টিউশনের টাকাও কিন্তু করমুক্ত নয়

শিক্ষকেরা দেশের মানবসম্পদ গড়ার কারিগর। শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন–ভাতাসহ আয়-রোজগার বেশ ভালো। করযোগ্য আয় থাকলে তাঁদেরও বছর শেষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিতে হয়। শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় নিয়োজিত থেকে করের জটিল হিসাব-নিকাশ করতে তাঁদেরও হিমশিম খেতে হয়। এবার একজন শিক্ষক কীভাবে আয়কর বিবরণী কিংবা আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ করবেন, তা দেওয়া হলো। কোথায় ছাড় আছে, সেটাও জানতে হবে।

নাসিরুল হক রাজধানীর একটি খ্যাতনামা স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এই নভেম্বর মাসেই তাঁকে রিটার্ন জমা দিতে হবে। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত তিনি নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে মূল বেতন হিসেবে ৩০ হাজার, বাড়িভাড়া ১৫ হাজার, চিকিৎসা ভাতা ১ হাজার এবং বছরে দুটি উৎসব বোনাস (দুটি মূল বেতন) ৬০ হাজার টাকা পেয়েছেন।

আরও পড়ুন

সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে নিজের বাসায় সারা বছরই টিউশন করেছেন নাসিরুল হক। প্রতি মাসে ৫টি ব্যাচে ৫ জন করে ছাত্রছাত্রী পড়িয়েছেন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টিউশন ফি হিসাবে মাসে দুই হাজার টাকা নিয়েছেন। এই হলো নাসিরুল হকের সর্বসাকল্যে আয়। এ ছাড়া কষ্টের জমানো টাকায় গত অর্থবছরে দুই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন।

আয়ের ওপর নানা ধরনের কর ছাড় আছে। কর ছাড় বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় নির্ধারণ করতে হয়। এবার দেখা যাক নাসিরুল হকের কত করযোগ্য আয় হলো। মূল বেতন (১২ মাসের মূল বেতন) ৩ লাখ ৬০ হাজার এবং উৎসব বোনাস ৬০ হাজার টাকা পেয়েছেন। এ ছাড়া বছরজুড়ে চিকিৎসা ভাতা হিসেবে পাওয়া ১২ হাজার টাকার পুরোটাই করমুক্ত। কারণ, চিকিৎসা ভাতা হিসেবে মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে যেটি কম হবে, সেই টাকার ওপর কর ছাড় মেলে। এর পাশাপাশি ১২ মাসে নাসিরুল হক বাড়িভাড়া হিসাবে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পেয়েছেন, তাও করমুক্ত। কারণ চিকিৎসা ভাতার মতো বাড়িভাড়ায় কর ছাড় পাবেন তিনি। বাড়িভাড়া হিসাবে বছরে ৩ লাখ টাকা বা মূল বেতনের ৫০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম, তা করমুক্ত থাকবে। নাসিরুল হকের সব মিলিয়ে বেতন–ভাতা থেকে করযোগ্য আয় হলো ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।

এবার দেখা যাক, টিউশনি থেকে নাসিরুল হক কত আয় করলেন। প্রতি মাসে তিনি ৫ ব্যাচে ৫ জন করে মোট ২৫ জন শিক্ষার্থীকে পড়িয়েছেন। প্রতি মাসে টিউশন ফি বাবদ পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকা। আর বছর শেষে টিউশনি থেকে আয় দাঁড়াল ৬ লাখ টাকা। টিউশনের টাকায় কোনো কর ছাড় নেই। তাহলে বেতন–ভাতা ও টিউশন মিলিয়ে নাসিরুল হকের আয় দাঁড়াল ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা।

এর মধ্যে প্রথম ৩ লাখ টাকায় কোনো কর নেই। কর হবে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকার ওপর। এর মধ্যে প্রথম ১ লাখ টাকার জন্য ৫ শতাংশ হারে ৫ হাজার টাকা; পরের ৩ লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ হারে ৩০ হাজার টাকা এবং পরের ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার জন্য ১৫ শতাংশ হারে ৪৮ হাজার টাকা কর হবে। সব মিলিয়ে নাসিরুল হকের করের পরিমাণ দাঁড়াবে ৮৩ হাজার টাকা।

কিন্তু তাঁকে এই টাকা কর দিতে হবে না। তিনি যেহেতু ২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন, তাই বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত পাবেন। এবার হিসাবটি করা যাক, নাসিরুল কর রেয়াত পেতে বিনিয়োগসীমা হলো মোট করযোগ্য আয়ের ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। কিন্তু সঞ্চয়পত্র কেনার পরও এই বিনিয়োগসীমা ছাড়িয়ে যায়নি। তাই বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ মানে, ৩০ হাজার টাকা কর রেয়াত পাবেন। কর রেয়াত নেওয়ার পর নাসিরুল হককে কর দিতে হবে ৫৩ হাজার টাকা। অবশ্য তিনি যদি সঞ্চয়পত্রের সুদের টাকা উঠিয়ে থাকেন, তাহলে উৎসে কর হিসেবে যে টাকা কেটে রাখা হয়েছে, তা বাদ দিতে হবে।