টাকা‍ পাঠাতে সরকার দেবে হাজারে ৭ টাকা, সাধারণ মানুষ দেবে বেশি

বিকাশ, নগদ ও রকেটের মতো মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় কিছুটা কমবে। কারণ, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় উপকারভোগীদের কাছে টাকা পৌঁছাতে সরকার এমএফএসগুলোকে এত দিন যে হারে মাশুল দিয়ে আসছিল, তা প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে।

এমএফএসগুলো এত দিন ১ দশমিক ২৫ থেকে ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ হারে মাশুল পাচ্ছিল। এখন পাবে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ হারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এই হার নির্ধারণ করে গত বৃহস্পতিবার পরিপত্র জারি করেছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, এখন থেকে ক্যাশ আউট চার্জ হবে অভিন্ন এবং হাজারে ৭ টাকা। তবে সাধারণ মানুষ আগের হারেই মাশুল দেবে।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, এখন থেকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও সরকারের অন্যান্য কার্যক্রমের নগদ অর্থ এমএফএসের মাধ্যমে বিতরণের জন্য নতুন মাশুল হার প্রযোজ্য হবে। কোনো অবস্থায়ই এমএফএস অপারেটরা এই হারের বেশি মাশুল সরকারের কাছ থেকে নিতে পারবে না।

আরও পড়ুন

দেশের অন্যতম এমএফএস প্রতিষ্ঠান নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, নতুন হারটি যৌক্তিক হয়েছে। তবে সরকারের আরও অনেক কর্মসূচি রয়েছে, যেগুলোর ভাতা বিতরণ এমএফএসের মাধ্যমে হয় না। ডিজিটালাইজেশনকে উৎসাহী করতে এবং খরচ বাঁচাতে সরকারের উচিত হবে যত বেশি সম্ভব কর্মসূচিকে এমএফএসের আওতায় নিয়ে আসা।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কার্যক্রম, প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে। এসবের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভাতা, সম্মানী, বৃত্তি-উপবৃত্তি ইত্যাদি রয়েছে। এসব নগদ অর্থ সময়মতো ও নিরবচ্ছিন্নভাবে সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সরকারের উদ্দেশ্য।

এ উদ্দেশ্য সামনে রেখে সরকার নগদ অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে পৌঁছাতে সরকার থেকে ব্যক্তি (জিটুপি) পদ্ধতি অনুসরণ করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও সরকারের অন্যান্য কার্যক্রমের নগদ অর্থ এমএফএসের মাধ্যমে বিতরণের জন্য একটি অভিন্ন ক্যাশ আউট চার্জ নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

মএফএসের মাধ্যমে উপকারভোগীর কাছে সরকারি ভাতা, বৃত্তি, সম্মানী ইত্যাদি পৌঁছাতে এত দিন খরচ ছিল হাজারে সাড়ে ১২ টাকা থেকে সাড়ে ১৮ টাকা। সরকার এখন কম টাকা দেবে

বলা হয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও সরকারের অন্যান্য কার্যক্রমের নগদ অর্থ এমএফএসের মাধ্যমে বিতরণের ক্ষেত্রে বিতরণকারী সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এ অভিন্ন ক্যাশ আউট চার্জ অনুসরণ করবে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও সরকারের অন্যান্য কার্যক্রমের নগদ অর্থ বিতরণের জন্য এমএফএসের অপারেটর নির্ধারণ, অপারেটরের কার্যপরিধি সুনির্দিষ্টকরণ এবং তা যথাযথভাবে তদারকি করবে।

বাংলাদেশে বর্তমানে ১৬টি ব্যাংক মোবাইলে আর্থিক সেবা দিচ্ছে। যেমন ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশ, ডাচ-বাংলার রকেট, ইসলামী ব্যাংকের এমক্যাশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ইউক্যাশ, সাউথইস্ট ব্যাংকের টেলিক্যাশ, ওয়ান ব্যাংকের ওকে, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মাইক্যাশ, প্রাইম ব্যাংকের প্রাইমক্যাশ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের স্পটক্যাশ, ট্রাস্ট ব্যাংকের মোবাইল মানি, মেঘনা ব্যাংকের ট্যাপ এন পে। এ ছাড়া রূপালী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, বাংলাদেশ কমার্স, এনসিসি ও যমুনা ব্যাংক দিচ্ছে শিওরক্যাশ সেবা। এর বাইরে রয়েছে নগদ। তবে বিকাশ, রকেট, নগদ, ইউক্যাশ, শিওরক্যাশ অন্যতম।

বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যমান ক্যাশ আউট চার্জের ৭৭ শতাংশ এজেন্টদেরই দিতে হয়। তবে সরকারের কাজের সঙ্গে আমরা থাকতে চাই। নতুন পরিপত্রে আমাদের আয় একটু কমবে। কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তা বিবেচনার জায়গা থেকে এ কমাটাকে আমরা বিবেচনায় রাখছি না।’