নতুন ড্যাপে কোনো আতঙ্ক নয়

নতুন ড্যাপ নিয়ে ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। জবাবে দুই আমলা বলেছেন, ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়, এমন কোনো কাজ করা হবে না।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল রিহ্যাবের পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলা উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপ মুনশিছবি: প্রথম আলো

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ২০১৬-৩৫ সাল মেয়াদে যে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রণয়ন করছে, সেটি নিয়ে আবাসন ব্যবসায়ীরা বেশ কয়েক দিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। তাঁরা বলছিলেন, প্রস্তাবিত ড্যাপ বাস্তবায়িত হলে ফ্ল্যাটের দাম কয়েক গুণ বাড়বে, আবাসন ব্যবসা সংকটে পড়বে।

তবে নতুন ড্যাপে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে আশ্বাস দিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার এবং রাজউকের চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী। তাঁরা বলেছেন, ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়, এমন কোনো কাজ করবে না সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই আশ্বাস দেন তাঁরা। অনুষ্ঠানের শুরুতে রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিনসহ সংগঠনটির তিনজন নেতা প্রস্তাবিত ড্যাপ নিয়ে উদ্বেগ জানান।

ফ্ল্যাট-প্লট কিনতে গিয়ে ক্রেতারা যেন প্রতারিত না হন, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে আবাসন ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানান অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, কখনো কখনো দু–একটি কথা শুনি, কেউ কেউ টাকাপয়সা দিয়েও ফ্ল্যাট-প্লট পাচ্ছেন না। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, প্রতারিত হচ্ছেন। এমনটা যেন না হয়। মানুষ অনেক সময় সর্বস্ব বিক্রি করে স্বপ্নের বাড়ির জন্য কোথাও কোথাও টাকাপয়সা দেন।

আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের স্টলে আগ্রহী ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন কোম্পানির বিক্রয়কর্মীরা
প্রথম আলো

রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ‘আমরা ড্যাপবিরোধী না। তবে এমন ড্যাপ করবেন না, যাতে আবাসন ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়।’ ড্যাপ প্রণয়নে আবাসন খাত, সাধারণ মানুষ ও বাস্তবতার কথা মাথায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বেসরকারি খাতের জন্য কোনো আইন করলে তাদের যুক্ত করতে হবে। না হলে সে আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব না।

রাজউকের চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, ড্যাপ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আপনাদের ব্যবসায় ক্ষতি হয়, এমন কোনো কাজ সরকার করবে না।

অন্যদিকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, পরিবেশ রক্ষা করে পরিকল্পিত আবাসন করতে হবে। তবে ড্যাপ নিয়ে ভীতি বা সংশয়ের কোনো কারণ নেই। খুব শিগগির বিষয়টির সমাধান হবে।

এবারের মেলায় আবাসন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং নির্মাণসামগ্রী মিলিয়ে ২২০টি স্টল রয়েছে। আগামী সোমবার পর্যন্ত মেলা চলবে।

মেলায় আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন ৩৭টি আবাসন প্রকল্পের ১ হাজারের বেশি ফ্ল্যাট, ডুপ্লেক্স ও হোটেল স্যুইট এবং আড়াই লাখ বর্গফুটের বাণিজ্যিক জায়গা বিক্রির জন্য এনেছে। ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, তেজগাঁও, উত্তরা, নিকেতন, মগবাজার, সিদ্ধেশ্বরী, মতিঝিল, পল্টন, খিলগাঁও এবং চট্টগ্রামের নাছিরাবাদ এলাকায় নির্মিত তাদের আবাসন প্রকল্পে ফ্ল্যাটের আকার ১,১০০ থেকে ৪,০০০ বর্গফুট। প্রতি বর্গফুটের দাম ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। ঢাকা মাওয়া মহাসড়কের পাশে ৩, ৫ ও ১০ কাঠা জমির ওপর ডুপ্লেক্সের দাম আড়াই কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা।

নাভানা রিয়েল এস্টেটের স্টলে একজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলছেন কোম্পানির বিক্রয়কর্মীরা
প্রথম আলো

প্রতিষ্ঠানটির বিপণন ও বিক্রয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, এবারের মেলায় তাঁদের ১৫-২০ কোটি টাকার ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক জায়গা বিক্রির লক্ষ্য রয়েছে।

নাভানা রিয়েল এস্টেট মেলায় ৭০টি প্রকল্পের প্রায় ৩০০ ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছে। তাদের মিরপুরে চারটি ও মোহাম্মদপুরে একটি কন্ডোমিনিয়ামে ১,৩২৮ থেকে ২,২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রতি বর্গফুটের দাম ৬–৭ হাজার টাকা। আর গুলশান, ধানমন্ডি, বনানী, ইস্কাটন, উত্তরা, পুরান ঢাকার আবাসন প্রকল্পে ফ্ল্যাটের আকার ১,৫০০–৫,৩০০ বর্গফুট। প্রতি বর্গফুটের দাম ৭ হাজার থেকে ২৭ হাজার টাকা।

প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ সহকারী বিক্রয় মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের লক্ষ্য করে আমরা আবাসন প্রকল্প করছি। আশা করি, মেলায় ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাব।’