খামারে জমেছে পশু বেচাকেনা

করোনাকালে কোরবানির হাট না বসলে, কিংবা তা এড়াতে অনেকেই বিকল্প পথে হাঁটছেন। তাঁরা খামার থেকে কোরবানির পশু কিনছেন।

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে অনেকেই আগেভাগে খামার থেকে কোরবানির পশু কিনে রাখছেন। রাজধানীর বছিলায় মেঘডুবি খামারের সাম্প্রতিক ছবি।
মাকসুদা আজীজ

রাজধানীতে সাধারণত ঈদুল আজহার চার–পাঁচ দিন আগে থেকে কোরবানির হাটে পশু কেনাবেচা জমে ওঠে। কিন্তু এবার এখনো ঈদের ১৭/১৮ দিন বাকি থাকলেও করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় কোরবানির হাট বসা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যে কারণে কেউ কেউ বিকল্প পথে হাঁটতে শুরু করেছেন। তাঁরা কোরবানির হাট বসা পর্যন্ত অপেক্ষা না করে খামার থেকেই কোরবানির পশু কিনে রাখছেন।

বাংলাদেশ ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় ইতিমধ্যে ৫০ হাজারের বেশি কোরবানির পশু বিক্রি হয়ে গেছে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।

ঢাকার ফকিরেরপুলের বাসিন্দা আসজাদ রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গত সোমবার মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকার একটি খামার থেকে কোরবানির পশু কিনেছেন। এই প্রথম তিনি খামার থেকে গরু কিনলেন। মূলত করোনা পরিস্থিতিতে হাটে যাওয়া এড়াতেই ঈদের তিন সপ্তাহ আগে তিনি বিকল্প পথে হাঁটলেন।

করোনা সংক্রমণ রোধে ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন বা বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। লকডাউনের সময় কঠোরভাবে দোকানপাট, বিপণিবিতান, পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র ইত্যাদি বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে কোরবানির হাট নিয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারা দেশে জেলায় জেলায় এখন লকডাউন দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশের একাধিক জেলা প্রশাসক তাঁদের আওতাধীন এলাকার হাটবাজারে গরু বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২৪ জুন আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক করেছিলেন। এতে ঈদের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে তিনি অবশ্য সীমিত পরিসরে হাট বসানোর কথা জানান। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেক ক্রেতা খামার থেকেই গরু কেনাকেই সঠিক সিদ্ধান্ত মনে করছেন।

রাশেদুর রহমান নামের এক ব্যাংকার জানান, তিনি গত বৃহস্পতিবার সাভারের একটি খামার থেকে কোরবানির পশু কিনেছন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছরের সীমিত আকারের হাটের অভিজ্ঞতা খুব ভালো নয়। প্রথমে সীমিত বলা হলেও সেখানে পরে মানুষের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। এমনকি সামাজিক দূরত্ব মানার প্রবণতাও দেখিনি। তাই এ রকম পরিস্থিতি এড়াতে আমরা এ বছর আগেভাগেই খামার থেকে পশু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

ক্রেতা–বিক্রেতা দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগেভাগে বেচাকেনা হওয়া গরুগুলো ঈদ পর্যন্ত খামারেই থাকবে। ক্রেতার চাহিদার ভিত্তিতে ঈদের আগে কোরবানির পশু নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে খামারেই পশু কোরবানি করে ক্রেতার কাছে মাংস পাঠানো হবে। উভয় ক্ষেত্রেই ক্রেতাকে আলাদা খরচ বহন করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় কোরবানির ঝক্কি অনেক কম হয় বলে জানান কোনো কোনো ক্রেতা। সব মিলিয়ে খামারে পশুর আগাম কেনাবেচার প্রবণতা বাড়ছে।

ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ছোট–বড় মিলিয়ে প্রায় আট লাখ খামার আছে। এর মধ্যে ঢাকা শহর ও আশপাশে খামারের সংখ্যা ৮ হাজার। এ বছর এসব খামারে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোরবানিযোগ্য গরু আছে, যার প্রায় অর্ধেকই ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।

মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকার খামার মেঘডুবি অ্যাগ্রো ২০১৪ সাল থেকে কোরবানির পশু বিক্রি করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘প্রতিবছর কোরবানির আগে খামার থেকে কিছু পশু বিক্রি হতো, বাকিগুলো যেত হাটে। গত বছর খামারে ২০ শতাংশ পশু বিক্রি হয়ে যায়। এ বছর কোরবানির জন্য এক হাজার পশু প্রস্তুত করেছিলাম। তার ৫০ শতাংশের মতো ইতিমধ্যে খামারেই বিক্রি হয়ে গেছে।’

এদিকে খামার থেকে পশু কেনা জনপ্রিয় হওয়ায় চলতি বছরে নতুন অনেক উদ্যোক্তা এই ব্যবসায়ে এসেছেন। তেমনই একজন হলেন

খুলনার কাজী সাজেদুর রহমান। তিনি এ বছর ২৫টি গরু নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন, যার মধ্যে ১৫টি ইতিমধ্যে ঢাকা ও খুলনার বিভিন্ন ক্রেতা কিনে নিয়েছেন।

খামার থেকে সরাসরি গরু কেনাকে ইতিবাচক মনে করছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ এমরান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আগাম গরু কেনার বিষয়টি ক্রেতা ও বিক্রেতার পারস্পরিক বিশ্বাসের ওপরই নির্ভর করে। তবে কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা দিয়ে যদি বিক্রির প্রক্রিয়াটা নজরদারি করা যেত, তাহলে ক্রেতা–বিক্রেতা উভয় পক্ষই লাভবান হতো।