পাঁচ মাসেই এল ১ হাজার কোটি ডলার

বাড়তি এক শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার ব্যানার। রূপালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখা
ছবি: সানাউল্লাহ সাকিব

অক্টোবরের সঙ্গে পারল না নভেম্বর। অক্টোবর মাসে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছিল ২১১ কোটি ২৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার। আর সদ্য সমাপ্ত নভেম্বরে এসেছে সামান্য কম, ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার।

আগের মাসের তুলনায় সামান্য কম হলেও প্রবৃদ্ধির দিক থেকে রেকর্ড করেই চলেছে প্রবাসী আয়। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪১ দশমিক ৩২ শতাংশ। আরেকটি রেকর্ড হচ্ছে এই মাসে মোট প্রবাসী আয় ১০ বিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এই পাঁচ মাসে আসা মোট প্রবাসী আয় হচ্ছে ১ হাজার ৯০ কোটি ৪৩ লাখ ৮০ হাজার।

এবার আগের অর্থবছরের হিসাবটি দেখা যেতে পারে। গত ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৩৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এসেছিল ৭৭১ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

আরও পড়ুন

কোভিড-১৯–এর ধাক্কায় পুরো বিশ্বের অর্থনীতি পর্যুদস্ত। কমে গেছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। বিশ্বব্যাপী প্রবাসী আয় কমবে বলেও সব আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রাক্কলন ছিল। বলা হয়েছে, শুরুতে বাড়লেও শেষ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে না। কারণ, বিপুলসংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। বিপুলসংখ্যক ফিরে যেতে পারেনি। ফলে ভবিষ্যতে এর প্রভাব পড়বে। তবে এখন পর্যন্ত প্রবাসী আয়ে বিস্ময় অব্যাহত রয়েছে।  

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রবাসীরা প্রতি মাসেই রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। যে কারণে অর্থনীতিতে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রেমিট্যান্স বাড়ায় একদিকে ব্যাংকগুলোর হাতে বিনিয়োগ করার মতো টাকা আসছে, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও রেকর্ড হচ্ছে।’

প্রবাসী আয় বৃদ্ধির পেছনে ২ শতাংশ প্রণোদনারও বড় ভূমিকা আছে। ২০১৯ সালে প্রবাসী আয়ে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এই সিদ্ধান্তের কারণে বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে গেছে। এর মধ্যেই আবার কোনো ব্যাংক নিজস্ব তহবিল থেকে বাড়তি আরও ১ শতাংশ বেশি নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে বলে জানা গেছে। এতেও প্রবাসী আয় আসা বাড়ছে।

‘রেমিট্যান্স বাড়ায় একদিকে ব্যাংকগুলোর হাতে বিনিয়োগ করার মতো টাকা আসছে, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও রেকর্ড হচ্ছে।
সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র

সব মিলিয়ে করোনার এ সময়ে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় অর্থনীতিকে স্বস্তি দিচ্ছে। এর আগে গত অক্টোবরে বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে বলেছিল, কোভিডের প্রভাবে যেখানে সারা বিশ্বে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমবে, সেখানে বাংলাদেশে এ বছর প্রবাসী আয় বাড়বে। চলতি ২০২০ সালে বাংলাদেশে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় আসতে পারে। প্রবাসী আয় পাওয়ার দিক থেকে বাংলাদেশ এ বছর অষ্টম স্থানে থাকবে।

প্রবাসী আয়ের পরিমাণের দিক থেকে প্রথম স্থানে আছে ভারত (৭৬ বিলিয়ন ডলার), দ্বিতীয় স্থানে চীন (৬০ বিলিয়ন ডলার), তৃতীয় স্থানে মেক্সিকো (৪১ বিলিয়ন ডলার)। তবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপির) অনুপাতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চতুর্থ—জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে ২৩ শতাংশ নিয়ে প্রথম স্থানে আছে নেপাল, ৯ দশমিক ১ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় পাকিস্তান, ৮ দশমিক ২ শতাংশ নিয়ে তৃতীয় শ্রীলঙ্কা।