নীতি–সহায়তা না পেলে আবাসন খাত হুমকির মুখে পড়বে

ব্যবসা শুরুর ৩৮ বছর পূর্ণ করতে চলেছে দ্য স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। আবাসন খাতের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল আউয়াল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রতীক বর্ধন

মো. আব্দুল আউয়াল
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: দেশের আবাসন খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দ্য স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (এসইএল) অন্যতম। কোম্পানির বয়স ৩৮ বছর হতে চলল। এত দিন সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ে আপনারা জোর দিয়েছেন?

মো. আব্দুল আউয়াল: আমাদের আবাসন খাতের ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্য কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামানো ছিল না, চেয়েছিলাম স্বাধীনভাবে কিছু করতে। অর্থ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু উপার্জিত অর্থের একটি অংশ সামাজিক দায়বদ্ধতায় কাজে লাগাতে চেয়েছি। শুরুটা ছিল উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে—নোয়াখালীর চরাঞ্চলে। তখন যোগাযোগব্যবস্থা ছিল খুবই খারাপ। কষ্ট ছিল, তবে স্বাধীনভাবে কিছু করার আনন্দও ছিল। শুরু থেকেই নির্মাণের মানের সঙ্গে আপস করিনি। গ্রাহক, সরবরাহকারী, শ্রমিক—সবার প্রতিই আমরা সর্বোচ্চ সৎ থাকার চেষ্টা করেছি। আমি মনে করি, আমরা আজ যে অবস্থানে এসেছি, তার পেছনে এসবই কারণ হিসেবে কাজ করেছে। সময়মতো কাজ শেষ করে আমরা গ্রাহকের কাছে প্রকল্প হস্তান্তর করি—এটাই আমাদের ব্যবসার মূল চালিকা শক্তি। কখনোই আমাদের কোনো প্রকল্প ঝুলে থাকেনি। এমনকি অন্যদের অর্ধসমাপ্ত কাজ আমরা শেষ করে দিয়েছি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ব্যবসা যখন শুরু করেছিলেন, তখন ব্যবসার কী পরিবেশ ছিল, আর এখন কী রকম? কী পার্থক্য দেখেন?

মো. আব্দুল আউয়াল: এই সময়ে জাতির অর্জন অনেক। সবারই প্রত্যাশা থাকে, ভবিষ্যৎ আরও ভালো হবে, কিন্তু বাস্তবে সে রকম হয় না। ইদানীং প্রকল্প শুরু করলেই দেখা যায়, মাটি কাটার জন্য অনেকে হাজির হয়ে যায়। এ নিয়ে নানা রকমের জটিলতা সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া বিভিন্ন সময় উটকো ঝামেলা তো লেগেই থাকে। আমরা সরকারি কাজ তেমন একটা করি না। একবার এক সরকারি কাজের দরপত্র জমা দেওয়ার জন্য আমাদের এক কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছিলাম। দেখা গেল, এক শক্তিশালী গোষ্ঠী তাঁকে দরপত্র জমাই দিতে দেয়নি। তাঁকে একটি বাসের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছিল। ফলে সামগ্রিকভাবে ব্যবসার পরিবেশের উন্নয়ন হয়েছে, এমন কথা বলা যায় না।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ফ্ল্যাটের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে মধ্যবিত্তের পক্ষে ফ্ল্যাট কেনা কঠিন হয়ে পড়ছে, এর কারণ কী?

মো. আব্দুল আউয়াল: আবাসিক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে আমাদের প্রথমে জমির মালিকের সঙ্গে চুক্তি করতে হয়। ঢাকা নগরে জমি যেভাবে কমে যাচ্ছে, তাতে জমির মালিকদের চাহিদা সীমাহীন হয়ে যাচ্ছে। একসময় অর্ধেক-অর্ধেক ভাগাভাগি হতো। এখন জমির মালিকেরা ৬০ শতাংশ ফ্ল্যাট চান। গুলশানে একটি প্রকল্পে জমির মালিককে ৬৭ শতাংশ ফ্ল্যাট দিতে হয়েছে, সেই সঙ্গে চুক্তিনামার টাকা। এ ছাড়া নির্মাণসামগ্রীর দাম দিন দিন বাড়ছে। বাধ্য হয়ে আমাদের বিক্রয়মূল্য বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। তা সত্ত্বেও অনেকের চেয়ে কম মূল্যে আমরা ফ্ল্যাট বিক্রি করছি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: এই সময়ে দাঁড়িয়ে কোম্পানির ভবিষ্যৎ কী দেখছেন? নতুন দিনের পরিকল্পনাই–বা কী?

মো. আব্দুল আউয়াল: ভবিষ্যতের পথ পরিক্রমা সেই অর্থে খুব মসৃণ হবে না বলেই মনে হচ্ছে। নতুন ড্যাপের (ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান) প্রস্তাবে যা যা বলা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের আবাসন খাতের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে। বিশেষ করে ভবনের উচ্চতা এবং জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে যেসব প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে আবাসন খাতের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: এই অবস্থায় আপনার পরামর্শ কী?

মো. আব্দুল আউয়াল: আমি মনে করি, এভাবে ঢাকা শহরের জনঘনত্ব কমানো সম্ভব নয়। ঢাকা শহরের ওপর যদি চাপ কমাতে হয়, তাহলে প্রথমে বিকেন্দ্রীকরণের দিকে নজর দিতে হবে। আরেকটি কথা না বললেই নয়, রানা প্লাজা ধসের পর পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা সীমিত করা হলো—ছয়তলার বেশি ভবনের অনুমোদন তারা দিতে পারবে না। সেই ক্ষমতা দেওয়া হলো জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কে। তারা আবার পিডব্লিউডির কাছে নকশা পাঠায়। কিন্তু এটা নির্বাহী প্রকৌশলীরও কাজ নয়। তাদের জনবল ঘাটতি আছে। রানা প্লাজার সমস্যা তো নকশায় ছিল না, ছিল নির্মাণে। ফলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করা এখানে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাই সরকারের নীতি সহায়তা প্রয়োজন।