ছয় মাসেও চালু হয়নি যশোরের ফুল মার্কেট

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামে আধুনিক সুযোগ–সুবিধাসংবলিত ফুল মার্কেট
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামে আধুনিক সুযোগ–সুবিধাসংবলিত একটি ফুল মার্কেট নির্মাণের পর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও সেটি চালু করা হয়নি। একই উপজেলার গদখালী এলাকায় উৎপাদিত ফুল এবং ফুলের বীজ বিপণন ও সংরক্ষণের জন্য এক একর জমির ওপর সাড়ে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল বিশিষ্ট এই ফুল মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। ফুলচাষিরা আগামী চৈত্র মাসের মধ্যেই ফুল মার্কেটটি চালু করার দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, ফুল মার্কেটের জমির মালিকানা নিয়ে যেমন জটিলতা রয়েছে, তেমনি মার্কেটের আয়-ব্যয় ব্যবস্থাপনা নীতিমালাও নেই। যে কারণে জেলা প্রশাসক মার্কেটটি বুঝে নিতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে এবং স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে এই মার্কেট নির্মাণ করা হয়।

স্থানীয় ফুলচাষিরা জানান, গদখালী এলাকায় বীজ সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় তাঁরা প্রতিবছরই বিপাকে পড়েন। যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলার আলুর হিমাগারে নিয়ে গ্লাডিওলাস ফুলের বীজ সংরক্ষণ করতে হয়। ফলে পরিবহন ও হিমাগার ভাড়া বাবদ কৃষকদের বাড়তি অর্থ খরচ করতে হয়। আবার অনেক সময় হিমাগারে জায়গা পাওয়া যায় না। তখন ফুলের বীজ নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য আগামী চৈত্র (মার্চ-এপ্রিল) মাসের মাধ্যেই গ্লাডিওলাস ফুলের বীজ সংরক্ষণের সুবিধার্থে মার্কেটটি চালুর দাবি জানান তাঁরা।

এলজিইডির ঝিকরগাছা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩ মে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামে ফুল এবং ফুলের বীজ বিপণন, সংরক্ষণ, গ্রেডিং, প্যাকেজিং, কুলিং চেম্বার ও কোল্ড স্টোরেজের সুবিধাসহ চারতলাবিশিষ্ট আধুনিক ফুল মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ৩৫ হাজার ৬৬০ বর্গফুট আয়তনের এই মার্কেট তৈরির ব্যয় ধরা হয় ২৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। বিদায়ী ২০২১ সালের জুন মাসে মার্কেটটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। মার্কেট ভবনের সামনে ৩৯টি দোকানঘর গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে ফুল চাষে নিয়োজিত নারী–পুরুষ ও ব্যবসায়ীরা বসে খুচরা দামে ফুল বিক্রি করার সুযোগ পাবেন।

গদখালী ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেক সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, গদখালীতে স্বল্প খরচে ফুলের বীজ সংরক্ষণের জন্য হিমাগারসহ আধুনিক ফুল বাজার স্থাপন করা। ইউএসএআইডির আর্থিক সহায়তায় পানিসারা গ্রামে ফুলের বাজার স্থাপন করা হলেও চালু করা হচ্ছে না। তাই দূরদূরান্তে অবস্থিত আলুর হিমাগারে নিয়ে ফুলের বীজ সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আগামী চৈত্র মাসের মধ্যেই এই মার্কেট চালু করা হলে ফুলচাষিরা খুব উপকৃত হবেন।’

এ সম্পর্কে এলজিইডির ঝিকরগাছা উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী শ্যামল কুমার বসু বলেন, ‘আধুনিক ফুল মার্কেট প্রকল্পের কাজ ২০২১ সালের ৩০ জুন শেষ হয়েছে। প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসন, বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি (বিএফএস) ও খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সমন্বয়ের মাধ্যমে মার্কেট পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবেন।’

জানতে চাইলে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘ফুল মার্কেট নির্মাণের লক্ষ্যে বিএফএসের পক্ষে এর সভাপতি আবদুর রহিম পানিসারা গ্রামে সম্পূর্ণ নিষ্কণ্টক হিসেবে এক একর জমি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে জেলা প্রশাসকের নামে রেজিস্টার্ড দানপত্র করে দেন। কিন্তু ওই জমিতে বিএফএসের শর্তহীন মালিকানা নেই। অর্থাৎ জমির মালিকানাসংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। আধুনিক ফুল বাজারটির পরিচালনায় আয়-ব্যয়সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নীতিমালাও নেই। সে জন্য ফুল মার্কেটটি প্রস্তুত থাকলেও দখল হস্তান্তর কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে মার্কেটটি জমিদাতাদের প্রভাবমুক্ত হওয়া জরুরি।’

তমিজুল ইসলাম খান এ ব্যাপারে গত বছরের ১১ অক্টোবর কৃষি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবকে চিঠি দিয়েছেন। এতে তিনি জমিদাতা ও বিএফএসের মধ্যেকার চুক্তির কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএফএসের সভাপতি আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে ধাপে ধাপে আধুনিক ফুল মার্কেট নির্মাণের কাজ এগিয়ে গেছে। এর আগের জেলা প্রশাসকদের মতামতের ভিত্তিতেই সব চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে। তারপরও বর্তমান জেলা প্রশাসকের আপত্তি থাকায় শর্ত শিথিল করা হবে।’