ধনী দেশকে আরও ঋণ করার পরামর্শ

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় যুক্তরাজ্য সরকারের ঋণ জিডিপিকেও ছাড়িয়ে গেছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও এই সংকট মোকাবিলায় সরকারগুলোকে আরও ঋণ করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল।

ধনী দেশগুলোর উদ্দেশে তারা বলেছে, ভাইরাসজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় ঋণ করার প্রয়োজন হলে করতে হবে। তারা বলছে, ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও অসমতা মোকাবিলায় আরও অনেক কিছু করতে হবে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের জন্যও এটি জরুরি।

আইএমএফ বলছে, চলমান মহামারি মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সরকার সম্মিলিতভাবে ১২ রাখ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। এতে বৈশ্বিক ঋণ-জিডিপি অনুপাত ১০০ ভাগে উঠে যাবে। কিন্তু এই ঋণের বোঝা যেন নতুন ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হতে না পারে—সে কথাও বলেছে তারা।

আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক বৈঠকে বলেছেন, জীবন ও জীবিকা বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘মহামারির ৯ মাস চলে গেলেও আমরা এখনো এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছেন। অর্থনীতি উল্টো দিকে চলতে শুরু করেছে। এতে বেকারত্ব বাড়ছে—দারিদ্র্যের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে একটি প্রজন্মের হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।’

অথচ এই আইএমএফ ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি ফেরি করেছে। জর্জিয়েভা অবশ্য এই নীতি বদলের ধারায় সভাপতিত্ব করেছেন। বৈঠকে তিনি বলেছেন, সরকারি সহায়তা কার্যক্রম তাড়াতাড়ি তুলে নেওয়া হলে তা অনেকটা নিজের পায়ে কুড়াল মারার শামিল হবে।

তবে ঋণ করা নিয়েও উদ্বেগ আছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলো ঋণের সীমা ছাড়িয়ে গেছে—এমন কথাও অনেকে বলছেন। ফলে তাদের পক্ষে আর এই সহায়তা কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে না।

এ প্রসঙ্গে জর্জিয়েভা বলেন, সবখানে মহামারিকে পরাজিত করা গেলেই কেবল দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সম্ভব। সে জন্য এই ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য মোকাবিলায় তিনি ব্যাপক পরিসরে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানান।

এদিকে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী জি–২০–ভুক্ত দেশের মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা অবশ্য দরিদ্র দেশগুলোকে জরুরি সহায়তা দেওয়ার মেয়াদ ছয় মাস বাড়াতে রাজি হয়েছেন। তবে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ পুনর্গঠনের ব্যাপারে তাঁরা ঐকমত্যে আসতে পারেননি। জর্জিয়েভা বলেন, নিম্ন আয়ের দেশগুলোর আরও সুলভে ঋণ পাওয়া উচিত। কিন্তু নতুন ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে কবে ঐকমত্য হবে, সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারেননি।

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেছেন, বৈঠকে বেসরকারি খাতের ঋণদাতাদের স্বল্প উপস্থিতি এবং দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতাদের অসম্পূর্ণ অংশগ্রহণের কারণে আলোচনা ভেস্তে গেছে। তিনি আরও বলেন, অতীতে এ রকম সংকটের সময় দেখা গেছে, বিভিন্ন দেশে এমনভাবে ঋণ পুনর্গঠন করা হয়েছে যে তাতে এরা আরও দুর্বল হয়েছে। ঋণদাতারা হয়তো শেষমেশ তাদের ছাড় দিয়েছে, কিন্তু তাতে গরিব মানুষের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।