চীনের নেতৃত্বে এশিয়ায় বাণিজ্য অভ্যুত্থান

বড়সড় এক বাণিজ্য চুক্তি হতে যাচ্ছে এশিয়ায়। আসিয়ানের চলমান শীর্ষ বৈঠকের শেষ দিনে ১৫ নভেম্বর এই বাণিজ্য চুক্তি সই হবে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই চুক্তি বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থার ভারসাম্য বদলে দিতে পারে। বিবিসি বাংলার দৃষ্টিতে, এটি ‘বিশ্ব বাণিজ্যে চীনের ক্যু’।

রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) বা আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি শীর্ষক এই বাণিজ্য চুক্তির ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক পরিসর চমকে দেওয়ার মতোই—বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা ও ২৯ শতাংশ জিডিপি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়েও এটি বড়। ফলে এটি হবে বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল। বিবিসি সূত্রে এই সংবাদ পাওয়া গেছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনস বা আসিয়ানের ১০টি দেশ, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এই চুক্তিতে সই করছে। প্রাথমিকভাবে ভারতও এই চুক্তির আলোচনা প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল। কিন্তু চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হলে শুল্ক কমাতে হবে এবং তাতে স্থানীয় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে—এই আশঙ্কায় ভারত গত বছর এই চুক্তির আলোচনা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়।

প্রাথমিকভাবে ভারতও এই চুক্তির আলোচনা প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল। কিন্তু চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হলে শুল্ক কমাতে হবে এবং তাতে স্থানীয় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে—এই আশঙ্কায় ভারত গত বছর এই চুক্তির আলোচনা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়।

আগামী ২০ বছরে নিজেদের মধ্যকার আমদানিতে বিভিন্ন প্রকারের শুল্ক উঠিয়ে দেওয়া এই আরসিইপির লক্ষ্য। এ চাড়া বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ, টেলিযোগাযোগ, আর্থিক সেবা, ই-কমার্স ও অন্যান্য পেশাদারি সেবাও এর আওতাভুক্ত হবে।

কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার রুলস অব অরিজিন বিধি এই চুক্তিতে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। চুক্তিভুক্ত দেশগুলোর অনেকেই ইতিমধ্যে নিজেদের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করে রেখেছে। কিন্তু এর আবার নানা সীমাবদ্ধতা আছে। আরসিইপির সাপেক্ষে বিদ্যমান এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিগুলো ব্যবহার করা জটিল হয়ে উঠতে পারে, যেমন ইন্দোনেশিয়ায় তৈরি কোনো পণ্যে অস্ট্রেলীয় যন্ত্রাংশ থাকলে আসিয়ান মুক্ত বাণিজ্য এলাকায় তা শুল্কের মুখে পড়তে পারে।

অন্যদিকে আরসিইপির অধীনে যেকোনো সদস্য দেশের যন্ত্রাংশ সমমর্যাদা পাবে। এতে সদস্য দেশগুলোর কোম্পানিগুলো অঞ্চলের মধ্যে সরবরাহকারী খুঁজতে অনুপ্রাণিত হতে পারে।

আরও পড়ুন


দীর্ঘদিন চীনের তৎপরতার ফল হিসেবে এই চুক্তি হতে যাচ্ছে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তির বিকল্প হিসেবে চীন এই চুক্তির দৌড়ঝাঁপ করেছে, যদিও ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭ সালে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়।

তবে বিশ্বের এই বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের রাজনৈতিক রসায়নটা খুব ভালো নয়। চীন ও জাপানের বিবাদ দীর্ঘদিনের—ঐতিহাসিক। অন্যদিকে সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও বিবাদে জড়িয়েছে চীন। এমনকি ভারত ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব খর্ব করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত অনানুষ্ঠানিক কৌশলগত ফোরাম গঠন করেছে। ফলে আরসিইপির এই গঠন বৈচিত্র্য বিশ্লেষকদের মনে যথেষ্ট কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে।

অন্যদিকে মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয় এবং জো বাইডেন বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে নীতি ও কৌশলগত কী পরিবর্তন আসে, তার দিকেও তাকিয়ে থাকবেন বিশ্লেষকেরা।