পুঁজিবাজারে সুখবর
আগামী অর্থবছরে পুঁজিবাজারের জন্য যেসব সুবিধা রাখা হচ্ছে তা যদি আগেই জানা যেত তাহলে গতকাল দিন শেষে দেশের শেয়ারবাজারের লেনদেনের চিত্রটা হয়তো ভিন্ন রকম হতেও পারত৷
টানা তিন দিন ধরেই নিম্নমুখী প্রবণতায় লেনদেন চলেছে শেয়ারবাজারে। বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে ইতিবাচক ঘোষণা আসবে—এমন প্রত্যাশায় শুরু হয় গতকাল বৃহস্পতিবারের লেনদেন। প্রথম ঘণ্টায় এর কিছুটা প্রভাবও লক্ষ করা যায়। এই সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ৩৬ পয়েন্ট বেড়ে যায়। কিন্তু শেষবেলায় গিয়ে দেখা গেছে, সেই সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতায় শেষ হয়েছে লেনদেন।
তবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দুটি সুখবর রয়েছে দেশের পুঁজিবাজারের জন্য। একটি স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য। আরেকটি বিনিয়োগকারীদের জন্য।
এবারের বাজেটে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই ও সিএসই) জন্য পাঁচ বছরের কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে৷ অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখবর হলো, তাঁদের করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা বাড়ানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরে যেখানে করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা ছিল ১০ হাজার টাকা, সেখানে প্রস্তাবিত বাজেটে তা বাড়ানো হয়েছে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত৷
জাতীয় সংসদে গতকাল বৃহস্পতিবার বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখাসহ এর সম্প্রসারণ ও উত্তরোত্তর শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে ডিমিউচুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জসমূহকে ক্রমহ্রাসমান হারে পাঁচ বছরের জন্য কর অব্যাহতি সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করছি।’ এ ছাড়া করমুক্ত লভ্যাংশ আয়সীমা ১০ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন তিনি।
বর্তমানে ডিএসইর মূল্যসূচক ও বাজার মূলধন স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে ২০১৩ সালের শুরু থেকে ডিএসইর মূল্যসূচক এবং বাজার মূলধন মোটামুটি স্থিতিশীল অবস্থায় আছে।’
বাজেট বক্তৃতায় পুঁজিবাজার নিয়ে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ২০১০-১১ সালে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের ধস নামে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা তাতে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ বিষয়ে সরকার একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে এবং ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেয়। একটি নতুন সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। কমিশন দুই বছরে পুঁজিবাজারের আইন ও বিধিমালা সংস্কার করে সুশাসন নিশ্চিত করে। সর্বোপরি কমিশনের উদ্যোগে এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সহযোগিতায় ‘এক্সচেঞ্জেস ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন-২০১৩’ অনুযায়ী এক্সচেঞ্জের সিকিউরিটিজ পৃথক্করণের কাজ প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বপন কুমার বালা প্রথম আলোকে বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য পাঁচ বছরের কর অব্যাহতি সুবিধা প্রদানে স্টক এক্সচেঞ্জ বিশেষভাবে উপকৃত হবে। তিনি বলেন, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের আগে স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য কর অবকাশ সুবিধা ছিল। এখন পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে স্টক এক্সচেঞ্জকে অন্য কোম্পানির মতো কর নির্ধারিত হারে কর দিতে হয়। কিন্তু কর অবকাশ সুবিধা প্রদান করায় পরবর্তী পাঁচ বছর স্টক এক্সচেঞ্জকে কর দিতে হবে না।
এ ছাড়া করমুক্ত লভ্যাংশ আয়সীমা বৃদ্ধিতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাই বেশি উপকৃত হবেন বলে মন্তব্য করেন স্বপন কুমার বালা। যদিও ডিএসই ও সিএসইর পক্ষ থেকে এই সীমা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
অন্যদিকে সিএসইর চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আবদুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, ডিমিউচুয়ালাইজেশন-পরবর্তী স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য কর অবকাশ সুবিধা প্রয়োজন আছে। এতে নতুন কোম্পানি হিসেবে ডিএসই ও সিএসই লাভবান হবে। পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণ, শক্তিশালীকরণ ও উন্নয়নে এটি ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। অন্যদিকে করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা আরও বাড়ানো হলে ভালো হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এবারের বাজেটে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান স্বপন কুমার বালা ও আবদুল মজিদ।