পুনর্গঠন হবে ২১ কোম্পানির পর্ষদ

তালিকাভুক্ত ২১ কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত পালনে ব্যর্থ হয়েছেন।

  • ৪৩ কোম্পানিকে চিঠি দিয়েছিল বিএসইসি।

  • ১৫ কোম্পানি নির্ধারিত সময়ে শর্ত পূরণ করেছে।

  • ৭টি কোম্পানি বাড়তি সময় চেয়ে আবেদন করেছে।

  • ২১ কোম্পানি কোনো উদ্যোগই নেয়নি।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ২১ কোম্পানি পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বারবার সময় দেওয়ার পরও এসব কোম্পানির উদ্যোক্তা–পরিচালকেরা সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণে এসব কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিষয়টি আজ বুধবার কমিশন সভার আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়েছে।

এর আগে ২৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিএসইসির কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হবেন, সেসব কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে। সে জন্য কর্মপরিকল্পনাও চূড়ান্ত করা হয় ওই সভায়। গত সোমবার ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হয়েছে। সবশেষ তথ্যানুযায়ী, নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর মোট ২১টি কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা আইন অনুযায়ী ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্তপূরণে কোনো ধরনের পদক্ষেপই নেয়নি। এ কারণে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। তবে এ বিষয়ে বিএসইসির কেউ আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর ২০১১ সালে ন্যূনতম শেয়ার ধারণসংক্রান্ত বিধান করে বিএসইসি। সেই অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে সম্মিলিতভাবে সব সময় ওই কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকা বাধ্যতামূলক। আর পরিচালকদের হাতে এককভাবে সব সময় ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়। ২০১১ সালে এমন আইন করা হলেও সেটি পরিপালনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ কারণে আইনটি করার পর তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানিও ন্যূনতম শেয়ার ধারণের শর্ত মানেনি। আবার অনেক পরিচালক হাতে থাকা সব শেয়ার ঘোষণা ছাড়াই বিক্রি করে দিয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে গত মে মাসে বিএসইসির পুনর্গঠিত কমিশন ন্যূনতম শেয়ার ধারণসংক্রান্ত আইনটি পরিপালন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়। তারই অংশ হিসেবে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ ৪৩ কোম্পানিকে আইন পরিপালনের জন্য ৬০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে গত ২৯ জুলাই চিঠি দেয় বিএসইসি। এরপর একদফা সময় বাড়িয়ে তা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৫ কোম্পানি নতুন করে শেয়ার কিনে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত পূরণ করেছে। আর সাতটি কোম্পানি শর্তপূরণে আরও কিছুদিন সময় চেয়ে বিএসইসির কাছে আবেদন করেছে। আর বাকি ২১ টি কোম্পানির পক্ষ থেকে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়ে কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। এ কারণে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

বিএসইসির বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে যে ২১ কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়ে উদ্যোগ নেয়নি, সেগুলো হলো অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস, অগ্নি সিস্টেমস, আলহাজ টেক্সটাইল, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, সেন্ট্রাল ফার্মা, ফ্যামিলিটেক্স, এফএএস ফাইন্যান্স, ফাইন ফুডস, ফু-ওয়াং সিরামিক, ফু-ওয়াং ফুডস, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস, ইমাম বাটন, ইনটেক লিমিটেড, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, মিথুন নিটিং, অলিম্পিক এক্সেসরিস, ফার্মা এইডস, পিপলস লিজিং, সালভো কেমিক্যাল, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের হাতে এককভাবে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার না থাকায় ৯ কোম্পানির ১৭ পরিচালকের পদ শূন্য ঘোষণা করে বিএসইসি। এরপরই সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম শেয়ার ধারণের বিষয়ে উদ্যোগ নেয় বিএসইসি।

তবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ কীভাবে পুনর্গঠন করা হবে, তা চূড়ান্ত করা হতে পারে আজকের কমিশন সভায়। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত যেসব কোম্পানি আইনটি পরিপালন করেনি, সেসব কোম্পানিতে নতুন পরিচালক নিয়োগের মাধ্যমে পর্ষদ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাধারণ শেয়ারধারীদের মধ্যে যাঁদের হাতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ২ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ার রয়েছে, তাঁদের মধ্য থেকেই আইন অনুযায়ী নতুন পরিচালক নিয়োগ করা হতে পারে। যেসব কোম্পানির ক্ষেত্রে ২ শতাংশ শেয়ারধারী বিনিয়োগকারী খুঁজে পাওয়া যাবে না, সেসব কোম্পানিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের কথা ভাবা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।