তারিক আদনানের আলপাইন পেল ১৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ

তারিক আদনান

সাশ্রয়ী খরচে ক্রিপ্টোসম্পদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবস্থাপনার নতুন প্রটোকল প্রি-সিড রাউন্ডে ১৮ লাখ ডলার (১৫ কোটি টাকা) বিনিয়োগ পেয়েছে। সিলিকন ভ্যালিতে বাংলাদেশি উদ্যোক্তা প্রকৌশলী তারিক আদনানের প্রতিষ্ঠিত আলপাইন এ নিয়ে দ্বিতীয়বার বিনিয়োগ পেল।

এর আগে প্রস্তুতি পর্যায়ে তারা ১৭ লাখ ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে। এবারের বিনিয়োগে নেতৃত্ব দিয়েছেন ড্রাগনফ্লাই ক্যাপিটালের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলেক্স প্যাক ও হ্যাকভিসির এড রোমান।

তারিক আদনান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, এই বিনিয়োগ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। ক্রিপ্টোসম্পদ সবার জন্য উন্মুক্ত করার টেস্টনেট বানানোর কাজ ত্বরান্বিত করতে এই বিনিয়োগ কাজে লাগবে বলে তিনি জানান। এই রাউন্ডে আরও অংশ নিয়েছে শিমা ক্যাপিটাল ও স্ক্রিপ্ট ভিসি। এ ছাড়া ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আছেন পলিগনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জয়ন্তী কানানি ও অডিয়াসের সহপ্রতিষ্ঠাতা ফরেস্ট ব্রাউনিং প্রমুখ।

তারিক বলেন, ‘আমরা এখনো ওয়েব-৩ ও ডিফাইয়ের (DeFI) প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। আমরা বিশ্বাস করি, খুবই কম খরচে, এমনকি মাত্র এক ডলার বিনিয়োগ করেও ডিজিটাল সম্পদ ব্যবস্থাপনার কাজের অনেক সুযোগ আছে। ওয়েব-৩-এর সুযোগ-সুবিধা ১০ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, এটি তার প্রথম পদক্ষেপমাত্র।’

উল্লেখ্য, ব্লক চেইন হলো একটি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ডিজিটাল তথ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি, যেখানে কোনো কেন্দ্রীয় তথ্যাধার বা স্টোরেজ সিস্টেম থাকে না। কিন্তু প্রতিটি নোড বা পৃথক সত্তা পরস্পরের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্যের যথার্থতা অক্ষুণ্ন রাখতে পারে। এই সিস্টেমের বিকাশের ফলে বিভিন্ন ধরনের নতুন ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। যেমন, ব্যাংক ছাড়াই টাকা ধার দেওয়া-নেওয়ার পদ্ধতি তার মধ্যে অন্যতম। এই পদ্ধতিতে যিনি টাকা ধার দিতে চান এবং যিনি এই টাকা কাজে লাগাতে চান, উভয়েই ব্লক চেইন প্ল্যাটফর্মে যোগ দেন। গ্রহীতা নিজের ডিজিটাল সম্পদ জামানত রেখে দাতার কাছ থেকে টাকা নিতে পারেন। এতে কোনো তৃতীয় প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের প্রয়োজন হয় না। এ ধরনের আর্থিক কর্মকাণ্ড হচ্ছে ডিসেন্ট্রালাইজড ফাইন্যান্স বা ডিফাই।’

মাস দু-এক আগে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তারিক আদনান বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আমাদের প্ল্যাটফর্ম দাতা-গ্রহীতার আর্থিক লেনদেন নিরাপদ ও সাশ্রয়ী করবে।’

আলপাইন টিম ডিজিটাল কিংবা ক্রিপ্টো সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিপুল লেনদেন খরচ এবং দুর্বল ইউজার ইন্টারফেসকে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ ক্ষেত্রে কেবল অ্যাপ্লিকেশন লেয়ার তৈরি করা যথাযথ নয়। তাদের প্রস্তাব, পলিগন ও সোলানার মতো চেইনের জন্য প্রথম একটি প্রটোকল (নিয়ম) বানানোর উদ্যোগ নেওয়া, যা গতি ও খরচ দুটিই কমিয়ে আনবে।

পলিগনের প্রধান নির্বাহী জয়ন্তী কানানি আলপাইনের উদ্যোগের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, ‘সব বিনিয়োগকারীর জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করার আলপাইনের উদ্যোগের ব্যাপারে আমি খুবই উত্তেজিত। ডিফাই হলো ব্লক চেইনের দ্রুত বিকাশমান প্রযুক্তি এবং আমরা বিশ্বাস করি, আলপাইন লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর পথ সহজ করে দেবে।’

কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী থাকাকালে তারিক আদনান ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবে অংশ নেন। নিজের মেধা ও পরিশ্রমের জোরে ২০০৭ সালেই বাংলাদেশ দলে জায়গা করে নেন তিনি। ২০১০ সালে কাজাখস্তানে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড থেকে ব্রোঞ্জ পদক পায় সেই দল। পরের বছর তিনি বৃত্তি নিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। সেখানে ফলিত গণিত ও কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়াশোনার পাশাপাশি একই বিষয়ে এমআইটির একাধিক কোর্সেও অংশ নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া তিনি হার্ভার্ডে পড়ার সময় শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করেন ই-বে ও গোল্ডম্যান স্যাকসে। পাস করার পর হার্ভার্ডের বন্ধুদের সঙ্গে ইডিও নামের একটি স্টার্টআপে ডেটা সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০১৮ সালে চিনের সাংহাইতে কেভ্যালেন্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা ছিলেন আদনান।