নগদ টাকা সাদা করতেই আগ্রহ বেশি করদাতার

  • শেয়ারবাজারে কালোটাকা গেছে ১৮৮ কোটি।

  • কালোটাকা সাদা করায় কর মিলেছে ৪০০ কোটি টাকা।

  • নিরাপত্তা সেবা, সঞ্চয়পত্রের সুদ থেকে এর চেয়ে বেশি কর আসে।

বারবার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) খুব বেশি লাভ হয় না। খুব একটা কর পাওয়া যায় না। এ বছর এই পর্যন্ত মাত্র ৪০০ কোটি টাকা কর পেয়েছে এনবিআর। অথচ গত এক যুগের মধ্যে এমন ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ আগে আর দেওয়া হয়নি।

নগদ টাকা সাদা করায় আগ্রহ বেশি। কারণ, নগদ টাকা সাদা করলে পরে পছন্দমতো জমি-ফ্ল্যাট কেনা কিংবা অন্য কাজেও লাগানো যাবে। তিনি মনে করেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে লাভ হয় না।
এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ, ফ্ল্যাট-জমি কেনার পাশাপাশি ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা টাকা; এমনকি বালিশের নিচে লুকানো নগদ টাকাও সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে চলতি অর্থবছরে। এ যেন কালোটাকা সাদা করার উৎসব। কিন্তু এ পর্যন্ত সেই সুযোগ নিয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ৩৫৮ জন করদাতা। এর মধ্যে নগদ টাকা সাদা করেছেন এমন করদাতার সংখ্যা তিন হাজারের বেশি। করদাতারা বিনিয়োগ না করে নগদ টাকা সাদা করতেই বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নগদ টাকা সাদা করায় আগ্রহ বেশি। কারণ, নগদ টাকা সাদা করলে পরে পছন্দমতো জমি-ফ্ল্যাট কেনা কিংবা অন্য কাজেও লাগানো যাবে। তিনি মনে করেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে লাভ হয় না। খুব বেশি লোক এই সুযোগ নেন না। বরং বারবার সুযোগ দেওয়ায় কালোটাকা উপার্জনে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

নিরাপত্তা সেবার চেয়ে কম কর আসে

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে এনবিআর সমালোচনার মুখে পড়ে প্রতিবারই। তারপরও রাজনৈতিক চাপে এই সুযোগ দেওয়া হয় বারবার। খুব বেশি টাকা সাদা হয় না, করও মেলে না।

কিন্তু আপনি কি জানেন, এমন অনেক ছোট ছোট খাত আছে যেখান থেকে কালোটাকা সাদা করার মাধ্যমে প্রাপ্ত কর থেকে অনেক বেশি কর পাওয়া যায়। যেমন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা সেবা দেওয়ার জন্য নিরাপত্তা সেবা প্রতিষ্ঠান আছে। এসব নিরাপত্তা সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধের সময় দেড় শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে রাখা হয়। এ খাত থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬৪৮ কোটি টাকা কর পেয়েছিল এনবিআর। এখন করের পরিমাণ আরও বেড়েছে।

সঞ্চয়পত্র কিনলে করযোগ্য আয় না থাকলেও সুদ ওঠানোর সময় উৎসে কর দিতে হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই খাত থেকে ৫২৫ কোটি টাকা কর আদায় হয়েছিল। অনেকেই প্রয়োজনে বিদেশে কল করেন। সেখান থেকেও উৎসে কর কাটা হয়। আন্তর্জাতিক ফোন কল থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কর পাওয়া গেছে ৮০০ কোটি টাকার বেশি।

ফ্ল্যাট-জমি কিনে কিংবা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কালোটাকা সাদা করায় আগ্রহ কম। নগদ টাকা সাদা করেছেন তিন হাজারের বেশি করদাতা।

শেয়ারবাজারে গেছে ১৮৮ কোটি টাকা

এ বছর মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। গত ১ জুলাই থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এই সুযোগ দেওয়া হয়। গত ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে মাত্র ১৩৮ জন এই সুযোগ নিয়েছেন। শেয়ারবাজারে তাঁরা অবৈধভাবে উপার্জিত ১৮৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

এনবিআর কর পেয়েছে মাত্র ১৮ কোটি টাকা। শেয়ারবাজার চাঙা করার জন্যই মূলত এই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কালোটাকা বিনিয়োগ করে বাজারে বিপুল পরিমাণ তারল্য যোগ হবে, বাজার চাঙা হবে—এমন প্রত্যাশা ছিল সরকারের। কিন্তু মাত্র ১৩৮ জন সেই সুযোগ নিয়েছেন। অবশ্য কালোটাকা সাদা করার সুযোগের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবে শেয়ারবাজারে কিছুটা চাঙাভাব ছিল।

নগদ টাকা সাদা করায় আগ্রহ বেশি

জমি-ফ্ল্যাট কেনায় নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। ফ্ল্যাট কেনায় আগে থেকেই এই সুযোগ থাকলেও এ বছর জমি কেনায়ও এই সুযোগ দেয় সরকার। ব্যাংকে গচ্ছিত ও নগদ টাকা ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে সাদা করার বিধানও এবার যোগ করা হয়। এই সুযোগের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। অর্থাৎ, বার্ষিক রিটার্ন দাখিলের সময়ই কালোটাকার সাদা করার বিষয়টি ঘোষণা দিতে হবে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, নগদ টাকা সাদা করেছেন, এমন করদাতার সংখ্যা অনেক বেশি। তিন হাজারের বেশি করদাতা তাঁদের রিটার্নে নগদ টাকা সাদা করার ঘোষণা দিয়েছেন। কালোটাকায় জমি-ফ্ল্যাট কিনে রিটার্নে প্রদর্শন করেছেন এমন করদাতা ২০০-র বেশি পাওয়া যায়নি।

চার বছর ধরে ফ্ল্যাট কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলেও তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে গত চার বছরে মাত্র ৩৫০ জন কালোটাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন।