দেশের গাড়ির বাজারে এসইউভির দাপট

দেশের গাড়ির বাজারে এখন দাপট দেখাচ্ছে স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল (এসইউভি)। যখন দেশে সাধারণ ব্যক্তিগত গাড়ির বিক্রি কমছে, তখন বাড়ছে এসইউভির বিক্রি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নিবন্ধন তথ্য ও গাড়ি বিক্রেতাদের হিসাবে, ২০১৯ সালে দেশে ২২ হাজার ৪১৩টি ব্যক্তিগত গাড়ি (এসইউভিসহ) বিক্রি হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩৩ শতাংশই এসইউভি। লক্ষণীয় বিষয় হলো, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ১ হাজার ৯৫টি এসইউভি বিক্রি হয়েছে।

বিক্রেতারা বলছেন, এসইউভি বিক্রি বৃদ্ধির কারণ ক্রেতারা একে আভিজাত্যের প্রতীক বলে মনে করছেন। এ ছাড়া গাড়ি কিনতে সরকারি-বেসরকারি খাতে যে পরিমাণ টাকা ঋণ পাওয়া যায়, তার মধ্যের দামেই এসইউভি মিলছে। আরেকটি কারণ হলো, ছুটির দিনে দূরের যাতায়াত ও কারখানায় যাতায়াতের জন্য অপেক্ষাকৃত সচ্ছলেরা এসইউভি পছন্দ করছেন।

বাংলাদেশের বাজারে গতকাল শনিবার নতুন একটি এসইউভি বাজারজাতকরণের ঘোষণা দিয়েছে চীনা ব্র্যান্ড হাভালের পরিবেশক এইস অটোস। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এসইউভির একটা অভিজাত ভাব রয়েছে। দূরে বেড়াতে যেতে এটি উপযোগী। সব মিলিয়ে নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় এসইউভি এগিয়ে থাকছে।

গাড়ি বিক্রেতারা জানান, দেশের বাজারে এখন ৮-৯টি ব্র্যান্ডের এসইউভি বেশি জনপ্রিয়। এর মধ্যে জাপান, চীন, কোরিয়া ও ভারতীয় ব্র্যান্ড রয়েছে। জার্মান ব্র্যান্ডও কম যায় না। নতুন এসইউভির পাশাপাশি পুরোনো বা রিকন্ডিশন এসইউভি বিক্রি হয়। দাম মোটামুটি ২৭ লাখ টাকা থেকে শুরু।

বাংলাদেশে এসইউভি জিপ নামেই পরিচিত। যদিও জিপ একটি ব্র্যান্ডের নাম। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠান আমেরিকান মোটরস সেনাবাহিনীর জন্য জিপ তৈরি করে। এসইউভি একটু উঁচু হয়ে থাকে, মানে হলো গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স বেশি থাকে। দূরের পথে উঁচু আসনে বসে নিরাপদ যাত্রার জন্য গাড়িগুলো সারা পৃথিবীতেই সুনাম কুড়িয়েছে।

>

মোটাদাগে ব্যক্তিগত গাড়ি বিক্রি কমেছে। তবে স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল (এসইউভি) বিক্রি দ্রুত বাড়ছে। দুই মাসে বিক্রি ১০৯৫ টি।

বিআরটিএর নিবন্ধনের হিসাব ও বিক্রেতাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে দেশে মোট এসইউভি বিক্রি হয় ১ হাজার ৩১৪টি। ২০১৫ সালে বিক্রি প্রায় তিন গুণ হয়ে যায়, সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬০১টিতে। এরপর শুধু বাড়ছেই।

গাড়ি বিক্রেতারা আরও জানিয়েছেন, সরকারি কর্মচারীদের গাড়ি কিনতে ৩০ লাখ টাকা সুদমুক্ত ঋণ দিচ্ছে সরকার। বেসরকারি ব্যাংকে গাড়ি কেনার জন্য ৪০ লাখ টাকার মতো ঋণ পাওয়া যায়। বাজারে বেশি বিক্রি হওয়া এসইউভিগুলো ২৭ থেকে ৪০ লাখ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়। দুটি ব্র্যান্ডের এসইউভি এখন বাংলাদেশেই সংযোজিত হচ্ছে। ফলে দাম নাগালে এসেছে।

জানতে চাইলে বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের গাড়ি বাজারজাতকারী এক্সিকিউটিভ মোটরসের পরিচালক (পরিচালন) দেওয়ান সাজিদ আফজাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ বড় গাড়ি পছন্দ করে। কারণ, ছোটবেলা থেকে আমরা জিপ দেখে আসছি। এখন যদি সাধ্যের মধ্যে দামে পেয়ে যায়, তাহলে সেটা বেশি কিনবে, এটাই স্বাভাবিক।’ বিএমডব্লিউর একটি এসইউভি ৮৩ লাখ টাকায় পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ব্যক্তিগত গাড়ির (এসইউভি বাদে) বিক্রি কমছে ২০১৭ সাল থেকে। ওই বছর দেশে ২১ হাজার ৯৫৯টি ব্যক্তিগত গাড়ি বিক্রি হয়। পরের বছর তা কমে ১৮ হাজার ২২৭টিতে নামে। ২০১৯ সালে ১৬ হাজার ১৬ হাজার ৭৮৩টিতে। জাপানি পুরোনো গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি আবদুল হক মনে করেন, শুল্ক-করের বৈষম্যের কারণে জনপ্রিয় জাপানি পুরোনো গাড়ির দাম বেশি পড়ছে। সে তুলনায় নতুন গাড়ির করভার কম পড়ছে। এতে পুরোনো গাড়ির বাজার ভালো যাচ্ছে না।

সাড়ে ২৭ লাখ টাকায় এসইউভি

চীনা ব্র্যান্ড হাভালের পরিবেশক এইস অটোস গতকাল নতুন যে এসইউভি বাজারজাতের ঘোষণা দেয়, সেটির মডেল নাম ‘এইচ২’। তারা একে ‘হাভাল এইচ২ রিবর্ন’ বলছে। বাজারজাতকরণ উপলক্ষে গতকাল ঢাকার তেজগাঁওয়ে হাভালের বিক্রয়কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এইস অটোসের সিইও আজহারুল ইসলাম বলেন, জার্মানি ও জাপানের সুপরিচিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ির নকশাকারী ও প্রকৌশলীদের নিয়ে হাভাল গাড়ি তৈরি করছে। মানের দিক দিয়ে এটি অন্যদের চেয়ে কম যায় না। বিপরীতে তুলনামূলক কম দামে হাভাল গাড়িতে অনেক বেশি বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এখন ছাড়কৃত দামে সাড়ে ২৭ লাখ টাকায় হাভাল এইচ–২ কেনা যাচ্ছে।

আজহারুল ইসলাম আরও বলেন, গত বছর তিনি হাভালের বিভিন্ন মডেলের ১০০টি এসইউভি বিক্রি করেছেন। এ বছর সেটা ২৪০টিতে দাঁড়াবে বলে আশা করছেন।