খুঁজে নিন সঠিক তহবিল ব্যবস্থাপক

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য ওপেন-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড একটি সুলভ বিকল্প। এর সুবিধাগুলো হলো সহজ তরলতা (যেকোনো সময় বিনিয়োগ উত্তোলনের সুযোগ) থেকে শুরু করে পেশাদার তহবিল ব্যবস্থাপকদের (ফান্ড ম্যানেজার) পরামর্শ, নিশ্চিত আইপিও বরাদ্দ, স্বল্প প্রাথমিক বিনিয়োগ এবং কর ছাড়।

তবে এ ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো সঠিক তহবিল ব্যবস্থাপক খুঁজে বের করা। দেশে বর্তমানে প্রায় ২০টি সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি পরিচালিত ৫৩টি ওপেন-এন্ড ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। এ অবস্থায় সঠিকটি বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত অনেকের পক্ষেই কঠিন হতে পারে।

মনে রাখতে হবে, বিনিয়োগকারীর যেকোনো সিদ্ধান্তে আসার আগে পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা করা দরকার। কেননা ভুল ফান্ড ম্যানেজার নির্বাচন করায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আমার পরামর্শ হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা যেন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিভিন্ন বিষয় দেখে নেয়। যেমন—

১. মালিকদের সুনাম

প্রথমই হচ্ছে সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির মালিকদের ব্যাকগ্রাউন্ড। তহবিল ব্যবস্থাপনা কোম্পানির মালিকের সুনামের যাচাই–বাছাই অনেক ভুল এড়াতে সহায়তা করতে পারে। একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করার জন্য ব্যবস্থাপক বা ম্যানেজমেন্ট দলের দক্ষতা দেখতে হবে। অতীত অভিজ্ঞতা, খ্যাতি, কর্মীদের টার্নওভার বিবেচনা করতে হবে।

২. বিনিয়োগের দর্শন ও পত্রকোষ (পোর্টফোলিও) গঠন

বিবেচনা করার দ্বিতীয় বিষয়টি হলো বিনিয়োগ দর্শন এবং প্রক্রিয়া। সাধারণ কথায়, তহবিল ব্যবস্থাপক কী কী শেয়ার কিনবে এবং বিক্রি করবে, তা কীভাবে সিদ্ধান্ত নেয়? বেশির ভাগ তহবিল ব্যবস্থাপক তাদের সিদ্ধান্ত গবেষণাভিত্তিক বলে দাবি করবে; যদিও তাদের কাজ প্রায়ই বিপরীত হয়। এ কারণেই পত্রকোষের (পোর্টফোলিও) স্টকগুলো পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ, যা তহবিল ব্যবস্থাপকেরা তিন মাস পরপর প্রকাশ করে থাকে। যদি পত্রকোষের স্টকগুলো স্বভাবে ফাটকামূলক বা স্পেকিউলেটিভ হয়, তবে ‘ভ্যালু’ভিত্তিক ব্যবস্থাপক হওয়ার দাবিটি ভুল।

৩. অতীতের কার্যক্রম

মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে প্রতি সপ্তাহে তাদের নেট সম্পদমূল্য বা নেভ প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। বিভিন্ন ফান্ডের রিটার্নের তুলনা করলে এ নিয়ে ভালো ধারণা পাওয়া যায়। এটি উল্লেখযোগ্য যে স্বল্পমেয়াদি রিটার্নের তুলনা কখনোই অর্থবহ হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, কিছু ফান্ড কেবল স্বল্পমেয়াদি অনুমান থেকে উচ্চ হারে রিটার্ন করে। 

৪. তহবিল গঠন ব্যয়

পরীক্ষা করার চতুর্থ বিষয়টি হলো তহবিল গঠন ব্যয়। আইন অনুসারে, তহবিল ব্যবস্থাপক তহবিলের আকারের ৫ শতাংশ পর্যন্ত গঠন ব্যয় হিসাবে ব্যয় করতে পারে, যা মূলত বিনিয়োগকারীদের জন্য ধার্য করা হয়। বিচক্ষণ এবং ভালো ব্যবস্থাপকেরা এটিকে অত্যন্ত কম রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু অসাধু ব্যবস্থাপকেরা ৫ শতাংশে চলে যায়।

৫. তহবিল ব্যয়

গঠনের ব্যয় ছাড়াও অন্যান্য ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে ম্যানেজমেন্ট ফি (এটি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি দ্বারা নির্ধারিত), ট্রাস্টি ফি, কাস্টোডিয়ান ফি এবং ব্রোকারেজ কমিশন ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে ব্রোকারেজ কমিশন এমন একটি বিষয়, যেখানে নজর দেওয়া যায়। সম্পদ ব্যবস্থাপক ইউনিটধারীদের পক্ষে দর-কষাকষি করতে পারেন। কমিশন যত কম হবে, বিনিয়োগকারীদের পক্ষে তা ততই ভালো। 

আসিফ খান: পরিচালক, ইডিজিই এএমসি লিমিটেড