গুগল-ফেসবুকের ভ্যাট আদায় নিয়ে জটিলতা

গুগল, ইউটিউব, ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কর আদায়ে নানা জটিলতা আছে। বিদেশ থেকে পরিচালিত এসব প্রতিষ্ঠানের এ দেশে কোনো কার্যালয় নেই, ঠিকানাও নেই। তাই এসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের ব্যবসায় শনাক্তকরণ নম্বর (বিআইএন) নিতে পারছে না। আবার এসব অনাবাসী প্রতিষ্ঠান কীভাবে ভ্যাটের টাকা জমা দেবে, তা–ও ঠিক করতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এমনকি যাঁরা গুগল, ফেসবুক পেজে বিজ্ঞাপন দেন কিংবা ওই সব প্রতিষ্ঠানের ইলেকট্রনিক সেবা কেনেন, বিদ্যমান আইন মেনে তাঁদের ভ্যাট রসিদ দেওয়াও সম্ভব নয়।

চলতি অর্থবছর থেকে চালু হওয়া নতুন ভ্যাট আইনের ১৭ ধারা অনুযায়ী ইলেকট্রনিক সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়। কিন্তু কীভাবে এই ভ্যাট আদায় করা হবে, তা নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে এই সমস্যার সমাধানে এনবিআর এবং এসব অনাবাসী প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মধ্যে ধারাবাহিক আলোচনা চলছে।

গত ২৬ জুন এনবিআর এক আলাদা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ফেসবুক, গুগল, মেসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো অনাবাসী প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ইলেকট্রনিক সেবাকে ভ্যাটের আওতায় আনার দিকনির্দেশনা জারি করে। এখানে ইলেকট্রনিক সেবা বলতে বোঝানো হয়েছে বিজ্ঞাপন, ভয়েস, বার্তাসহ এ ধরনের সেবা।

গুগল, ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনাবাসী প্রতিষ্ঠান তাদের পেজে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে, বিভিন্ন সেবা বিক্রি করে। পুরো ব্যবসাটি অনলাইনভিত্তিক। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো কার্যালয় বাংলাদেশে নেই। তারা মূলত অনলাইনের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন নেয়, প্রচার করে। এর পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের বিলও নেয় ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে। এদেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন দিলে বিল পরিশোধের সময় ভ্যাটের টাকা কেটে রাখে। কিন্তু ব্যক্তিপর্যায়ে বিজ্ঞাপনের বিলের ভ্যাট কেটে রাখা যায় না। একইভাবে অন্য অনলাইন সেবার ক্ষেত্রে একই ধরনের সমস্যা হয়। আবার কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান যদি বাংলাদেশের ভেতরে (টেরিটরির ভেতরে) ফেসবুকের মাধ্যমে তার পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করে, তাহলে ওই বিজ্ঞাপন প্রচারের বিনিময়ে প্রাপ্ত অর্থের ওপরও ভ্যাট আদায় করা বিদ্যমান আইনি ব্যবস্থায় সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ মুসফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এসব অনাবাসী খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দিতে আগ্রহী। তাই তারা যাতে ভ্যাট দিতে পারে, সে জন্য নীতিমালায় সংশোধন আনা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এনবিআর কাজ করছে। শিগগিরই এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

বর্তমানে এনবিআরের সফটওয়্যার থেকে দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত এসব অনাবাসী প্রতিষ্ঠানের ভ্যাটের ব্যবসায় নিবন্ধন (বিআইএন) নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিআইএন নেওয়ার জন্য অনলাইন ফরমে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা, জেলা, থানা, পোস্টাল কোড, প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া বাধ্যতামূলক। বিআইএন ফরমে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও চাওয়া হয়েছে। এসব তথ্য না দিলে নিবন্ধন পাওয়া যাবে না। কিন্তু ফেসবুক, গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানের কোনো কার্যালয় এ দেশে নেই, ব্যাংক হিসাবও নেই।

ভ্যাট দিলে ভ্যাট চালান দিতে হবে। কিন্তু ফেসবুক-গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান, যারা সারা বিশ্বে একই পদ্ধতিতে একই সফটওয়্যারের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক সেবা দিয়ে থাকে, তাদের পক্ষে এনবিআরের নির্দিষ্ট ভ্যাট চালান দেওয়া সম্ভব নয়। আবার ভ্যাট চালানের বিকল্প হিসেবে মুঠোফোন বার্তা বা ই-মেইলও বিদ্যমান আইনের কারণে এনবিআরের পক্ষে গ্রহণ সম্ভব নয়।

এদিকে গত মাসে অনাবাসী প্রতিষ্ঠানের জন্য ভ্যাট এজেন্ট নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে এনবিআর। এনবিআরের শর্ত অনুযায়ী ভ্যাট এজেন্ট হতে হবে একজন ব্যক্তিকে। ভ্যাট এজেন্টরা ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ভ্যাট পরিশোধসহ যাবতীয় কার্যক্রম দেখভাল করবে। এ নিয়েও এসব অনাবাসী প্রতিষ্ঠানের আপত্তি আছে। গুগলসহ এ ধরনের অনাবাসী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বহুজাতিক পরামর্শক সেবা প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস বাংলাদেশ। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠান পুরো বিষয়টি নিয়ে এনবিআরের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এসব বিদেশি প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির মাধ্যমে ভ্যাট এজেন্টের কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এনবিআর এখন প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট এজেন্ট নিয়োগ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে।

প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস বাংলাদেশের ম্যানেজিং পার্টনার মামুন রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা করছি। অনাবাসী বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভ্যাট দিতে চায়, এ জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভ্যাট এজেন্ট নিয়োগ দিতে চায়। এনবিআরও এখন নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনতে আগ্রহী।’