ছয় ব্যাংক মিলে ৪৩০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে

দেশে প্রথমবারের মতো বসুন্ধরা গ্রুপ সোনা পরিশোধনাগার কারখানা নির্মাণের অনুমতি পেয়েছে। বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেড নামের এই পরিশোধনাগার নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে সরকারি-বেসরকারি ছয় ব্যাংক। বাকি ১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা বসুন্ধরা গ্রুপের নিজস্ব।

বসুন্ধরাকে পরিশোধনাগার নির্মাণে ঋণ দিতে ইতিমধ্যে ছয় ব্যাংক মিলে সিন্ডিকেট বা জোট করেছে। এই সিন্ডিকেট ঋণের নেতৃত্বে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক। তবে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিচ্ছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ও জনতা ব্যাংক। সিন্ডিকেট বা ঋণজোটের অপর তিন ব্যাংক হলো সরকারি খাতের রূপালী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) এবং বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংক।

বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হলেন সায়েম সোবহান। তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সভাপতি হয়েছেন।
জানা গেছে, ৩০০ ফুট ঢাকা-পূর্বাচল হাইওয়ের পাশে ভাটারা থানার জোয়ার সাহারা মৌজায় ৪৭০ শতক জমিতে গড়ে তোলা হবে বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেড। সেখানে ভূমি উন্নয়ন শেষে এখন নির্মাণকাজ চলছে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি প্রকল্প বাস্তবায়নে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ওয়ার্ল্ডএরা করপোরেশনের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে। চুক্তির আর্থিক মূল্য ২ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ডান অ্যান্ড ব্র্যাডশিটের তথ্য অনুযায়ী, ওয়ার্ল্ডএরা করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা।

চুক্তি অনুযায়ী, ওয়ার্ল্ডএরা করপোরেশন বসুন্ধরার সোনা পরিশোধনাগারটির যন্ত্রপাতি ক্রয়, প্যাকিং চার্জ, তদারকি মাশুল, আমদানিতে পরিবহন ব্যয়, কন্ট্রাক্টর ফি, স্থাপন ও কমিশনিং মাশুলসহ বিভিন্ন ধরনের মাশুল খরচ দেবে। প্রকল্পের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে সোনা পরিশোধনাগারটিতে প্রতিদিন ২০০ কেজি গোল্ডবার বা সোনার বার, ১৫০ কেজি গোল্ড জুয়েলারি, ৭০ কেজি সিলভার বা রৌপ্য উৎপাদিত হবে। এই প্রকল্পে জমির মূল্য ধরা হয়েছে ৮৫৫ কোটি টাকা। আর সোনা পরিশোধনাগারের যন্ত্রের মূল্য ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্রে জানা গেছে, বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেডকে ৯৫০ কোটি টাকা দেবে ঋণ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে থাকা অগ্রণী ব্যাংক। আর সোনালী ও জনতা ব্যাংক দুটিই এক হাজার কোটি টাকা করে ঋণ দেবে। তিন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ইতিমধ্যে এই ঋণের বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি ও নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। এ ছাড়া রূপালী ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকা, বিডিবিএল ২৫০ কোটি টাকা ও এক্সিম ব্যাংক ৬০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে। ঋণের মেয়াদ ৭ বছর, সুদের হার ৯ শতাংশ। প্রকল্পটিতে প্রথম দুই বছর ঋণের কিস্তি পরিশোধে বিরতি পাবে বসুন্ধরা।

জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুছ ছালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছয় ব্যাংক মিলে দেশের প্রথম সোনা পরিশোধনাগারে অর্থায়ন করা হচ্ছে। আমরা এক হাজার কোটি টাকা অর্থায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।’
ঋণ দিতে জোটবদ্ধ হওয়া ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশে সোনার ব্যবসার নতুন দ্বার খুলে যাবে। পাশাপাশি অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তবে বড় অঙ্কের ঋণে বড় ঝুঁকি থাকে। তবু ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে এগিয়ে এসেছে।

ঋণের বিষয়ে জানতে এক্সিম ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। পরে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকে এই ঋণ প্রস্তাব এসেছে। এখনো পর্ষদে উত্থাপিত হয়নি। পর্ষদে স্মারক উপস্থাপিত হলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’

বসুন্ধরার এই কারখানা চালু হলে সোনা পরিশোধনের যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। অপরিশোধিত ও আংশিক পরিশোধিত সোনা আমদানির পর তা কারখানাটিতে পরিশোধনের মাধ্যমে সোনার বার ও কয়েন উৎপাদন করা হবে। সেগুলো রপ্তানির পাশাপাশি দেশেও অলংকার তৈরিতে ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি রপ্তানিও হবে।
দেশে অপরিশোধিত ও আংশিক পরিশোধিত সোনা আমদানির সুযোগ দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত জুন মাসে স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ সংশোধন করে। সেই আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক সোনা পরিশোধনের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে সোনা আমদানির অনুমতি নেবে, সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

সংশোধিত স্বর্ণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিশ্বে অলংকার উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বেলজিয়ামসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং ভারত, চীন অন্যতম। ২০১৯ সালে বিশ্বে মেশিন ও হাতে তৈরি সোনার অলংকারের বাজার ছিল ২২ হাজার ৯৩০ কোটি মার্কিন ডলারের। ২০২৫ সালে বাজারের আকার বেড়ে ২৯ হাজার ১৭০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে।