দুই অপারেটরের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

রবি

মুঠোফোনে বিভিন্ন সেবা (টিভ্যাস) দেওয়ার ক্ষেত্রে দুই মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা ও বাংলালিংকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রবি একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে, যেটির বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) অনুমোদন ছিল না। বাংলালিংক ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চুক্তি ছাড়াই সেবা নিয়ে গ্রাহকদের দিয়েছে। বিটিআরসির নথিপত্রে এসব অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দেশে বিটিআরসি অনুমোদিত লাইসেন্সধারী টেলিকমিউনিকেশন ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (টিভ্যাস) প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান আছে ১৮৩টি। তারা চারটি মুঠোফোন অপারেটরের গ্রাহকদের নিউজ অ্যালার্ট, ওয়েলকাম টিউন, গান, ভিডিও, মুঠোফোনের গেম প্রভৃতি সেবা দিয়ে থাকে। সেবার বিনিময়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া টাকার একটা অংশ পায় মুঠোফোন অপারেটর।

বাংলালিংক

বিটিআরসি সম্প্রতি দুটি প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখেছে, গ্রাহককে না জানিয়ে সেবা চালু করে কেটে নেওয়া হয় টাকা। তদন্তে প্রমাণ পেয়ে কমিশন গত মাসে পার্পেল ডিজিট কমিউনিকেশন ও অভিকথাচিত্র নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের টিভ্যাস সেবা বন্ধের নির্দেশ দেয়। এ ছাড়া গত ১০ নভেম্বর রবি ও বাংলালিংকের টিভ্যাস সেবা বন্ধের নির্দেশনাও দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে অপারেটর দুটির আলোচনা চলছিল। এরই মধ্যে তাদের আরেক দফা চিঠি দিয়ে ২০ ডিসেম্বর থেকে টিভ্যাস সেবা বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে।

বিটিআরসি সম্প্রতি দুটি প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখেছে, গ্রাহককে না জানিয়ে সেবা চালু করে কেটে নেওয়া হয় টাকা। তদন্তে প্রমাণ পেয়ে কমিশন গত মাসে পার্পেল ডিজিট কমিউনিকেশন ও অভিকথাচিত্র নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের টিভ্যাস সেবা বন্ধের নির্দেশ দেয়।

এ বিষয়ে বিটিআরসির জনসংযোগ বিভাগকে গতকাল বৃহস্পতিবার ই-মেইল করা হলে বিভাগের একজন কর্মী ফোন করে জানান, চিঠি দেওয়ার বিষয়টি সঠিক। তবে দুই অপারেটর দাবি করছে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা চিঠি পায়নি।


বিটিআরসির নথিতে বলা হয়েছে, টিভ্যাস সনদ পাওয়ার আগে রবি ও বাংলালিংক যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করে, সেটির নাম বিএনজি সফটওয়্যার সলিউশনস।

বিএনজির সঙ্গে রবি সেবা ও আধেয় (কনটেন্ট) চুক্তি করে ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি। অথচ বিএনজি কমিশন থেকে টিভ্যাস নিবন্ধন সনদ পায় তার প্রায় ৯ মাস পর, গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর। বিটিআরসি বলছে, কোনো প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাওয়ার আগে রবির এই চুক্তি বেআইনি।

বিটিআরসির নথিপত্র অনুযায়ী, রাজস্ব ভাগাভাগির ক্ষেত্রে রবি টিভ্যাস সেবাদাতা বিএনজির ব্যাংক হিসাবে না পাঠিয়ে নিবন্ধনহীন ভিন্ন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পাঠানো টাকার পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৪৫ লাখ।

বিটিআরসির নথি অনুযায়ী, বাংলালিংক চুক্তিবিহীনভাবে বিএনজির কাছ থেকে সেবা নিয়েছে প্রায় এক বছর। রাজস্ব ভাগাভাগির ক্ষেত্রেও তারা রবির মতো নিবন্ধনহীন ভিন্ন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১২ কোটি ৯২ লাখ টাকা পরিশোধ করে।

যেহেতু নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো চিঠি তারা পায়নি, তাই এ নিয়ে মন্তব্য করতে পারছে না।
রবি কর্তৃপক্ষ

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবি কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে বলেছে, যেহেতু নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো চিঠি তারা পায়নি, তাই এ নিয়ে মন্তব্য করতে পারছে না। অন্যদিকে বাংলালিংক কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিটিআরসির সঙ্গে টিভ্যাস বিষয়ে তাদের আলোচনা চলছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনামতো তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

বিএনজির অনিয়ম

বিটিআরসির নথি বলছে, বিএনজি অ্যাডভান্সড সলিউশনসের আগের নাম ছিল ব্ল্যাক অ্যান্ড গ্রিন লিমিটেড। তারা পুরোপুরি বিদেশি মালিকানায় নিবন্ধনের জন্য বিটিআরসির কাছে আবেদন করলেও কমিশন তা খারিজ করে দেয়। ব্ল্যাক অ্যান্ড গ্রিন পরে বিএনজি অ্যাডভান্সড সলিউশনস গঠন করে। এর মালিক দুজন ভারতীয় ও একজন বাংলাদেশি। ভারতীয় নাগরিক রাহুল গুপ্তা ও কার্তিক শংকরের মালিকানা ৩৫ শতাংশ করে, আর বাংলাদেশি ফরহাদ হোসেনের মালিকানা ৩০ শতাংশ।

ব্ল্যাক অ্যান্ড গ্রিন পরে বিএনজি অ্যাডভান্সড সলিউশনস গঠন করে। এর মালিক দুজন ভারতীয় ও একজন বাংলাদেশি। ভারতীয় নাগরিক রাহুল গুপ্তা ও কার্তিক শংকরের মালিকানা ৩৫ শতাংশ করে, আর বাংলাদেশি ফরহাদ হোসেনের মালিকানা ৩০ শতাংশ।

বিটিআরসির নথিতে বিএনজির বিরুদ্ধে নিবন্ধন পাওয়ার আগেই চুক্তি করা ও সেবা দেওয়া, অবৈধভাবে অফ-নেট টিভ্যাস সেবা দেওয়া, সরকারি বিধি অনুসরণ না করে বিদেশি কর্মী নিয়োগ, অসত্য তথ্য দিয়ে আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ আনা হয়। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল বিএনজির ওয়েবসাইটে দেওয়া ই-মেইলে প্রশ্ন পাঠানো হয়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এসব অপরাধের সঙ্গে কোম্পানির কিছু কর্মী জড়িত থাকেন। এভাবে সেবার নামে একজন গ্রাহকের কাছ থেকে হয়তো সামান্য কিছু টাকা কাটে, কিন্তু কোটি কোটি গ্রাহকের কথা বিবেচনায় নিলে টাকার পরিমাণ অনেক বেশি দাঁড়ায়।
গোলাম রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান, দুদক

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এসব অপরাধের সঙ্গে কোম্পানির কিছু কর্মী জড়িত থাকেন। এভাবে সেবার নামে একজন গ্রাহকের কাছ থেকে হয়তো সামান্য কিছু টাকা কাটে, কিন্তু কোটি কোটি গ্রাহকের কথা বিবেচনায় নিলে টাকার পরিমাণ অনেক বেশি দাঁড়ায়। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে বিটিআরসির উচিত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া।