দুর্ঘটনার ‘বড় কারণ’ অসচেতনতা

দ্রুত বড় হচ্ছে এলপিজির বাজার। খাতটিতে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন কোম্পানি। তবে দাম নিয়ে ভোক্তা ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভিন্নমত রয়েছে। নিরাপত্তা নিয়েও আছে উদ্বেগ। খাতটি নিয়ে আজকে দুই পাতার বিশেষ আয়োজন।

নগরীর একটি পরিবেশক কেন্দ্রে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার। গত বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর ফয়’স লেক এলাকায়
ছবি: সৌরভ দাশ

রাজধানীর হাজারীবাগে ২০১৯ সালের ২ আগস্ট খাবারের দোকানে আগুনে তিনজন অগ্নিদগ্ধ হন। ঘটনার পর বিস্ফোরক পরিদপ্তর তদন্ত করে দেখতে পায়, দোকানটির তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডারের রেগুলেটরের চাবি খোলা ছিল। এতে বন্ধ দোকানে গ্যাস জমা হয়। পরে আগুনের সংস্পর্শে এসে দুর্ঘটনা ঘটে।

বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সিলিন্ডার থেকে দুর্ঘটনার বড় কারণ ব্যবহারকারীদের অসচেতনতা। সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চললেই দুর্ঘটনা কমিয়ে ফেলা সম্ভব। হাজারীবাগের ওই ঘটনায় সিলিন্ডারের রেগুলেটরের চাবি বন্ধ থাকলেই এই দুর্ঘটনা রোধ করা যেত।

বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, দেশে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কোনো
ঘটনা এখনো ঘটেনি। কারিগরি দিক দিয়ে সেটা সম্ভবও নয়। কারণ, সিলিন্ডার এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে সেটা বিস্ফোরিত না হয়। তিনি বলেন, দুর্ঘটনা ঘটে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বেরিয়ে (লিক)। সেটা রোধ করতে মানসম্পন্ন পাইপ, রেগুলেটর ও ভাল্‌ভ ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য জনসচেতনতাও জরুরি।

এলপি গ্যাস ব্যবহারে মানতে হবে কিছু সাধারণ নিয়ম। দেখতে হবে সিলিন্ডারের মেয়াদ।

কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে

বিস্ফোরক পরিদপ্তর জানিয়েছে, বাসাবাড়ি ও খাবারের দোকানে সিলিন্ডার দুর্ঘটনা রোধে যে কাজটি নিয়মিত করতে হবে তা হলো রান্না শেষে চুলা ও সিলিন্ডারের রেগুলেটরের চাবি বন্ধ রাখা। সিলিন্ডার চুলা বা আগুনের কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে, যাতে তাপ না লাগে। রান্নাঘরের জানালা বন্ধ না রেখে খোলা রাখতে হবে। সিলিন্ডার রাখতে হবে বায়ু চলাচল করে এমন জায়গায়।

সিলিন্ডার রাখার ক্ষেত্রেও কয়েকটি নিয়ম মনে রাখা দরকার। বিস্ফোরক পরিদপ্তর জানিয়েছে, সিলিন্ডার খাড়াভাবে রাখতে হবে, কাত করে বা উপুড় করে নয়। অনেকেই চুলা সিলিন্ডার থেকে নিচে রাখেন। এটা ভুল। চুলা কমপক্ষে সিলিন্ডারের উচ্চতা থেকে ছয় ইঞ্চি ওপরে রাখতে হবে।

পরিদপ্তর বলছে, অনেক সময় গ্যাস বেরিয়ে রান্নাঘরে জমা হতে পারে। এ জন্য চুলা জ্বালানোর আগে খেয়াল রাখতে হবে যে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায় কি না। যদি গন্ধ পাওয়া যায় তাহলে দেশলাই, ইলেকট্রিক সুইচ অথবা মুঠোফোন চালু করা থেকে বিরত থাকা দরকার।

বসুন্ধরা এলপিজির বিক্রয় বিভাগের প্রধান জাকারিয়া জালাল বলেন, ‘মানুষ যাতে নিরাপদে এলপিজি ব্যবহার করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে আমরা নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছি।’

সিলিন্ডারের মেয়াদ দেখবেন যেভাবে

গ্যাস সিলিন্ডারের নিরাপত্তার জন্য সরকার ১৯৯১ সালে গ্যাস সিলিন্ডার বিধিমালা জারি করে। যার আওতায় গ্যাস সিলিন্ডারের আমদানি ও উৎপাদনের মান নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদনকারীদের লাইসেন্সও দেয় বিস্ফোরক পরিদপ্তর।

দেশে এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারী ও আমদানিকারক কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, নতুন তৈরি একটি সিলিন্ডারের মেয়াদ থাকে ১০ বছর। সিলিন্ডারের গায়ে খোদাই করে উৎপাদনের তারিখ লেখা থাকে। এরপর ১০ বছর সেটি নিরাপদ।

বাসাবাড়িতে কেন্দ্রীয় সংযোগের ক্ষেত্রে

দেশে বাসাবাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের গ্যাস-সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এটি আর চালু করার কোনো পরিকল্পনাও সরকারের নেই। তাই ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের বহুতল ভবনে কেন্দ্রীয়ভাবে এলপিজি সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যবস্থায় সিলিন্ডার থাকে ভবনের নিচতলায়। সেখান থেকে প্রতিটি বাসায় সংযোগ দেওয়া হয়। এ ধরনের ব্যবস্থা তৈরি করার ক্ষেত্রে লাইসেন্স নেওয়ার একটি বিধান রয়েছে।

প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ভবনে এ ধরনের সঞ্চালন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কিছু নিরাপত্তার দিক মেনে চলতে হয়। কেউ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলে আমরা নকশা ও অন্যান্য দিক দেখে নিরাপত্তা বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিই।’