নিবন্ধনবিহীন কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান তিন শতাধিক

ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য লাইসেন্সিং নেই, কিন্তু কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আছে। তা সত্ত্বেও লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করছে অনেকে।

সিএসএবি

বিধিমালায় স্পষ্ট বলা আছে, লাইসেন্স বা নিবন্ধন ছাড়া কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবসা করা যাবে না। ব্যবসা করতে গেলে কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর সমিতির সদস্যপদও থাকতে হবে। অথচ দেশের দুই শতাধিক কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করছে।

লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করার জন্য বহুল আলোচিত ই-কমার্স খাত নিয়ে দেশজুড়ে যখন আলোচনা চলছে, ঠিক তখন কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্সবিহীন ব্যবসার বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে। কারণ, ই–কমার্স খাতের সঙ্গে কুরিয়ার সার্ভিস খাত ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধন দেয় মেইলিং অপারেটর এবং কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ, যা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন। আট বছর আগে ২০১৩ সালে মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস বিধিমালা জারির মাধ্যমে এই কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়। বিধিমালার ১১ (১) ধারায় বলা রয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার ব্যবসা পরিচালনা সম্পূর্ণ বেআইনি ও আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

বাংলাদেশ ব্যাংকও গত চার মাসে দুবার লাইসেন্সবিহীন কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডাক আদান-প্রদান করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে। ব্যাংকসহ দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডিদের উদ্দেশে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, লাইসেন্সবিহীন মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ডাক দ্রব্য গ্রহণ, পরিবহন ও বিলি বিতরণ বেআইনি এবং সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত।

প্রতিষ্ঠানসংখ্যা জানে না সরকার

কুরিয়ার সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (সিএসএবি) নেতারা বলছেন, দেশে প্রকৃতপক্ষে কতটি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান আছে, তার কোনো হিসাব সরকার বা সিএসএবি কারো কাছে নেই। তবে সংগঠনটির ধারণা, দেশে প্রায় ৫০০ কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে তাদের সদস্য হয়েছে ১৩৯টি প্রতিষ্ঠান। আবার সিএসএবির সদস্য হলেও লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ থেকে লাইসেন্স নিয়েছে মাত্র ৭২টি প্রতিষ্ঠান।

মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের কার্যালয় হচ্ছে পুরানা পল্টনের জিপিও কার্যালয়ে। জানা গেছে, চেয়ারম্যানসহ ২৩টি পদের সংস্থা এই লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে এতে কোনো জনবল নিয়োগ করা হয়নি। এতে প্রেষণে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (ডাক) সেলিমা সুলতানা। এটি তাঁর অতিরিক্ত দায়িত্ব। সপ্তাহে এক দিন তিনি ওই কার্যালয়ে যান। সাধারণভাবে অফিস করেন সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের পঞ্চম তলায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একটি কক্ষে।

২ নভেম্বর সচিবালয়ে সেলিমা সুলতানার কাছে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, দেশে কতটি কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান আছে? কর্তৃপক্ষ থেকে লাইসেন্স নিয়েছে কতটি প্রতিষ্ঠান? লাইসেন্স নেওয়ার জন্য ও নবায়নের জন্য আবেদন জমা আছে কতটির? জবাবে সেলিমা সুলতানা জানান, কোনো তথ্যই তাঁর কাছে নেই। তবে কয়েক দিন সময় দিলে তিনি তা জানাতে পারবেন। লাইসেন্স না নিয়ে ব্যবসা করার শাস্তি কী—এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিমা সুলতানা বলেন, ‘শাস্তির ব্যবস্থা ওভাবে বিধিমালায় রাখা হয়নি। আইন প্রণয়নের কাজ চলছে। এতে শাস্তি সুনির্দিষ্ট করা থাকবে।’

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অবশ্য বলছে, কর্তৃপক্ষ গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত তিন ধরনের কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান মোট ১৯৭টি লাইসেন্স বা নিবন্ধন নিয়েছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান ৮১টি, আন্তর্জাতিক মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান ৮৬টি এবং অন-বোর্ড মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান ৩০টি। একই অর্থবছরে ৫৬টি প্রতিষ্ঠান তাদের লাইসেন্স নবায়ন করেছে।

মন্ত্রণালয়ের নজরদারি নেই

অনেক প্রতিষ্ঠানই লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ থেকে লাইসেন্স নিচ্ছে না, সিএসএবির সদস্যও হচ্ছে না। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান সমিতির সদস্য হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কর্তৃপক্ষ থেকে লাইসেন্স নিচ্ছে না। এ ব্যাপারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ও কোনো নজরদারি করছে না।

জানতে চাইলে সিএসএবির সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষকে শক্তিশালী করা ছাড়া অবস্থার উন্নতি হবে না। কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ভালো একটা তথ্যভান্ডার থাকা উচিত। কাজটি কঠিনও নয়।

এদিকে সরকার থেকে লাইসেন্স নেয়নি কিংবা সিএসএবিরও সদস্য নয়, এ রকম ২০ কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানকে সদস্য করেছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-ক্যাব ই–ক্যাবের সহসভাপতি মোহাম্মদ কয়েকটি কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান ই–ক্যাবের সদস্য হয়েছে ঠিক, তবে নতুন কাউকে সদস্যপদ দেওয়া হচ্ছে না। যারা সদস্য হয়ে গেছে, তাদের কর্তৃপক্ষ থেকে লাইসেন্স নিতে ও সিএসএবির সদস্য হতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।