‘টাকা দুর্বল হওয়ায় সোনার দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি’

এনামুল হক খান

দেশের বাজারে গত বৃহস্পতিবার সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। তাতে ভালো মানের, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার অলংকার কিনতে লাগছে ৭৪ হাজার ৮ টাকা। ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার কিছুটা দুর্বল হওয়ার যুক্তি দেখিয়ে সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে।

জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি এনামুল হক খান গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার আগে প্রতিদিন ব্যাগেজ রুলসের আওতায় ছয় হাজার থেকে আট হাজার ভরি সোনা দেশে আসত। কিন্তু করোনাকালে সেটি শূন্যের কোটায় নেমে যায়। তবে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলতে শুরু করায় বর্তমানে প্রতিদিন দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার ভরি সোনা আসছে। সরবরাহ ভালো থাকলেও শুধুমাত্র ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার দুর্বল হওয়ায় সোনার দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি আমরা।’

এনামুল হক খান বলেন, ব্যাগেজ রুলসের আওতায় সবচেয়ে বেশি সোনা আসে দুবাই, সিঙ্গাপুর ও কাতার থেকে। করোনার আগে ১ দিরহাম কিনতে ২৩ টাকা ৪০ পয়সা লাগত। বর্তমানে লাগছে ২৩ টাকা ৮০ পয়সা। ফলে দাম না বাড়ালে প্রবাসীদের কোনো মুনাফা হয় না। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার যে দাম, তাতে বর্তমানে বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল না।

জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশের বাজারে সোনার দামে ভরিতে ব্যবধান থাকত দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। করোনার সময় আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সঙ্গে সোনার সরবরাহও বন্ধ থাকায় ব্যবধান বেড়ে হয় পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা। তবে সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবধান দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় নেমে এসেছে। ভারতের দামও আমাদের কাছাকাছি।’

কয়েক মাস ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দর ঊর্ধ্বমুখী। সেই কারণে দেশের বাজারেও দফায় দফায় দাম বেড়েছে। গত ২৩ জুন সোনার দাম ভরিতে ৫ হাজার ৮২৫ টাকা, ২৪ জুলাই ২ হাজার ৯১৬ টাকা ও ৬ আগস্ট ৪ হাজার ৪৩৩ টাকা বাড়ায় জুয়েলার্স সমিতি। এরপর অবশ্য দুই দফায় কমে ৪ হাজার ৯৫৮ টাকা। বিশ্ববাজারে গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ছিল ১ হাজার ৯৪০ ডলার।

করোনা পরিস্থিতিতে জুয়েলারি ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাইলে এনামুল হক খান বলেন, বেচাবিক্রি ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। প্রায় প্রত্যেক ব্যবসায়ী সোনার অলংকার বিক্রি করে কোনোরকমে টিকে আছেন। বর্তমানে প্রতি ভরি সোনার যে দাম, তার থেকে কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা কমানো না গেলে জুয়েলার্স ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াবে না। সোনার দাম কমানো না গেলে মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়া ব্যবসা আগের অবস্থায় যাবে না।