রঞ্জন ধর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ব্যাংকে আমার বেতন হয়। গত বছর করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার থেকে আর ব্যাংকে যাই না। কাউকে টাকা পাঠাতে অ্যাপস ব্যবহার করি। পরিষেবা বিল পরিশোধ ও মোবাইল রিচার্জ করি অ্যাপসের মাধ্যমে। ব্যাংকিং সেবার প্রায় সব চাহিদা এই অ্যাপসের মাধ্যমে মিটছে।’
জানা যায়, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এসজেআইবিএল নেট সেবা চালু করে। এক বছরে গ্রাহক নিবন্ধন করেছে ৬০ হাজার ২৩৬ জন। তবে সক্রিয় গ্রাহক বেশ কম। এই সেবায় গ্রাহক আকর্ষণে ব্যাংকটি টিউশন ফি ও মোবাইল ওয়ালেট বিকাশে টাকা স্থানান্তর সুবিধা চালু করবে। পাশাপাশি চালু হবে কিউআর–ভিত্তিক রিটেইল লেনদেন ব্যবস্থা। এসজেআইবিএল নেটে এখন পর্যন্ত লেনদেন বেশি হয় অন্য ব্যাংকে টাকা স্থানান্তরে। প্রতি মাসে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা। আর নিজ ব্যাংকের অন্য হিসাবে স্থানান্তর হয় ২৮ কোটি টাকা।
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রাহকেরা যাতে সহজেই সেবা নিতে পারেন, এ জন্য এই অ্যাপস চালু করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত এই সেবার উন্নয়নে কাজ চলছে।’
বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের মালিকানায় পারিবারিক আধিপত্য নেই। একাধিক ব্যবসায়ী গ্রুপ রয়েছে ব্যাংকটির মালিকানায়। আর পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে রয়েছেন সাবেক দুজন ব্যাংকার।