জরিমানায় অর্থ পাচার কমবে কি

আমদানি মূল্য বেশি দেখিয়ে ও রপ্তানি মূল্য কম দেখিয়ে বাণিজ্যের আড়ালে দেশ থেকে টাকা পাচার হয়। বিদেশে টাকা পাচার ঠেকাতে বাজেটে জরিমানা আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। 

এখন প্রশ্ন উঠেছে, টাকা পাচার রোধে সরকার কি আসলে আন্তরিক। আর টাকা পাচার প্রমাণ করার মতো বাংলাদেশে যথেষ্ট দক্ষ জনবল আছে তো? আবার কেউ কেউ বলছেন, দেশ থেকে যে অবাধে টাকা পাচার হচ্ছে, এর মাধ্যমে সরকার তা স্বীকার করে নিল। 

অর্থ পাচার রোধে জরিমানার প্রস্তাব প্রসঙ্গে বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বেশি দাম দেখিয়ে আমদানি, কম দাম দেখিয়ে রপ্তানি এবং ভুয়া বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থ পাচার ও কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের অর্থ পাচার ও কর ফাঁকির বিষয়ে সরকারের অবস্থান কঠোর। তিনি এ প্রবণতা রোধকল্পে বিদ্যমান অন্যান্য সব অধ্যাদেশের পাশাপাশি আয়কর অধ্যাদেশে নতুন ধারা সংযোজনের প্রস্তাব করেন। টাকা পাচার প্রমাণিত হলেই ৫০ শতাংশ কর আরোপ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। 

>মূল্য কমবেশি দেখিয়ে বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার ঠেকাতে ৫০ শতাংশ জরিমানার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রীর এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সরকার চাইলে এখনই টাকা পাচার বন্ধ হবে, পাচার করা টাকা ফেরতও আসবে। আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা টাকা ফেরত এল, আর কারও আসছে না কেন? তাই বড় প্রশ্ন, সরকার চায় কি না।’

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) কাজ করা এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, কারা টাকা পাচার করছে, খুব সহজেই এসব তথ্য বের করা সম্ভব। কারা টাকা পাচার করছে, তা দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ)। তাদের সঙ্গে অন্য দেশের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের চুক্তিও আছে। তাই কারা কত টাকা পাচার করল, এটা বের করা কোনো কঠিন কাজ না। 

অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানসহ সুনির্দিষ্ট বিষয়ে কাজ করে থাকে বিএফআইইউ। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিভাগ হিসেবে ২০০২ সালের জুনে যাত্রা শুরু করে বিএফআইইউ। 

অর্থ পাচার রোধে ঠিক কতটা ভূমিকা রাখতে পারছে বিএফআইইউ। এমন প্রশ্নও উঠছে ব্যাপকভাবে। জানতে চেয়েছিলাম সংস্থাটির প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসানের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী আমরা নিয়মিত ভিত্তিতে পরিদর্শন করে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন পাঠাচ্ছি। বাকি দায়িত্ব তাদের। এখন সরকার নতুন করে কোনো আইন বা ধারা যুক্ত করলে অর্থ পাচার প্রতিরোধে তা আরও কার্যকর হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) গত মার্চে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়। বর্তমান বাজারদরে (৮৫ টাকায় প্রতি ডলার) যার পরিমাণ প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এদিকে গত বছরের নভেম্বরে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (আঙ্কটাড) জানিয়েছে, বাংলাদেশে বছরে যত টাকা কর আদায় হয়, তার ৩৬ শতাংশের সমান টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায়। 

বিএফআইইউর সাবেক উপ-প্রধান মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে টাকা পাচার হয়েছে, এটা বের করাই কঠিন। আর ধরা পড়লে পাচারকারী ওই দেশ থেকে টাকা সরিয়ে অন্য দেশে নেবে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ চাইলেই এটা সম্ভব। সবাই চেয়েছে বলেই আরাফাত রহমানের টাকা ফেরত আনা গেছে। এ জন্য প্রয়োজন ঋণের টাকার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা।