টিআইএন ছাড়া সঞ্চয়পত্র

  • ২৫টি পাটকল বন্ধ ১ জুলাই থেকে। এর মধ্যে একটির শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। অর্ধেক দেওয়া হবে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে।

  • বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ১ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলেই কর টিআইএন থাকা বাধ্যতামূলক।

  • করিম জুট মিলের স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে ২২৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

২৫টি পাটকল বন্ধ ১ জুলাই থেকে। এর মধ্যে একটির শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। অর্ধেক দেওয়া হবে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে
ফাইল ছবি

বন্ধ হওয়া করিম জুট মিলের শ্রমিকেরা তাঁদের পাওনা টাকার অর্ধেক পাবেন তিন বছর মেয়াদি তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। তা কিনতে হবে শুধু সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে। অথচ সোনালী ব্যাংকের অনেক শাখায় সঞ্চয়পত্র খোলার অনুমতি নেই।

আবার বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ১ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলেই কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু অনেক শ্রমিকের টিআইএন নম্বর নেই। আবার ৫ লাখ টাকার বেশি হলেই মুনাফার ওপর উৎসে কর পরিশোধ করতে হয় ১০ শতাংশ হারে। পাটকলশ্রমিকদের জন্য তা বহন করা কষ্টকর।

এসব প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব ছাড়াই শেষ হয়েছে ‘বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর অবসরপ্রাপ্ত ও অবসানকৃত স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনার অংশ সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে পরিশোধ’ শীর্ষক বৈঠক। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান। অর্থ বিভাগ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও সোনালী ব্যাংকের প্রতিনিধিরা বৈঠকে থাকলেও কেউ কোনো সমাধান বের করতে পারেননি।

অর্থ বিভাগের চিঠি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সঞ্চয়পত্রের বাইরে শ্রমিকেরা বাকি অর্ধেক টাকা পাবেন নগদে, যাদের পাওনা অন্তত দুই লাখ টাকার বেশি। যাদের পাওনা দুই লাখ টাকার কম, তারা অবশ্য পুরো টাকাই নগদে পাবেন।

বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, করিম জুট মিলের স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে ২২৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এই বরাদ্দে ২ হাজার ৩৭১ জন শ্রমিক তাঁদের পাওনা টাকা পাবেন। এর মধ্যে ২ হাজার ১৮২ জনের পাওনা ২ লাখ টাকার বেশি। তাঁদের টাকা দেওয়া হবে ৫০ শতাংশ নগদে এবং ৫০ শতাংশ সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। মাত্র ১৮৯ জন শ্রমিকের পাওনা ২ লাখ টাকার মধ্যে। তাঁরা টাকা পাবেন এককালীন ও নগদ।

বিজেএমসির চেয়ারম্যান আবদুর রউফ প্রথম আলোকে জানান, অনেক শ্রমিকের টিআইএন নম্বর পাওয়া যাবে না। অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এমনকি ব্যাংক হিসাবও নেই। নতুন করে এগুলো খোলা সময়সাপেক্ষ। বৈঠকে আরও কিছু বিষয় উত্থাপিত হয়েছে। যেমন, তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা রয়েছে। ফলে এ সীমার বাইরে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের নামে সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা যাবে না।

গতকাল শনিবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সামছুন্নাহার বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিআইএন শিথিল করার ব্যাপারে আমরা এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি।’

গত বৃহস্পতিবার যোগাযোগ করলেও অর্থ বিভাগের কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, সোনালী ব্যাংকের কোনো কোনো শাখায় সঞ্চয়পত্র খোলার অনুমতি না থাকলেও অন্য কোনো শাখার পাসওয়ার্ড খুলে দেওয়ার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। আর শ্রমিকদের ক্ষেত্রে টিআইএন থাকার বিষয়টি শিথিল করা হতে পারে।

বৈঠকে উপস্থিত থাকা সোনালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) এবনুজ জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখানে কোনো পক্ষ নই। সরকারের অনুশাসন মেনে আমরা শুধু কাজটি বাস্তবায়ন করব।’

সরকার চাইলে সবই পারে। তবে আইনের ব্যত্যয় না ঘটানোই ভালো। সরকার যদি বলে থাকে যে টিআইন খোলা সময়সাপেক্ষ, আমি তা মানতে পারছি না।
আহসান এইচ মনসুর

বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি পাটকলের শ্রমিকদের চাকরি গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার আওতায় গত ১ জুলাই থেকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এতে পাটকলগুলোর প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। বন্ধ করার আগে সরকার যুক্তি দিয়েছে, এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে পাটকলগুলো, করিম জুট মিল তাদেরই একটি।

টিআইন থাকার বিষয়টি শিথিল করা এবং ৫ লাখ টাকার বেশির ক্ষেত্রে উৎসে কর কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার চাইলে সবই পারে। তবে আইনের ব্যত্যয় না ঘটানোই ভালো। সরকার যদি বলে থাকে যে টিআইন খোলা সময়সাপেক্ষ, আমি তা মানতে পারছি না। বিজেএমসি ও সোনালী ব্যাংক মিলে কাজটি সহজেই করতে পারে।’