টুইটারের মালিকানা কি ইলন মাস্কের হাতেই যাচ্ছে

টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক
ফাইল ছবি: রয়টার্স

কিছুদিন আগে টুইটারের ৯ দশমিক ২ শতাংশ শেয়ার কিনেছেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। তখন থেকেই গুঞ্জন ছিল, তিনি পুরো টুইটার কিনে নেবেন। এবার সেই গুঞ্জন বোধ হয় সত্যি হতে চলেছে। জানা গেছে, টুইটারের পুরো মালিকানা কিনে নেওয়ার যে প্রস্তাব মাস্ক দিয়েছিলেন, তার আলোকে চুক্তি হওয়া এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।

মাস্ক টুইটারের পূর্ণাঙ্গ মালিকানা কিনে নিতে ৪৩ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের প্রস্তাব দিয়েছেন। এ নিয়ে টুইটারের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে মাস্কের বৈঠক হয়েছে। যদিও টুইটারের পর্ষদ এর আগে মাস্কের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল।
রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, এখন মাস্কের প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার পথে।

যুক্তরাষ্ট্রের সময় সোমবার বিকেল নাগাদ এ ঘোষণা আসতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এর আগে অবশ্য টুইটারের পর্ষদ শেয়ারধারীদের কাছে চুক্তির বিষয়ে পরামর্শ চাইবে।

এ খবরে টুইটারের শেয়ারের দাম ইতিমধ্যে ৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ দশমিক ৬২ ডলারে। তবে ইলন মাস্ক শেয়ারপ্রতি ৫৪ দশমিক ২০ ডলার দিতে চেয়েছেন।
ঘটনাপ্রবাহ খুব দ্রুত গড়িয়েছে। এপ্রিলের শুরুর দিকে ঘটনার সূত্রপাত। মাস্ক প্রথমে টুইটারের ৯ দশমিক ২ শতাংশ শেয়ার কেনেন। রীতিমাফিক তখন তাঁকে পরিচালনা পর্ষদে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর ১৪ এপ্রিল মাস্ক হঠাৎ করেই পুরো টুইটার কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। বলেন, সামাজিক মাধ্যমে যে অমিত সম্ভাবনা আছে, তার অর্গল খুলে দিতে চান তিনি।

টুইটারের পর্ষদ প্রথমে মাস্কের এ প্রস্তাবে সায় দেয়নি। কিন্তু মাস্ক যখন বলেন, এ লক্ষ্যে তিনি ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বরাদ্দ করছেন এবং তাঁর সঙ্গে ওয়াল স্ট্রিটের মহিরুহ মার্গান স্ট্যানলিসহ অন্যান্য বিনিয়োগকারী আছেন, তখন টুইটার কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। এরপর তারা রীতিমতো উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করে।

মাস্ক কিছুদিন আগে বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, টুইটারের আরও উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ হওয়া উচিত। এটি বাক্‌স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্তিমূলক এলাকা হওয়া উচিত। তিনি নিজের সাড়ে আট কোটি অনুসরণকারীর উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন, টুইটারে এডিট বাটন বা সম্পাদনার সুযোগ রাখা উচিত কি না। উত্তরে ৭৪ শতাংশ মানুষ বলেন, ‘হ্যাঁ, রাখা উচিত।’

এখন মাস্কের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে কে টুইটার পরিচালনা করবেন, তা পরিষ্কার নয়। কোম্পানির ওয়েবসাইট অনুসারে তিনি টেসলার প্রধান নির্বাহীর পাশাপাশি ‘টেকনোকিং’। এ ছাড়া একাধারে তিনি প্রধান নির্বাহী, প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা এবং রকেট ও মহাকাশযান সংস্থা স্পেসএক্সের চেয়ারম্যান। মাস্ক আরও বেশ কয়েকটি ব্যবসা ও স্টার্টআপের সঙ্গে জড়িত।

এখন টুইটারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ পরাগ আগরওয়াল। টুইটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসির সমর্থনে গত নভেম্বরে তিনি দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

সেই সময় ডরসি বলেছিলেন, ‘টুইটারের প্রধান নির্বাহী হিসেবে পরাগের ওপর আমার আস্থা গভীর। আমি তাঁর দক্ষতা, সহৃদয়তা ও আত্মার প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। এখন তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার সময়।’

মাস্ক ইতিমধ্যে টুইটারের ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। প্রস্তাবপত্রে তিনি টুইটারের চেয়ারম্যান ব্রেট টেলরকে বলেছেন, ‘ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষে আমার আস্থা নেই।’

পরাগ আগরওয়াল এ মাসের শুরু থেকে প্রকাশ্যে টুইটারের মালিকানা বদল নিয়ে আলোচনা করেননি। এর আগে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, মাস্ক কোম্পানির পর্ষদের সদস্য হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁর মতে, এটাই টুইটারের জন্য সেরা সিদ্ধান্ত হবে।