খাওয়ার লবণ উৎপাদন বন্ধ হওয়ার দশা

আয়োডিন সংকটে লবণ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
প্রথম আলো

দেড় মাসেও স্বাভাবিক হয়নি আয়োডিন সরবরাহ; বরং সংকট বেড়েছে। এত দিন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) থেকে অল্প অল্প করে আয়োডিন পেলেও এখন বাইরে থেকে চড়া দামে তা কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। তাঁদের আশঙ্কা, এভাবে আর কয়েক দিন চললে দেশে আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এ অবস্থায় আশার কথা শুনিয়েছেন বিসিকের চেয়ারম্যান। তিনি জানান, আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে দেশে নতুন আয়োডিন আমদানি করা হবে। সেই পর্যন্ত তাদের কাছে থাকা মজুত ও স্থানীয় বাজার থেকে আয়োডিন নিয়ে লবণ কারখানার মালিকেরা উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারবেন।

লবণে পটাশিয়াম আয়োডাইড বা আয়োডিন ব্যবহার করে তা খাওয়ার উপযোগী করা হয়। কিন্তু দেশে আয়োডিন সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। এ জন্য ১৯৮৯ সাল থেকে একটি প্রকল্পের আওতায় আয়োডিন আমদানি ও সরবরাহের কাজ করে আসছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বিসিক।

প্রায় দেড় মাস ধরে দেশে আয়োডিনের তীব্র সংকট চলছে। এ নিয়ে গত ১৭ মার্চ প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সে সময় বিসিকের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, সাত দিনের মধ্যে আয়োডিন আমদানির ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু তারপর ২১ দিন পার হলেও এখনো সংস্থাটি আয়োডিন আমদানি করতে পারেনি।
ব্যবসায়ীরা জানান, এত দিন বিসিক তাঁদের অল্প অল্প করে আয়োডিন দিয়ে আসছিল। কিন্তু সপ্তাহখানেক ধরে সেটিও সবাইকে দিতে পারছে না। ফলে রাজধানীর মিটফোর্ডের স্থানীয় রাসায়নিকের বাজার বা কালোবাজারিদের মাধ্যমে কয়েকগুণ বেশি দামে তাঁদের আয়োডিন কিনতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে মোল্লা সল্টের মহাব্যবস্থাপক মান্নান মোল্লা বলেন, ‘বিসিক আমাদের আয়োডিন দিতে পারেনি। তারা (বিসিক) বলেছে, আয়োডিন কিনতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে। আপাতত বাইরে থেকে কিনে কাজ চালাতে। পরে তৃতীয় পক্ষ থেকে আয়োডিন কিনেছি আমরা, যা দিয়ে আগামী তিন-চার দিন চলবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর একটি লবণ কোম্পানির এক পদস্থ কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন চোরাকারবারির কাছ থেকে তাঁরা তিন গুণ বেশি দামে এক সপ্তাহের জন্য প্রয়োজনীয় আয়োডিন কিনেছেন। তিনি আরও বলেন, চোরাকারবারিদের উৎসাহিত করতেই সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লোকেরা এ রকম কাজ করেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
এদিকে আয়োডিনের বিষয়ে বিসিক কোনো পরিষ্কার তথ্য দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ অনেক ব্যবসায়ীর। কনফিডেন্স সল্টের নির্বাহী পরিচালক মারুফ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিসিক এক সপ্তাহ আগে আমাদের পাঁচ কেজির মতো আয়োডিন দিয়েছে। এটা দিয়ে পাঁচ-ছয় দিন হয়তো চলবে। কিন্তু আমাদের প্রয়োজন আরও বেশি। তারা এ নিয়ে কোনো পরিষ্কার তথ্যও আমাদের দিচ্ছে না। অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, তাতে এখন লবণ উৎপাদন বন্ধ হওয়ার দশা তৈরি হয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক লবণ কোম্পানির চেয়ারম্যান বলেন, আয়োডিন না পেয়ে কিছু মিল মালিক ইতিমধ্যে আয়োডিন ছাড়াই লবণ বাজারজাত শুরু করেছেন। অনেকে পুরান ঢাকার মিটফোর্ডের রাসায়নিকের বাজার থেকে বেশি দামে আয়োডিন কিনছেন। আবার অনেকে আয়োডিন ছাড়াই লবণ বাজারে ছাড়ছেন।
আয়োডিন সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিকের চেয়ারম্যান মুহ. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘দ্রুততম সময়ে আয়োডিন আমদানির বিষয়ে কাজ চলছে। ৬০ মেট্রিক টন আয়োডিন আমদানির জন্য গতকাল (বুধবার) সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (আজ) থেকে ক্রয়ের বিষয়ে কাজ শুরু হবে। আশা করছি, আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিন আমদানি করা যাবে।’

আমদানির আগ পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা কীভাবে চলবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মুহ. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে কিছু মজুত তো আছে। এ ছাড়া আমার জানামতে, মিলারদের কাছেও আয়োডিন মজুত আছে। সব মিলিয়ে আশা করছি, আমদানির আগে পর্যন্ত সবার কাজ চলে যাবে।’