পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে

করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে সংকট চলছে। এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক এবং বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন লিমিটেড (বিসিএল) গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টি এম আলী হায়দার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. আনোয়ার পারভেজ

আলী হায়দার

প্রশ্ন :

করোনার কারণে দীর্ঘ সময় ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ ছিল। এখন বগুড়ার ব্যবসা-বাণিজ্যের কী অবস্থা?

টি এম আলী হায়দার: দীর্ঘ সময় ধরে করোনাভাইরাস আর লকডাউন থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। শিল্পকারখানায়ও চাকা ঘোরেনি। এতে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। যেমন আমাদের বিসিএল গ্রুপের পাঁচ তারকা হোটেল মম ইন প্রথম আড়াই মাস পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এতে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন হোটেল চালু করা হলেও দেশি-বিদেশি পর্যটক তেমন আসছেন না। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আয় ৫০ শতাংশ কম। সামনে শীতকাল। করোনা সংক্রমণের শঙ্কায় পর্যটক-অতিথি আরও কমে যেতে পারে।

বিসিএল এভিয়েশনের হেলিকপ্টার সার্ভিস দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল। এতে মাসে অর্ধকোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে। বিসিএল হাউজিংয়ের ব্যবসাও স্থবির হয়ে পড়েছে। গত সাত মাসে নতুন কোনো প্রজেক্ট হাতে নেওয়া যায়নি। অন্যদেরও একই অবস্থা। অথচ সব মিলিয়ে বগুড়ার শুধু নির্মাণ খাতেই প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে।

আমাদের গ্রুপের তিনটি পেপার মিলও দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল। এসব কারখানায় এখনো পুরোদমে উৎপাদন শুরু করা যায়নি।

প্রশ্ন :

অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করেছে। এতে কি বেকারত্ব বেড়েছে। কীভাবে দেখছেন বিষয়টি?

আলী হায়দার: অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা, হোটেল-রেস্তোরাঁর উৎপাদন, বিক্রি ও আয় কমে ব্যবসায়ী–উদ্যোক্তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ায় তাঁরা কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হয়তো কর্মীদের আবার ফিরিয়ে আনবেন। অবশ্য বিসিএল গ্রুপে আমরা এখন পর্যন্ত কর্মী ছাঁটাই করিনি। তবে ২৫ শতাংশ কর্মীর কর্মঘণ্টা অর্ধেকে আনতে হয়েছে। এতে কর্মী-শ্রমিকদের আয় কমেছে।

প্রশ্ন :

করোনা সংকট তো শিগগিরই কাটছে না। এ অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা কীভাবে হচ্ছে?

আলী হায়দার: স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে না আসা পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে। করোনা সংক্রমণ শুরুর পর স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় মার্চ থেকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু সমস্যা দীর্ঘায়িত হওয়ায় ধীরে ধীরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা শত চেষ্টা করেও ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না। বগুড়ার মহাস্থানগড়, নওগাঁর পাহাড়পুরসহ পর্যটনকেন্দ্রগুলো সীমিত আকারে খুলে দেওয়া হলেও বিদেশি পর্যটক আসেননি। তাই হোটেল-মোটেল–রেস্তোরাঁর ব্যবসা জমছে না। সামনে শীতকাল। তখন করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কা আছে। তার মানে শিগগিরই মন্দা কাটছে না।

প্রশ্ন :

ব্যবসায়ী–উদ্যোক্তারা সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী প্রণোদনা পাচ্ছেন কি?

আলী হায়দার: উদ্যোক্তা পর্যায়ে প্রণোদনা দেওয়া হলেও ক্ষুদ্র–মাঝারি এবং প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা এখনো তা পাননি। প্রণোদনা না পেলে, ব্যবসা চাঙা করতে না পারলে অনেক ব্যবসায়ীকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে। এতে বেকারত্ব ও সংকট আরও বাড়বে।

প্রশ্ন :

সংকট কাটিয়ে বগুড়ার ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে সরকারের করণীয় কী?

আলী হায়দার: প্রথমত, করোনার কারণে মানুষের হাতে কাজ নেই, টাকাও নেই। মানুষের হাতে টাকা না থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থবিরতা কমবে না। তাই কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের আয় বাড়াতে হবে। করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বের অনেক দেশ ব্যক্তিপর্যায়ে প্রণোদনা দিচ্ছে। আমাদের দেশে সম্ভব না হলেও বড় বড় প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে উপার্জন বাড়াতে হবে।

বগুড়ায় শিল্পবিনিয়োগে সরকারি কোনো প্লট নেই। বিসিক শিল্পনগরীতে ছোট ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠান হয়েছে। কয়েক বছর আগে এখানে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি নেই।

করোনার দীর্ঘস্থায়ী সংকট মোকাবিলায় গতানুগতিক ব্যবসা ও বিনিয়োগের ধরন দ্রুত পাল্টাতে হবে। সংক্রমণরোধে সরাসরি বাজারজাতকরণের বদলে অনলাইনে পণ্য বিক্রির সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে ব্যবসা–বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে হবে।