পারিবারিক ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্য দেবে মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডার

দেশের অটোমোবাইল শিল্পে গত এক দশকে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। দেশের আর্থসামাজিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর গাড়ি কেনার মানসিকতা, আকাঙ্ক্ষা ও সক্ষমতা সবই বেড়েছে।

২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের প্রতি ১ হাজারজনের মধ্যে ৩০ জনই ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক। আগে প্রধানত সিডান গোত্রীয় গাড়ির ব্যাপারে সবার আগ্রহ থাকলেও এখন সাত আসনের পারিবারিক গাড়ির প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে উঠেছেন ক্রেতারা। আবার সমীক্ষায় এ–ও দেখা যাচ্ছে, গতানুগতিক ও প্রচলিত ব্র্যান্ডের গাড়ি না কিনে অনেকেই এখন টেকসই ও মানসম্মত গাড়ি কিনতে চান, যাতে একদিকে অত্যাধুনিক ও সাম্প্রতিক সব সুযোগ-সুবিধা ও ফিচার বিদ্যমান। এ ছাড়া এই বিবেচনায় ক্রেতাদের অনেকেই রিকন্ডিশন্ড গাড়ির চেয়ে একেবারে নতুন গাড়ি কেনার ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন। আরামদায়ক অভ্যন্তর, শক্ত কাঠামো, প্রশস্ত জায়গা ও পর্যাপ্ত গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স—এসব কারণে পরিবারের সবাই মিলে শহর বা শহরের বাইরে পথ চলতে আজকাল এসব গাড়ির ব্যাপারে ক্রেতারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আর সে কারণে জনপ্রিয়তার সূচকে মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডার দ্রুত উঠে আসছে। নাম শুনলেই বোঝা যায়, প্রশস্ততার কথা মাথায় রাখা হয়েছে এই গাড়ির ডিজাইনে। ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করা সাত সিটের এবং তিন সারির এই মিতসুবিশি ফ্যামিলি কার এক্সপ্যান্ডার আমাদের দেশের বাজারে এসেছে ২০১৮ সালে। এ দেশে সাত সিটের গাড়ি বলতে একসময় টয়োটা অ্যাভেঞ্জা একচেটিয়া ব্যবসা করলেও আরামপ্রদ ও প্রশস্ত ইন্টেরিয়র আর চমকপ্রদ অবয়বের জন্য মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডার ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

কথায় আছে, আগে দর্শনদারী, তারপর গুণবিচারী। এই পারিবারিক গোত্রের গাড়িগুলোর ক্ষেত্রে প্রধান অভিযোগ হলো, এর বাক্সসুলভ ভ্যান আকৃতির অনাকর্ষণীয় সিলোয়েট। কেজো ব্যাপারগুলো মাথায় রাখতে গিয়ে, অর্থাৎ জায়গার সর্বোত্তম ব্যবহার আর সর্বাধিক নিরাপত্তা ও আরাম নিশ্চিত করতে গিয়ে ডিজাইনের ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দিতে হয়, সব গাড়ি কোম্পানি তা স্বীকার করে নেয়। কিন্তু এ দিক থেকে মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডার অনেকটা এগিয়ে আছে। এ গাড়ির সামনের দিকে প্রতিরক্ষামূলক ডাইনামিক শিল্ড ডিজাইন থাকায় এক অনন্য স্পোর্টি লুক তৈরি হয়েছে। চোখে পড়ার মতো এই ফ্রন্ট ভিউ আর ব্যাক ভিউ মিলে অনেকটাই এসইউভির মতো স্টাইলিশ ভাব এসেছে গাড়ির পূর্ণাঙ্গ রূপটিতে।

স্টাইলিংয়ের প্রসঙ্গে এর সাইড ভিউ নিয়েও দুকথা বলা যায়, শক্তিশালী বডির তুলনায় এর চাকার আকৃতি নিয়ে কিছুটা দ্বিমত থাকলেও পাঁচ স্পোকের ওয়াই ডিজাইনের চাকাগুলো এক কথায় বেশ প্রিমিয়াম লেভেলের। পেছনের বডির আকৃতিও অত্যাধুনিক ও আকর্ষণীয়। এল আকৃতির ব্যাক লাইট বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে যেকোনো অবস্থায় সবকিছু ভালোভাবে দৃশ্যমান হয়।

মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডারের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, এতে সাত সদস্যের পরিবারের সবাই হাত–পা ছড়িয়ে বেশ আরাম করে ভ্রমণ করতে পারবেন। আবার তিন সারির গাড়িটির পেছনের আসনগুলো দরকার মতো ভাঁজ করে রাখা যায় স্ট্র্যাপ দিয়ে। সেই জায়গায় অনায়াসে ঢাউস আকৃতির স্যুটকেস অথবা হঠাৎ পছন্দ হয়ে যাওয়ায় কিনে ফেলা রকিং চেয়ার বা বিন ব্যাগটিও অনায়াসে এঁটে যাবে। আবার প্রথম ও দ্বিতীয় সারিতেও খুব সহজেই ভাঁজ ও সোজা করা যায়, এমন সমন্বয়যোগ্য আসন থাকায় যার যার সুবিধা অনুযায়ী আসন আগে-পিছে করে নেওয়া যায়, আবার গুটিয়েও রাখা যায়।

সবচেয়ে আরামদায়ক ব্যাপার হচ্ছে, এর পা রাখার জায়গা বা লেগ স্পেস অত্যন্ত প্রশস্ত। লম্বা ভ্রমণে বা জ্যামে বসে থাকতে হলে আসনে আরামে শুয়ে-বসে থাকার সুবিধা সবচেয়ে বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এই গাড়ির অভ্যন্তরীণ স্টিচিংগুলো এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে এর আসনগুলো সর্বোচ্চ আরামদায়ক হয়। এ ছাড়া আসনের কন্টোরিং ডিজাইনের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক বা আরগোনমিক পদ্ধতিতে কতটুকু বাঁকে কীভাবে তৈরি করলে আসনে বসে আরাম পাওয়া যাবে, তা খেয়াল রাখা হয়েছে।

এর অভ্যন্তরীণ ফিনিশিং নিয়ে অনেকেরই বাড়তি চাওয়া আছে। তবে এই দামে ঝাঁ–চকচকে ভাবের চেয়ে আরামপ্রদ আর নিরাপদ ইন্টেরিয়র যুক্ত গাড়িই বেশি দরকার বলে মনে করেন প্রায় সবাই–ই। আর ইনসুলেশন ব্যবস্থা ভালো থাকায় বাইরের শব্দ ও ভাইব্রেশন ব্লক হয়ে যায় ভালোভাবেই। ডুয়েল সিস্টেম এয়ারকন্ডিশনের বদৌলতে আরাম নিশ্চিত হয় ষোলো আনা। আর ভালো কথা হচ্ছে, গাড়ির একদম পেছনের সারিতেও ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা আছে। প্রতিটি আসনের সঙ্গে আছে পোর্ট, চার্জার ও কেব্‌ল পয়েন্ট, সামনে সাত ইঞ্চি টাচ স্ক্রিন আর সারা গাড়িতে ছয়টি সারাউন্ড স্পিকার।

পাওয়ার আর টর্কের হিসাব কষতে গেলে এই ইউটিলিটি–কেন্দ্রিক গাড়িতে ১০৫ হর্সপাওয়ার আর ১৪১ নিউটন মিটার টর্ক পাওয়া যায়, যা পারফরম্যান্সনির্ভর গাড়িগুলোর তুলনায় কিছু কম নয়।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এর শক্তিশালী ইঞ্জিন সাধারণ যাতায়াত তো বটেই, এমনকি পুরো লোড নিয়ে লম্বা ভ্রমণের জন্যও অত্যন্ত উপযোগী। মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডারের মাইলেজ ঢাকা শহরের মধ্যে ৭-৯ কিলোমিটার, মহাসড়কে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩-১৫ কিলোমিটার।

এর কাঠামোর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সও বেশ ভালো (২০৫ মিলিমিটার)। আর শক অ্যাবজর্ভার ও সাসপেনশন ডিজাইনও এমন যেন শহরের এবড়োখেবড়ো রাস্তার ঝাঁকুনি আর অস্বাভাবিক উঁচু গতিরোধকে যাত্রীদের কষ্ট হয় না। নিরাপত্তার দিক থেকেও এক্সপ্যান্ডার অনন্যসাধারণ। দরজা ও বডির হাই টেনসাইল স্ট্রেংথ স্টিল আর সামনের ডায়নামিক শিল্ড প্রযুক্তি গাড়ির ভেতর ও বাইরের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখে। এতে দুটি এয়ারব্যাগ আছে, ক্রাশ টেস্টের রিপোর্টও বেশ ভালো এ গাড়ির।

ভালো একটি জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির মূল্যেই পাওয়া যাবে ব্র্যান্ড নিউ মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডার। গ্রাফাইট গ্রে মেটালিক, স্টার্লিং সিলভার মেটালিক, ডিপ ব্রোঞ্জ মেটালিক, রেড মেটালিক, জেট ব্ল্যাক মিকা ও কোয়ার্টজ হোয়াইট পার্ল—এ ছয় রঙে পাওয়া যাচ্ছে এই গাড়ি।

দেশের পরিপ্রেক্ষিতে মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডার এই মুহূর্তে ব্যবহারিক দিক থেকে অত্যন্ত সুবিধাজনক এবং সে কারণে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই গাড়ির টেস্ট ড্রাইভ সুবিধা মিলবে এ কোম্পানির নিম্নে বর্ণিত বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে। এখানে মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডার গাড়ি দেখেশুনে কেনার সুযোগ থাকায় তা ক্রেতাদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক।

ঢাকা শোরুম ১: ২১৫, বীর উত্তম মীর শওকত সড়ক, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা–১২০৮। ঢাকা শোরুম ২: ২৪৬, বীর উত্তম মীর শওকত সড়ক, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা–১২০৮। চট্টগ্রাম শোরুম: প্লট নম্বর ০৩, সিডিএ অ্যাভিনিউ, ষোলশহর বাণিজ্যিক এলাকা, চট্টগ্রাম–৪২০৩।

এ ছাড়া আগ্রহী ক্রেতারা মিতসুবিশির হটলাইন ০৯৬৬৬-৭০৪৭০৪ নম্বরে কল করতে পারেন।